অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শিপিং কর্পোরেশন : দৈনিক ইত্তেফাক

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শিপিং কর্পোরেশন : দৈনিক ইত্তেফাক

সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, চট্টগ্রাম অফিস | দৈনিক ইত্তেফাক | ৮ জুলাই ২০১৪

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) সামনে এখন চ্যালেঞ্জ অনেক। বিএসসি’র জাহাজবহরে আশি’র দশকে থাকা ২৬টি জাহাজ থেকে ‘অলাভজনক’ জাহাজ কমতে কমতে বর্তমানে ৮টি জাহাজে উপনীত হয়েছে। তাও এই ৮টি জাহাজের গড় বয়স বর্তমানে ৩০ বছর। পাঁচ বছর আগেই আন্তর্জাতিক হিসাবে জাহাজগুলোগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জাহাজগুলো এখনো চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ২০১৬ সালেই এসব জাহাজ আর থাকবে না বিএসসি’র বহরে। তখন এগুলোর বয়স দাঁড়াবে ৩৩ বছর প্রায়।

তবে মৃদু আশার কথা এই যে, ২০১৬ সালেই বিএসসি’র জাহাজ বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে নতুন প্রজন্মের ৮টি জাহাজ। প্রতিটির পণ্য ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার টন। নতুন ৮টি জাহজের পণ্য ধারণ করার ক্ষমতা দাঁড়াবে ২৪টি জাহাজের সমান। বর্তমান জাহাজগুলোর প্রতিটির ধারণক্ষমতা মাত্র ১০ হাজার টন। কিন্তু নতুন প্রজন্মের জাহাজগুলো বিএসসি’র বহরে আসতে আরো অন্তত তিন বছর বাকি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থার প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিএসসিকে নানামুখি চ্যালেঞ্জ সামলে টিকে থাকতে হবে আগামী তিনটি বছর।

এমনি এক চ্যালেঞ্জিং সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সমপ্রতি হয়ে গেল দেশের জাতীয় পতাকা বহনকারী সংস্থা বিএসসি’র ৩৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা। এরই প্রেক্ষাপটে বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মকসুমুল কাদের জানান, অন্যান্য শিপিং লাইনের মতোই বিএসসিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে জাহাজ ভাড়া বিশ্বমন্দার কারণেই সর্বনিম্নপর্যায়ে নেমে এসেছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজের ক্যাপ্টেন-ক্রু-কর্মকর্তাদের বেতন বেড়ে যাওয়ার কারণে জাহাজ পরিচালনার খরচ আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক শিপিং বাণিজ্যের কঠিন সময়ে বিএসসিও এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ঠিক এই সময় যখন এই সংস্থাটির কাছে টিকে থাকা এবং ব্যবসা ধরে রাখার জন্য জাহাজবহরে ২০/২৫টি অত্যাধুনিক জাহাজ থাকার দরকার ছিল তখন আছে মাত্র স্বল্প ক্ষমতার ৮টি জাহাজ। তাও মেয়াদোত্তীর্ণ সব ক’টিই।

বিগত সরকারগুলো টাকা জোগাড় করতে না পারায় এই সংস্থার জাহাজবহরে গত ২৩ বছরে একটিও নতুন জাহাজ যুক্ত হয়নি। তিনি জানান, বিএসসি’র জাহাজবহরে ১৯৯১ সালে সর্বশেষ ‘মভি বাংলার শিখা’ জাহাজটি যুক্ত হয়েছিল। আশার কথা শোনাতে গিয়ে বিএসসি এমডি জানান, চীন সরকারের অগ্রধিকার ও রেয়াতি ঋণের আওতায় চীন থেকে ৩টি নতুন অয়েল ট্যাংকার এবং ৩টি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই লক্ষ্যে জাহাজগুলো তৈরির জন্য চীন সরকার মনোনীত সেদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে জাহাজ নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাহাজগুলোর মূল্য পড়বে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। জাহাজগুলো ২০১৬ সালের মাঝামাঝি বিএসসিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ‘জ্যোতি’ ও ‘সৌরভ’ নামে দু’টি পুরনো সিঙ্গেল হাল লাইটারেজ জাহাজ বিক্রি করে তার স্থানে নতুন দু’টি সংযোজনের চেষ্টা চলছে। সেই সাথে ১০ বছরের পুরনো একটি ৩৪ হাজার ডিডব্লিউ ক্ষমতার অয়েল ট্যাংকার এবং ১ লাখ ২৫ হাজার ডিডব্লিউ ক্ষমতার মাদার ট্যাংকার কেনার প্রক্রিয়া এ মুহূর্তে চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকটি জাহাজ বিক্রি করার পর ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বিএসসি বহরে জাহাজ ছিল ১৩টি। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে পুরনো আরো ৫টি জাহাজ বিক্রি করে দেয়ার পর জাহাজ সংখ্যা ৮-এ নেমে আসে। বর্তমান জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ২টি লাইটারেজ ট্যাংকার, ৫টি বহুমুখী পণ্যবাহী জাহাজ এবং একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ। এগুলোর পণ্য পরিবহন ক্ষমতা ও গতি ব্যাপকভাবে হরাস পাওয়ায় এগুলো নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিপিং ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব।

———————–

Courtesy: দৈনিক ইত্তেফাক

http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDdfMDhfMTRfMV8yXzFfMTQzNzU1

Share