জেল থেকে আমি বলছি…….. মাহমুদুর রহমান (৩২তম)

জেল থেকে আমি বলছি…….. মাহমুদুর রহমান (৩২তম)

[এই লেখাটি প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত ৩ জন নাইজেরিয়া জেল থেকে দেশে ফিরেছে । চতুর্থ জন চীফ অফিসার জহিরুল ইসলাম এর ছাড়া পাওয়ার প্রক্রিয়াটি একদম শেষ প্রান্তে ]

—————————
মাগো জেল থেকে আমি বলছি ……এই গানটি বাংলাদেশী ব্যান্ড তারকা জেমসের একটি বিখ্যাত গান, একটি হৃদয় স্পর্শী গান। এই বিখ্যাত গানটি গেয়ে জেমস তখন সারাদেশে আলোড়ন তুলে ছিলেন, সারা দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছিলেন ঠিক তেমনি জেমসের মতই আমাদের মেরিনার রফিকুল ইসলাম নাইজেরিয়ান জেল থেকে চিঠি লিখে অর্থাৎ মেইল করে যেন আজ তাবৎ দুনিয়ার মেরিনারদেরকে একত্র করে ফেলেছে। এটা একটা বিরাট অসম্ভব কে সম্ভব করে ফেলেছে। এই কথাটির বিশ্লেষনে পরে আসছি।
মেরিনার রফিকুল ইসলামের কথা আমি প্রথমে জানতে পারি ২৫ শে ডিসেম্বর ২০১৫ ওরই এক ব্যাচমেট ৩য় প্রকৌশলী মোশারফ হোসেনের কাছ থেকে। আমি তখন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক পুনঃর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে এক রকম মহাব্যস্ত। এক দিকে সাংগঠনিক সম্পাদক অন্য দিকে জুনিয়র হওয়ায় প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল সেক্রেটারী আমার ওপর অনেক দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন।
যাই হোক সেই ব্যস্ততার মাঝেও আমি আমাদের মেরিটাইম সংবাদের সাংবাদিককে দিয়ে এ ব্যাপারে একটি খবর প্রকাশ করলাম। শিপিং মাষ্টার ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যার মেরিটাইম সংবাদে খবরটি পড়েই তৎক্ষনাৎ আমাকে ফোন করলেন। আমি এ সম্পর্কে যতটুকু জানি সবই উনাকে জানালাম এবং রফিকুল ইসলামের জাহাজের সাথে ম্যানিং এজেন্ট ক্যাপ্টেন খায়েরের সমস্ত মেইলের আদান প্রদান এবং জাহাজের মালিকের মেইলের আদান প্রদান (যা আমাকে রফিকুলের ব্যাচমেট মোশাররফ হোসেন) আমার মেইলে উপস্থাপন করেছিল সবই আমি উনাকে প্রদান করলাম এবং সেই সাথে রফিকুলের বড় ভাই লিটন ভাই যিনি জামালপুরে থাকেন, উনার মোবাইল নম্বর দিয়ে দিলাম। সত্যি কথা বলতে কি রফিকুল ইসলামের নাইজেরিয়ান জেলে আটকা পড়ার কথা শোনার পর থেকে আমার মনের মধ্যে একটি অস্থিরতা ও বিষন্নতা বোধ কাজ করছিল। এই রফিকুল ইসলাম সহ ৪ বাংলাদেশী ভাইয়ের জন্য আমি বা আমরা কি করতে পারবো সেটাই শুধু অজান্তে মনের মধ্যে বার বার উঁকি দিচ্ছিলো।
সারাদিনের এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যস্থতার পরে যখন রাতে বাসায় ফিরলাম আমার স্ত্রী আমার মুখের বিষন্নতা দেখে জিজ্ঞাস করলেন “কি ব্যপার তোমাকে এত বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন ? কোন সমস্যা ? ”
আমি জবাব দিলাম না, তেমন কোন সমস্যা নয়, তবে নাইজেরিয়াতে আমাদের ৪ জন বাংলাদেশী আটকা পড়েছেন। আমার কাছে বিস্তারিত শুনে সে আমাকে বললো,“তাহলে এই পরিবার গুলোর কি অবস্থা হবে এখন ? ”
তার কথার সাথে মিলিয়ে আমিও বললাম, আমিও সেটাই ভাবছি।
প্রিয় পাঠক আপনাদেরকে যে কথা বলছিলাম শিপিং মাষ্টার ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যারকে বিষয়টি পুরোপুরি জানানোর পরে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি লাগছিল এই ভেবে যে, ফয়সাল আজিম স্যার অন্ততঃ কিছু একটা করবেন।আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি ২০১৪ সালের ৬ই জুলাই বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ “এম.ভি. হোপ ” দূর্ঘটনায় পতিত হয়। এবং এম. ভি. হোপের ক্যাপ্টেন প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান কর্মকর্তা, দ্বিতীয় প্রকৌশলীসহ মোট ৮ জন নাবিক মৃত্যু বরণ করেন। তখন আমি এই ৮ জন মৃত নাবিক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় টিভির সহযোগিতায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করি এবং উক্ত অনুষ্ঠানের সম্পূর্ন পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা করেন ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যার।
Community Bonding যে কতবড় জিনিস সেটা আমি সেদিন বুঝেছিলাম।
আমি যখন “এম ভি হোপ” জাহাজের মৃত ক্যাপ্টেন রাজীব কর্মকার এর স্ত্রী কে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদের অনুষ্ঠানে আসার জন্য অনুরোধ করি তখন উনি কেঁদে ফেলেছিলেন।
অশ্রু সজল নয়নে আমাকে বলেছিলেন, ‘ভাই আপনি তো অন্তত ফোন করে আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। আর কেউ তো আমাদের ফোনও করেনি। অফিসের প্রাপ্য বেতন চাইতে গেলে তারা খারাপ ব্যবহার করছে। ঠিক মতো পরিস্কার কোন কথা বলছে না’।
তখন প্রতিউত্তরে আমি ভাবীকে বলেছিলাম, ‘ভাবী নিজেকে একা ভাববেন না। আমরা আপনার পাশে আছি বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন আপনার পাশে আছে’।
সম্মানিত পাঠক মেরিনার, যখনই কোন মেরিনার বিপদ বা সমস্যার মধ্যে পড়েন তখনই দেখা যায় তার চাকুরী দাতা ম্যানিং এজেন্ট, শিপিং কোম্পানী তার সাথে শুধু বা তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সাথে সহযোগিতা তো দূরের কথা চরম অসহযোহিতা এবং দুর্ব্যবহার করেন। আর এ জন্যই প্রয়োজন কমিউনিটি বন্ডিং।আজ কে আমি হয়ত বেদেশী জাহাজে চাকুরী করে অনেক টাকা বেতন পাই আমার অনুপস্থিতিতে আমার পরিবারও যে বিপদের সম্মুখিন হবে না একথা আমরা কেউ কখনো নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না, বলা উচিতও নয়।
প্রিয় পাঠক, আমরা হয়ত এম.ভি হোপ জাহাজের মৃত ক্যাপ্টেন রাজীব কর্মকারের স্ত্রীর কাছে তার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি কিন্তু তা (ভাবীর) মনে আমরা এতটুকু সাহস ও শক্তি যুগিয়েছিলাম যে তিনি একা নন। আমরা অর্থাৎ এসোসিয়েশন তার পাশে আছে এবং উনি যে স্থানীয় শিপিং কোম্পানীর কাছ থেকে কোনোরকম হয়রানী এং প্রতারনার স্বীকার না হন, অন্তত এইটুকু আমরা সেদিন নিশ্চিত করে ছিলাম এবং আমাদের সহযোগিতায় উনার (P&I CLUB + বেতন) সমস্ত পাওনাদি পাবার ব্যবস্থা আমরা করেছিলাম।
সম্মনিত পাঠক, ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যারের প্রসঙ্গ থেকে কিছু দুরে চলে গিয়েছিলাম। আসলে ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যার আমাদের মেরিন সমাজের অত্যন্ত সম্মানিত এবং নিবেদিত একজন হৃদয়বান ব্যক্তি এবং একজন দক্ষ প্রশাসক। উনার সম্পর্কে আপনাদের মনে যার যে ধারনায় থাকুক না কেন উনাকে অনেক কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। মেরিন সমাজের জন্য উনার মত দরদী এবং নিবেদিত ব্যক্তি আমার চোখে খুব কমই পড়েছে। যেখানেই কোন মেরিনার সমস্যার মধ্যে পড়েছেন তখনই উনি উনার উদার মন নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাই রফিকুল ইসলামের নাইজেরিয়ার জেলে আটকা পড়ার ঘটনাটা উনাকে বলতে পেরে মনে অন্ততঃ এইটুকু আশ্বস্ত হতে পেরেছিলাম যে উনি হয়ত কিছু করবেন বা করার চেষ্টা করবেন। হ্যাঁ, সত্যিই উনি করেছেন । উনি এ ঘটনাটা অফিসিয়ালী নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে ডিজির দপ্তরে তুলে ধরেছেন এবং ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান স্যারের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্মানিত পাঠক, আসলে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিটি উচ্চ পদে মেরিনারদের থাকা উচিত তাহলে মেরিনারদের বর্তমান সমস্যা অনেকগুলোই সমাধান হয়ে যাবে। কেন একথা বললাম ? আজ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যার শিপিং মাষ্টার না থেকে যদি পূর্ববর্তী শিপিং মাষ্টার জনাব শামীম আহমেদ থাকতেন তাহলে উনি কখনই মেরিটাইম সংবাদ পড়তেন না, যেহেতু এটা মেরিনারদের পত্রিকা। আর পড়লেও আমাকে ফোন করে ঐ আটকে পড়া ৪জন নাবিক সম্পর্কে বিস্তারি তথ্য জানতে চাইতেননা। আর এর পরে এ ঘটনা কোথায় কতদুর যেতো সেটাও হয়তো আমরা আর বলতে পারতাম না। আর এ কারনেই নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিটি উচ্চ পদে বিসিএস বা নেভীর অফিসার না থেকে আমাদের মেরিনাররা থাকলে আমাদের নৌ মন্ত্রনালয়ের এবং আমাদের মেরিনারদের অনেক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হতো এ কথা আনায়াসেই বলা যায়। আমাদের বর্তমান ডিজি সাহেব এ ব্যাপরে যতটুকু সহযোগিতা করছেন তা শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান এবং ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম স্যারের উদ্যোগের জন্য।
আপনারা আমার সাথে একমত কিনা জানিনা আজকে অসংখ্য ভুঁইফোড় প্রাইভেট একাডেমীর অনুমোদন এবং শিপিং মার্কেটে ক্যাপ্টেনদের চাকুরীর সংকটের জন্যেও নেভীর একজন সাবেক ডিজি সাহেব প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী। উনি ভবিষ্যৎ শিপিং মার্কেটের উত্থান পতনের কথা আগপিছ না ভেবে এতটুকু গুলো প্রাইভেট একাডেমীর অনুমোদন না দিলে আজকে ক্যাডেটদের চাকুরীর বাজার এতটা অসহনীয় এবং ধারাণাতীত খারাপ হতো না।
আমার বক্তব্য হল শিপিং মার্কেটে ক্যাডেটদের অতিরিক্ত সংকট থাকলে সরকারী মেরিন একাাডেকমীর সংস্কার করে প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা বাড়ানো যেতো আবার চাহিদা না থাকলে কমিয়ে ফেলা যেত। তাহলে অন্তত শিপিং মার্কেটে চাকুরীর এতটা সংকট হতো না।
শুধু ক্যাডেট নয়, সার্টিফিকেটধারী ৩য় কর্মকর্তা এবং ৪র্থ প্রকৌশলী সংখ্যাও এখন কম নয়। চাকুরীর বাজার কতটা খারাপ তার ছোট্ট একটি উদাহরন আমি দিচ্ছি।
আমি SR SHIPPING এর ম্যানিং ডিপার্টমেন্টে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সামনে বসে উনাদের একটা জাহাজে যোগদানের জন্য অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পন্ন করছিলাম। এ সময় মেরিন একাডেমীর একজন ক্যাডেট ক্লাস থ্রী পাশ করার পরে অফিস ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ জনাব শুক্কুরকে ফোন করেন। শুক্কুর সাহেব আমি (থার্ড অফিসারের নামটা উল্লেখ করলাম না) আমিতো গত কাল ক্লাস থ্রী পাশ করেছি, SR এর জাহাজে ডেক ক্যাডেট ছিলাম । আমি আমার বায়োডাটা আপনার কাছে জমা দিয়ে যাবো।
শুক্কুরঃ ক্লাস থ্রী পাশ করছেন ভালো হইছে। অফিসে আসার দরকার নেই আর .সিভি দেওয়ারও দরকার নেই । বাসার বসে থাকেন আমরা আপনাদেরকে লাগলে ফোন দিমু।
শুক্কুরের কথার ধরনে এতটাই অবজ্ঞা ও অবহেলা ছিল আমার শরীরে ওর কথাশুনে আগুন ধরে গিয়েছিল তখন অতিকষ্টে নিজেকে একটু সামলে নিয়েছিলাম। তখন আমার মনে হয়েছিল একটি ছেলে কতটা কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে একাডেমীতে চান্স পায়। তারপর একাডেমীর লাইফ শেষ করে জাহাজে সী টাইম করে ক্লাস থ্রী পরীক্ষায় কত পরিশ্রমের মাধ্যমে উত্তীর্ন হয় আর তার অবস্থান SR SHIPPING এর মিঃ শুক্কুর নামে একজন সামান্য এক্সিকিউটিভের কাছে এতটাই তাচ্ছিল্যের আর এতটাই অবহেলার। হায়রে আমাদের মেরিন সমাজ। কোথায় তোমাদের সেই সামাজিক মর্যাদা? কোথায় তোমাদের সেই ডিগনিটি? সবই যেন আজ ভুলন্ঠিত কল্প লোকের গল্পের মতো। কিন্তু মেরিনারদের বিশেষ করে জুনিয়ার মেরিনারদের চাকুরীর বাজার এতটা খারাপ কখনই ছিল না।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল আমাদের প্রবাসী সিনিয়র মিনার রশীদ স্যারের লেখার কথা। উনার লেখার কি পর্যায়ে উনি লিখেছিনে উনাদের সময় বিয়ের বাজারে পাতা হিসাবে মেরিনারদের অনেক ডিমান্ড ছিল সামজিক ডিগনিটি ছিল। এটা আসলে আমাদের (৩২তম ব্যাচের) সময়েও ছিল।
এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা আমার মনে পড়ছে। ২০১৩ সালের ২৭ শে মার্চ হোটেল এমব্রোসিয়াতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন ডিজি কমোডের জোবায়ের সাহেবকেও আমরা আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম। উক্ত অনুষ্ঠানে একাডেমীর কমান্ড্যান্ট সাজিদ স্যার সহ নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
ডিজি সাহেব নিজের সময়ে গৃহিত পদক্ষেপসমূহের বিবরণ যখন দিচ্ছিলেন তখন উপস্থিত কেউ একজন মন্তব্য করছিলেন, জ্বনাব ডিজি সাহেব, আপনি সত্যিই আমাদের জন্য সুবিশাল পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারনে আজ মেরিন ক্যাডেট এবং জুনিয়র অফিসাররা চাকুরীর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। যতদিন বাঙ্গালী জাতি টিকে থাকবে যতদিন মেরিন সমাজ টিকে থাকবে আপনাকে সেই সব মেরিনারগণ চরম অশ্রদ্ধার সাথে স্মরন করবেন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সম্মানিত পাঠক, নাইজেরিয়ার জেলে আটক রফিকুল ইসলামের কথা লিখতে গিয়ে মনের আগোচরে মেরিনারদের অনেক দুঃখ দুর্দশার কথাও লিখে ফেললাম। তবে রফিকুল ইসলামের কারনে আমাদের একটা বড় উপকার হয়েছে তা হল কমিউনিটি বন্ডিং । আজ রফিকুল ইসলামসহ চার বাংলাদেশীর মুক্তির জন্য বাংলাদেশসহ প্রবাসী সকল মেরিনারা আজ ঐক্যবদ্ধ। আজ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ থেকে ক্যাপ্টেন জিল্লুর স্যার, ক্যাপ্টেন খায়ের স্যার, সিঙ্গাপুর থেকে বাতেন স্যার এবং অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফোরকানুল কাদের স্যার, ক্যাপ্টেন মেহেদী/বিল্লাহ স্যার, মিনার রশীদ স্যার, সারা বিশ্বের মেরিনারদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের জীবনের মূল্যবান সময় ও অর্থ ব্যয় করে এগিয়ে এসেছেন। আটককৃত ৪ বাংলাদেশীর মুক্তির জন্য নিঃসন্দেহে সমস্ত মেরিনাদের কাছে তা প্রশংসার দাবী রাখে।
প্রকৃতির নিয়মের হয়ত একদিন এ পৃথিবীতে ক্যাপ্টেন জিল্লুর স্যার, বাতেন স্যার, ফোরকানুল সহ অন্যান্য সিনিয়ররা থাকবেননা কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যেক মেরিনারগণ নিঃসন্দেহে তাদের এই প্রচেষ্টাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করবে। তারা মেরিনারের হৃদয়ে জলন্ত নক্ষত্র হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে…………..।
সম্মানিত পাঠক, নাইজেরিয়ার জেলে আটক রফিকুল ইসলামসহ ৪ মেরিনারদের মুক্তির জন্য যে কাহিনী শুরু করেছিলাম তার শেষ দৃশ্যের সমাপ্তি কিভাবে হবে তা আমরা এ মুহুর্তে সঠিক ভাবে বলতে পারছিনা। তবে বাংলাদেশ থেকে ক্যাপ্টেন জিল্লুর স্যার, ক্যাপ্টেন খায়ের স্যার, সিঙ্গাপুর থেকে বাতেন স্যার ও অষ্ট্রেলিয়া থেকে খায়রুল আলম স্যার, খাদেমুল ইনসান স্যার, ফোরকানুল কাদের স্যার, মিনার রশীদ স্যারসহ অন্যান্য দেশী ও প্রবাসী সিনিয়র এবং জুনিয়র মেরিনারগন সমন্বিত ভাবে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন নিঃসন্দেহে আশা করা যায়, শেষ দৃশ্যে সবাই হাসি মুখে বাড়ি ফিরবেন । জেল থেকে মুক্তি পাবেন।
আমরা কামনা করি, আমাদের এই ৪ মেরিনার অতিদ্রুত দেশে ফিরে আসুক প্রিয়জনের মাঝে ফিরে যাক। আবার ও প্রানবন্ত হয়ে ফিরে যাক তাদের ক্যারিয়ারে (চাকুরীতে) সেই নীল সমুদ্রের বুকে……… সার্থক হয়ে উঠুক তাদের আগামী দিনের নতুন স্বপ্ন।
পাদটীকাঃ
আমাদের চার মেরিনার নির্দোষ ছিলেন। তবুও নাইজেরীয়ার আদালতের প্রশ্নবিদ্ধ রায়ে তাদের বিশ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্থ এ দেশটির আদালত একটা বিকল্পও সামনে ঠেলে দিয়েছেন। তা হচ্ছে যদি জন প্রতি ১ লক্ষ ডলার জরিমানা দেয়া হয় তাহলে আমাদের নাবিকদের মুক্তি মিলবে। অতএব, বোঝা গেল মোট চার লক্ষ ডলার হলে আমরা আমাদের নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবো। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রবাসী মেরিনাররা অর্থ সাহায্য করেছেন, দেশের মধ্য থেকেও সাহায্য এসেছে, ম্যানিং এজেন্টের কাছ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহায়তা প্রক্রিয়াধীন আছে। তবুও সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী এখনও অর্ধেক পরিমাণ অর্থের সংস্থান হয়নি। এখনো আলো আধারের হাতছানির মত আবহ….কাকে রেখে কে বেরিয়ে আসবে। আমরা চাই আমাদের চার মেরিনারই এক সাথে দেশের মাটিতে পা রাখুক।সেজন্য আমরা কাজ করছি। মেরিটাইম সংবাদও কাজ করছে। নিজেদের পকেটের টাকা দেয়ার পাশাপাশি আমরা আমাদের সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছি যাতে তারা নাইজেরিয়ার কারাগারে বন্দি মেরিনারদের উদ্ধারে অর্থ সাহায্য করেন। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য মেরিটাইম সংবাদ অফিসে আমরা একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করেছি।

—————–

লেখকঃ চীফ ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন, চীফ এডিটর, মেরিটাইম সংবাদ

Share