নিউমেটিক কন্ট্রোল ভেন্টিলেটর উদ্ভাবন করল মেরিন একাডেমি
করোনাভাইরাসের স্বীকৃত কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়ায়, গুরুতর অসুস্থ রোগীর শ্বাসকষ্ট প্রশমনে ভেন্টিলেটরই একমাত্র ভরসা। এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও এখন ভেন্টিলেটর সংকটে ভুগছে, বাংলাদেশেও আমদানি নির্ভর এ যন্ত্রের যথেষ্ট অপ্রতুলতা রয়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে সহজে ও কম খরচে ভেন্টিলেটর প্রস্তুতের জন্য, ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে চেষ্টা করছেন এবং সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখজনকভাবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির নিউমেটিক-কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে তৈরি হয়েছে সহজে ব্যবহারযোগ্য ‘নন-ইনভার্সিভ ভেন্টিলেটর’।
প্রায় ৬ দশকের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান অর্জন করেছে দেশি বিদেশি অনেক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও দক্ষ মেরিটাইম প্রফেশনাল তৈরির জন্য এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত ওয়ার্কশপ ও ল্যাবরেটরিসহ যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। মেরিন একাডেমির প্রধান, কমান্ড্যান্ট ড. নৌ প্রকৌশলী সাজিদ হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় ল্যাব-অফিসার মু. খালেদ সালাউদ্দিন একাডেমির কন্ট্রোল ল্যাবের নিউমেটিক কন্ট্রোল টেকনোলজি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ ভেন্টিলেটর তৈরি করেন।
খালেদ সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, নিউমেটিক কন্ট্রোল টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশে এই প্রথম নন-ইনভার্সিভ ভেন্টিলেটর তৈরি করা সম্ভব হলো। এ প্রযুক্তির বড় সুবিধা হচ্ছে এর একটি কন্ট্রোল ইউনিট দিয়ে প্রায় ৫ থেকে ৮ টি অঙিজেন প্রেশার ইউনিট চালানো এবং সম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি বলেন, পুরো যন্ত্রটির কন্ট্রোল অংশে সলেনয়েড কন্ট্রোল ভালব ম্যাগনেটিক সেন্সর ও টাইম-রিলে এবং প্রেশার অংশে নিউমেটিক পিস্টন-সিলিন্ডার, অঙিজেন রিসারভার ও একটি ব্যাগ-ভালব-মাস্ক ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাবহারের সময়ে, যন্ত্রটিতে অঙিজেনের প্রেশার, ভলিউম ও রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের রেট নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। একাডেমির আর্বান ডিসপেন্সারির মেডিক্যাল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম একাডেমি উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটরটি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং যেকোনো শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে বলে মতামত দিয়েছেন। দেশে করোনা রোগী ছাড়াও যেসব হাসপাতালে আইসিইউ/রেস্পিরেটরি সাপোর্ট নেই সেখানে কনভেনশনাল ভেন্টিলেটরের জায়গায় বিকল্প ভেন্টিলেটর হিসেবে কার্যকর হয়ে উঠতে পারে যন্ত্রটি।
কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসেন জানান, আপাতত এই যন্ত্রটি একাডেমির আর্বান ডিসপেন্সারিতে সমপ্রতি স্থাপিত আইসোলেশন সেন্টারে স্থাপন করা হবে। তিনি জানান, আমাদের ক্যাম্পাসে ৭০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী আছেন। এ ছাড়া আনোয়ারার স্থানীয় লোকজনকেও আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকি। তাই যন্ত্রটি আমাদের সেন্টারে রাখছি। মানবতার কল্যাণে কোনো হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠান চাইলে এ যন্ত্র তৈরির কৌশল, সিস্টেম আমরা খুশিমনে জানাব।
Recent Comments