Maritime Sector of Bangladesh – Development proposals, specially for junior officers: Shamsul A Khan (31N)

Maritime Sector of Bangladesh – Development proposals, specially for junior officers: Shamsul A Khan (31N)

বেশ কিছুদিন থেকেই একটা বিষয় চিন্তা করছি। বেশ ভালোভাবেই চিন্তা করেছি আমি। যদিও আমার বক্তব্যের সংগে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করতে পারে, তবুও আমার ধারনা – আমার চিন্তা ভাবনা আমার কাছে সঠিক। প্রথমে ভেবেছিলাম, দরকার নেই শুধু শুধুই প্যাঁচাল পারার। পরে ভেবে দেখলাম দরকার আছে। আর তাই এই লেখা, যা হয়তো অনেককেই মেরিন প্রফেশন সম্পর্কে কিছুটা নতুন ধরনের ধারনা পেতে সাহায্য করবে।

প্রসঙ্গত বলি, আমি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী ৩১ ব্যাচের এক্স ক্যাডেট। ১৯৯৫ সালের শুরুর দিকেই আমরা তখন ৭০ জন ক্যাডেট একাডেমীতে ভর্তি হয়েছিলাম। একজন পালিয়ে চলে গেলো একাডেমীতে জয়েন করবার পর পরেই। সেকারনে টোটাল হয়ে গেলাম ৬৯ জন। এই ৬৯ জন ক্যাডেটের মধ্যে আমরা সকলেই পাশ করে বের হলাম ঠিক ২ বছর পর। তখন ‘হক এন্ড সন্স’ ম্যানিং এজেন্ট একাডেমী থেকে পাশ করা প্রথম ১০ জন ক্যাডেটদের বিদেশী প্রিন্সিপ্যালের জাহাজে ক্যাডেট হিসেবে চাকুরী পাবার সুযোগ করে দিতো। যাইহোক, এর পর সবাই লেগে গেলাম সিডিসি পেয়ে জাহাজে জয়েন করবার প্রতিযোগীতাতে। আমাদের ব্যাচের গোল্ডমেডেল পাওয়া রেজোয়ান আহম্মেদ কিন্তু পাসিং আউটের ৫ মাস পরেও ‘হক এন্ড সন্স’ থেকে সিলেক্ট হবার পরেও জব না পেয়ে এই প্রোফেশনের জবের নিশ্চয়তা না দেখে আর শীপেই জয়েন করলোনা। রেজোয়ান স্যাট, টোফেল এই সব করে চলে গেলো আমেরিকার ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করার জন্য। এখন আলহামদুলিল্লাহ্‌, রেজোয়ান আমেরিকাতেই খুব ভালো ভাবে সেটেল্ড। মেরিন একাডেমীতে পড়ালেখা করার পরেও তাকে জাহাজের জল পান করতে হয়নি। আর আমি পাসিং আউটের পর হক সন্স থেকে সিলেক্ট হবার পরেও ১১ মাস বসে থেকে এর পর প্রথম শীপে জয়েন করতে পেরেছি। আমার বাবার পক্ষে নতুন করে আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে আরও উচ্চশিক্ষা দেয়া সম্ভব ছিলোনা। এরপরেও জাহাজের চাকরি ছেড়ে দেইনি শত প্রতিকুলতার মধ্যেও। আর আমাদের আরও ২-৪ জন ব্যাচমেট মেরিন প্রফেশন ছেড়ে দিয়ে কেউবা ব্যাংকার অথবা কেউ বা অন্য কোনো বড় মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীতে চাকুরীরত, অথবা কেউ কেউ বিদেশে মাইগ্রেশন নিয়ে সেখানেই সেটেল্ড। শুধুই আমাদের ব্যাচমেটই নয়, মেরিন একাডেমী থেকে পাশ করা অন্য অনেক ব্যচেরই অনেক এক্স ক্যাডেট বিসিএস ক্যাডার থেকে শুরু করে সরকারী বেসরকারী উচ্চপর্যায়ের অনেক ভালো ভালো কর্মস্থলে কর্মরত আছেন দেশে কিংবা বিদেশে। কাজেই আমার কথা, যার যোগ্যতা আছে, সে ঠিকই বেড়িয়ে আসবে হাজার প্রতিকুল পরিবেশ থেকেই।

নৌ প্রকৌশলী মাহমুদ (৩২ ব্যাচের – একাডেমীতে আমার ১ ব্যাচ জুনিয়র) কিছুদিন আগে তুমি একটা মেরিন প্রফেশন এর উপরে অনেক বড় একটা আরটিক্যাল লিখেছো। সেখানে তোমার লেখা অনেক বিষয় বস্তুর সংগেই আমি মোটামুটি একমত হলেও মেরিন শিক্ষার উপরে তোমার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আমি মোটেই একমত নই এবং আমার চিন্তা ধারনা তোমার থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন। দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশী হলে কি তাহলে আমরা বাচ্চাকাচ্চা নেয়া বন্ধ করে দেবো? মোটেই নয়, বরং কমিয়ে দিতে পারি। আগে একটা ফ্যামিলি ৮-১২ জন সন্তান নিতো, এখন সেটা কমে ১-২ জন হয়েছে।

ঠিক সেভাবেই ক্যাডেট সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে চাকুরীর অবস্থা দেখে। মেরিনের শিক্ষা ব্যাবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে নতুন করে নতুন সিলেবাসে। আর আমাদের দেশের মেরিন সেকটরের সবাইকে এই ধারনা দিতে হবে যে, মেরিন এ পড়ালেখা করলেই জাহাজে জয়েন করতে হবে, এমনটা ঠিক নয়। মেরিন রিলেটেড অনেক ধরনের চাকুরী আছে দেশে এবং বিদেশে। শীপ চারটারিং, শীপ মেনেজমেন্ট, শীপ কন্সট্রাকশন, পোর্ট এন্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট, ফিসিং ইন্ড্রাস্ট্রি ডেভলপমেন্ট, ওয়েল এন্ড গ্যাস ফিল্ড রিসারসিং জব, মেরিন ল, মেরিন একাউন্টিং, পাওয়ার প্ল্যান্ট জব, সেফটি অফিসার জব, সিকিউরিটি অফিসার জব, সারভেয়ার, লোডিং মাস্টার জব, মুরিং মাস্টার জব ইত্যাদি, ইত্যাদি এরকম হাজারো হাজারো জব আছে যা আমাদের দেশের মেরিনাররা করতে পারে – দেশে থেকে কিংবা মাইগ্রেশন নিয়ে অন্য দেশে গিয়ে। সেক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত অনেক মেরিন একাডেমী এক্স ক্যাডেটগন আমাদের দেশের মেরিনারদের জব পেতে সাহায্য করার জন্য অবশ্যই এগিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার জানামতে সমগ্র বিশ্বজুড়েই এসব শোর বেজড মেরিন রিলেটেড হাজার হাজার জবে ইন্ডিয়ান অফিসার/নাবিকেরা কিংবা ফিলিপিনো অফিসার/নাবিকেরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। এমনকি ইন্দোনেশিয়ান, মালয়শিয়ান কিংবা চাইনিজরাও এসব শোর বেজড মেরিন রিলেটেড হাজারো হাজারো জব করছে যাদের চেয়ে আমাদের দেশের এত ভালো রেজাল্ট করা মেরিন শিক্ষায় শিক্ষিত ক্যাডেটরা অনেক ভালো কিছুই করার কথা। অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন এই সব বাংলাদেশী অফিসার এবং ক্যাডেটদের রয়ছে শুধু সঠিক সুযোগ আর দিকনির্দেশনার প্রচণ্ড অভাব যা একমাত্র সরাসরি সরকারী পৃষ্ঠপোষনায় তাঁদের দেয়া সম্ভব।

আর সর্বোপরি আমাদের দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের জন্য। আমাদের ভিসা সমস্যা অতি দ্রুত সমাধান করতে হবে। অন্য সকল দেশের সংগে সকল পর্যায়ের দিপাক্ষিয় আলোচনাতে মেরিন রিলেটেড অনেক বিষয়বস্তু নিয়ে আলোকপাত করতে হবে সবসময়। দেশের সরকারী এবং বেসরকারী সকল মেরিন একাডেমীর ক্যাডেট সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে এবং এই সব ক্যাডেটদের বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪ বছরের অনার্স কোর্স দিতে হবে যেনো তার সামনে দুটো পথই খোলা থাকে। এই ক্যাডেটরা সরকারী/বেসরকারী একাডেমীগুলো থেকে পাশ করবার পর চাইলে সে মার্চেন্ট শীপে জয়েন করবে মেরিনার হবার জন্য, অথবা কেউ যদি তা না চায় কিংবা চাকুরী জটিলতার জন্য সেই সুযোগ সে না পায়, তাহলে সে তার উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে। অর্থাৎ সে মাস্টার্স পড়তে পারবে এবং পাশ করে সে বিসিএস ক্যাডারের চাকুরীর যোগ্যতাও রাখবে।

মেরিনার হবার স্বপ্ন অনেকেই দেখে থাকে। আর তাই আমাদের এই সুন্দর প্রোফেশনটাকে অনেকেই এখন নাম্বার ওয়ান বিজনেস বানিয়ে ফেলেছে, তা সেইটা সরকারী ভাবেই হোক আর বেসরকারী ভাবেই হোক। এদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে ফেলতে হবে। ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, এই সময়ের মেরিনার প্রোডাকশনের অপরিণামদর্শিতার জন্য যে হিউজ এমাউন্টের জুনিয়ার অফিসার আজ বসে আছে কর্মহীন, সেই সব অফিসারদের চাকুরী সমস্যার সমাধান পেতে অনেক সময় লাগবে, এইটা একদম নিশ্চিত। সরকারীভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে এই সব জুনিয়ার অফিসারদের চাকূরী পেতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। অথবা এমন কিছু করতে হবে যেনো ৩য় শ্রেনীর (ডেক/ইঞ্জিন) সনদ দিয়ে সে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পায় এবং সরকারী/বেসরকারী শোরবেজড চাকুরীতে জয়েন করতে পারে।

সবশেষে একই একাডেমীর এক্স ক্যাডেট হবার সুবাদে একাডেমীক জুনিয়ার হবার দাবী নিয়ে আমি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীর কমান্ডেন্ট নৌ প্রকৌশলী সাজিদ স্যার এবং বাংলাদেশ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরীক্ষক ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দীন স্যার আর নৌ প্রকৌশলী নাজমুল স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি – স্যার, আপনারা দয়া করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে আমাদের একাডেমী থেকে পাশকরা ক্লাস ৩ নিয়ে বসে থাকা এই সব জুনিয়ার অফিসারদের জন্য কিছু একটা করেন স্যার। শুধু তাই নয়, আমাদের যাদের যাদের আত্মীয়স্বজন সরকারের উচ্চ আসনে কর্মরত রয়েছেন তাঁদের সকলের উচিত এই সব আত্মীয়স্বজনের সাহায্য নিয়ে বিষয়টি একদম সরকারের ডিছিশান মেকিং অথরিটির কানে তুলে ফেলা। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছেই বা নয় কেনো?

খুব খুবই কষ্ট লাগে, যখন ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে অপরিচিত কোনো জুনিয়ারের চাকুরী পাবার জন্য আকুল আবেদন পেয়ে থাকি, জানি ওর জন্য আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়, শুধুই বিবেকের তাড়না থেকে আপনাদের কাছেই কিছু সাহায্য চাওয়া আরকি—ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

Writer: Capt Shamsul A Khan (31N)

Share