
Bitter truth about Academic life: Abdullah Al Mahmud (47E)
বিঃদ্রঃ এটা কাউকে হেয় করা বা অসম্মান করার উদ্দেশ্যে লেখিনি, একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে লেখা। কারো মনে অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিয়ে থাকলে দুঃখপ্রকাশ করছি।
একাডেমির তথাকথিত রেজিমেন্টাল ট্রেইনিংয়ে কার কতটুকু লাভ হয়েছে জানিনা-তবে আমার মনে হয় আমার যা কমন সেন্স ছিল সেটা আরও কমে গিয়েছিল এক বছরের জুনিয়র লাইফে। জয়েনিং ট্রেডিশন দিয়ে যে ট্রেডিশনের শুরু হয়েছিল, এরপর সব ট্রেডিশনের উপর দিয়েই গেছে। ডিসিপ্লিনের জন্য অবশ্যই কঠোরতার প্রয়োজন আছে কিন্তু ততটা নয় যেটা সাধারণ বুদ্ধিমত্তাকে বিলোপ করে। জাহাজে দুঃসহ কষ্ট হবে বলে যে স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল সেটা না চালালেও জাহাজে এসে সারভাইভ করতে খুব বেশি সমস্যা হতো বলে আমার মনে হয়না। সিঙ্গাপুর মেরিটাইম একাডেমিতে ক্লাস-টু করতে গিয়ে ওদের পুরুষ আর নারী ক্যাডেটদের দেখেছি সকালে সুন্দর করে সবাই ফল-ইন করে দাঁড়াচ্ছে, কাউন্টিং শেষ হলে যার যার ক্লাসে চলে যাচ্ছে। কোন হইচই-হাঙ্গামা নেই! অথচ আমরা পাঙ্গা খেয়ে জুনিয়র লাইফে ক্লাসে শুধু ঘুমিয়েই কাটিয়েছি বেশিরভাগ সময়।
জয়েন করেই শুনেছিলাম, একাডেমির পড়াশোনা সব ‘বুলশিট’! কোন রকম পাশ করে গিয়ে জাহাজে গিয়ে সব শিখতে পারবো। ব্যস, লেখাপড়ার আগ্রহ কমে গেল। কোন রকম ৬০-৬৫ পেতে পরীক্ষার আগে কয়েক রাত পড়েই খালাস। কিন্তু যদি বলা হতো আরও বেশি পড়াশোনা করতে, বেশি বেশি জানতে-তাহলেই সত্যিকার ভালো হতো বলে এখন মনে হয়।
যখন জুনিয়র ছিলাম তখন মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম আমি সিনিয়রদের তথা একাডেমির ট্রেডিশন কী কী পছন্দ করছি, কী কী করছিনা। জুনিয়র লাইফে আমার যা যা অপছন্দের ট্রেডিশন ছিল,সিনিয়র হয়ে জুনিয়রদের সাথে সেসব কিছুই করিনি। আমার যা যা অপছন্দের, আমার জুনিয়রদেরও সেটা ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই সিনিয়র হয়ে আমি চেষ্টা করেছি অযথা, অপ্রয়োজনে কোন জুনিয়রকে পানিশমেন্ট না দিতে, ফালতু ট্রেডিশনের দোহাই দিয়ে বাজে ব্যাপারগুলো কন্টিনিউ না করতে। কেউ ভুল করলে বা কারো বিরুদ্ধে কমপ্লেইন পেলে অল্পবিস্তর পানিশমেন্ট দিয়েছি যেন পরবর্তীতে আর ভুল না করে। তবে সেটা সেই জুনিয়রের মনে আজীবনের জন্য ক্ষত বা ক্ষোভ তৈরি করবে এমন না।
অনেকেই আছে যারা স্বাধীনতা বা ক্ষমতা পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। তারা কিন্তু এখনো কারো মনের সম্মানজনক স্থানে নেই। সামনাসামনি দেখা হলে সালাম দেই/দেয় ঠিকই কিন্তু মন থেকে যে শ্রদ্ধা-সেটা আসেনা/পায়না। একাডেমির বাইরে এখন কারো স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নেই, যার যার মতো সে সে। কিন্তু সিনিয়র হিসেবে সেই একবছরে যারা অতিরিক্ত স্বেচ্ছাচারী ছিল তারা কখনও জুনিয়রদের মন থেকে শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসা পায়নি, পাবেও না। মানুষের আসল প্রকৃতি তখনই বোঝা যায় যখন তাকে কোন ক্ষমতা দেয়া হয়। দুঃখজনকভাবে ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার অনেকেই করতে পারেনা, অপব্যবহার করে।
একাডেমির মতো অনেক জাহাজেও জুনিয়র অফিসার বা ক্যাডেটদের সাথে ট্রেডিশনের নামে যা তা আচরণ করা হয় বলে শুনেছি। কেউ একাডেমি বা প্রফেশনালি কারো সিনিয়র মানে এই না যে সে তার অধীনস্থ জুনিয়রের মাথা কিনে নিয়েছে। এমনটাও নয় যে জুনিয়রদের কোন আত্মসম্মানবোধ বা ব্যক্তিত্ব থাকতে নেই। প্রতিটি মানুষের সেটা আছে যার সাথে র্যাংক বা সিনিয়র-জুনিয়রের কোন সম্পর্ক নেই। জাহাজে সবাই একসময় জুনিয়র থাকে কিন্তু বড় অফিসার হয়ে সে সময়ের সব ভালো লাগা, খারাপ লাগা ব্যাপারগুলো ভুলে যায় অনেকে। ধরে নিলাম দুর্ভাগ্যক্রমে একজন ভালো আচরণ পাননি জাহাজের সিনিয়র থেকে। কিন্তু তার মানে তো এই না যে সেও তার জুনিয়রের সাথে সেই খারাপ ব্যাপারগুলো চালিয়ে যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলছি, একজনকে তার সিনিয়র বালি দিয়ে শরবত খাইয়েছে বলেও সেও জুনিয়রকে বালি দিয়ে শরবত খাওয়াবে? সেটা যে ভালো বা স্বাস্থ্যকর নয় সেটা জেনে বুঝেও? বালির শরবত খেতে গিয়ে সে ব্যক্তি যে গালিগুলো মনে মনে তার সিনিয়রকে দিয়েছিলেন, তার জুনিয়রও তো তাকে সেই গালিগুলোই দিবে, তাইনা?
সব জায়গা থেকেই আমাদের ভালোটা গ্রহণ করা উচিত আর খারাপটা বাদ দেয়া উচিত। তাহলেই না আস্তে আস্তে সব ভালো ব্যাপারগুলো টিকে থাকবে আর খারাপ ব্যাপারগুলো প্র্যাকটিসের অভাবে তলিয়ে যাবে।
আরেকদল সিনিয়র আছে যারা সবসময় বলে বেড়ায় যে, তারা একাডেমিতে থাকাবস্থায় যে পাঙ্গা খেয়েছে সে তুলনায় তাদের জুনিয়ররা কিছুই খায়নি। এটাও হয়তো ট্রেডিশনাল কথা। সবার কাছেই সবার কষ্ট বড়-এটাই স্বাভাবিক। জাহাজেও সেইম একটা গ্রুপ আছে যারা তাদের জুনিয়র লাইফের কষ্টের কথা, কাজের কথা বলে নিজেকে খুব জাহির করে। আরে তোমরা ক্যাডেট বা জুনিয়র অফিসার হয়ে এটা জানো না/ পারো না অথচ আমি ক্যাডেট বা জুনিয়র অফিসার থাকাবস্থায় ক্যাপ্টেনকে ব্রীজেই আসা লাগতো না বা চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে ইঞ্জিনরুমেই নামা লাগতো না! ঠিক আছে, মানলাম সে অনেক মেধাবী কিন্তু তার মতো তো সবাই না-এটা কেন বুঝে না। কেউ একটা ব্যাপার পাঁচবারে বুঝে কেউ দু’বারে। আপনি একবারে বুঝতে পারেন বলে সবাই যে তেমনটা পারবে-সেটা তো না। আপনার মতো কারো বোধশক্তি নাই বলে তাকে সবার সামনে অপমান-অপদস্থ করার অধিকার আপনি একাডেমি বা প্রফেশনালি সিনিয়র হলেও নেই। শেখানোর জন্য শাসন বা প্রশ্ন এক ধরনের, ছোট করা বা কিছু জানেনা বুঝানোর জন্য করা প্রশ্নগুলো অন্যরকম-যা সবাই অনুধাবন করতে পারে। তাই আপনার একাডেমিক বা প্রফেশনালি যারা জুনিয়র আছে সম্ভব হলে তাদের সাথে আপনার জ্ঞান শেয়ার করুন তাদেরকে শেখানোর জন্য, কিছু জানেনা বলে অপমান করা বা তাদের হীনমন্যতা বাড়ানোর জন্য নয়।
বুঝতে চেষ্টা করুন শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালবাসা আদায় করার বিষয় নয়, অর্জনের বিষয়। আর সেই শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালবাসা অর্জনের জন্য অন্যকেও সমানভাবে শ্রদ্ধা সম্মান আর ভালবাসতে হয়…..
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো-মন্দ বুঝে সেভাবে জীবনযাপনের তৌফিক দান করুন-আমীন।।
আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ (৪৭/ই)
(লেখক: এক্স-ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ৪৭তম ব্যাচ, মেরিনার হিসেবে বিদেশে কর্মরত)
Recent Comments