সব দূরত্ব কিন্ত মনের দূরত্ব না: মাশুক বিজেতা রাহুল(৪৭তম ব্যাচ)
গভীর সাগরে যখন জাহাজ ছুটে চলে তখন মনে হয় কিছু পথ পাড়ি দিলে এই ত বোধ হয় আকাশ আর সাগরের মিলন হবে । মনে হবে যেন এই ত সামনেই আকাশ ছুয়ে দেখতে পারবে জাহাজ। কিন্ত বাস্তবে তা হয়ে উঠে নাহ। অনেকটা মরুভূমিতে মরীচিকা দেখার মত এই খেলা।
ফোর জি নেটওয়ার্কের এই দুনিয়ায় আমরা খুব কম সংখ্যাক মানুষ ই নিজের মোবাইল ছাড়া কিংবা প্রিয় মানুষের সাথে দিনের পর দিন যোগাযোগ ছাড়া থাকতে পারি।
আর করোনাকালীন এই সময়ে ত ভিডিও কনফারেন্স বা প্রিয় মানুষের সাথে ভিডিও কল এইসব ই যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
এবার আসি ব্যতিক্রমী
এক পেশার গল্প নিয়ে যেখানে কমক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক অনেকটাই মরীচিকার মতই। গভীর সাগরে দিনের পর দিন স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক ছাড়া, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে মন খুলে কথা বলতে না পারা, ফেসবুকে নিয়মিত স্ক্রল না করতে পারা, দেশ এবং দেশের বাইরের নিয়মিত খবরা-খবর না জানতে পারা এইসব মেরিন পেশার মানুষদের জন্য খুব ই নিয়মিত এবং বাস্তব ঘটনা।
এই ধরা যাক, জাহাজ চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে। ৩৩ দিনের দিনের এই লম্বা যাত্রায় স্যাটেলাইট ফোন ই তখন নাবিকদের একমাত্র ভরসা যোগাযোগের জন্য। সেটাও আবার ল্যান্ড ফোনের দিনগুলোর মত। স্যাটেলাইট ফোনের একটি ১৫ ডলারের কারডে ২৪ মিনিট মাত্র কথা বলা যায়। যদিও ডলারের পরিমান এবং মিনিট এটা স্যাটেলাইট কোম্পানি এবং জাহাজ মালিকের উপর নিভর করে।
এরপর বন্দরে জাহাজ পৌছালে সিম কিনে অথবা রোমিং সিম চালু থাকলে তখন ই যোগাযোগ সহজলভ্য এবং স্বাভাবিক হয়। আর যারা খুব ই ভাগ্যবান নাবিক তারা জাহাজে ওয়াইফাই সেবা পায়। তাও সেটা খুব ই সীমাবদ্ধ। হয়তবা আপনি শুধু কয়েকটি নিদ্দিষ্ট এপস ব্যবহার করতে পারবেন যেমন ইমো, ওয়াটসএপ, মেসেঞ্জার এসব। এটাও কোম্পানি পলিসির উপর নিভর করবে।
নেটওয়ার্ক ছাড়া কিছুদিন পর পর একাকী থাকার অভিজ্ঞতা আমাদের মেরিন পেশার একটা অংশ। তাই এদিক দিয়ে আমাদের স্বেচ্ছায় নিবাসনে যাওয়া লাগে নাহ কিংবা মন খারাপ থাকলে কখনো মনে হয় না দূরে শহরের কোলাহল ছেড়ে কোথাও একাকী কয়েকদিন থেকে আসি।
আর বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজে চাকুরি করলে কিংবা বাইরের পতাকাবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম পোর্ট এ নোংগর করলে বাংলাদেশী নাবিকদের জন্য কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়। জাহাজের ক্যাপ্টেনের অনুমতি সাপেক্ষে পরিবার নিয়ে আসার সুযোগ পাওয়া যায় জাহাজ যতদিন দেশে অবস্থান করে। তবে সব র্যাক কিংবা সব দেশি কিংবা বিদেশী কোম্পানির জাহাজে এই সুযোগ আর অনুমতি পাওয়া যায় নাহ জাহাজের ব্যস্ত সময়সূচির কারনে।
সেদিক দিয়ে আমি খুব ই ভাগ্যবান ছিলাম আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে কিছুদিনের জন্য জাহাজের ব্যস্ত পরিবেশ, ইঞ্জিন রুমের মেশিনারিজ, ব্রিজরুম এবং সাগরের অপরুপ সৌন্দর্যের কিছুটা অনুভব করানোর চেষ্টা করেছিলাম৷
প্রকাশিত: মাশুক বিজেতা রাহুল: সব দূরত্ব কিন্ত মনের দূরত্ব না | আমাদের সময়.কম – AmaderShomoy.com
(লেখক: এক্স-ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ৪৭তম ব্যাচ, মেরিনার হিসেবে বিদেশে কর্মরত)
Recent Comments