[নোঙর 2016] কানামাছি ভোঁ ভোঁ যারে পাও তারে ছোঁ : ফারহানা তেহ্সীন
এক
: গতকাল কোথায় ছিলে? আমার তো দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ইদানীং এমন
হয়, তোমার সাথে কথা না হলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
: অক্সিজেন মস্ক পাঠাবো?
: তুমি সশরীরে চলে আসো, তাহলেই হবে।
: একদিন ঠিক চলে আসবো, অপেক্ষা কর।
নীরবতা। অনেকক্ষন। কেয়ার রিপ্লাই কমেন্ট আসছে না।
: কি ব্যাপার তুমি কোথায়? দম বন্ধ হয়ে গেল নাকি তোমার?
: হবে না? বস এসে ঘোরাঘুরি করছিল। মাঝে মধ্যেই চেক দিতে আসে।
: চেক দিতে আসে নাকি তোমাকে দেখতে, ঠিক বলেছি না মাছি?
: হি…. হি…..
: হেসো না সোনা। আচ্ছা তোমার সেল নম্বরটা দাও না। শুধু ফেসবুকে চ্যাট করে আমার তো খায়েশ মিটে না।
: উহু —- এখন নয় … আরো পরে।
: মানে ….. প্রেম আরো গাঢ় হলে তখন দেবে?
: তোমার সাথে আমার প্রেম হল কবে? সবে তো পরিচয় হল ফেসবুকে।
: চিন্তা করো না, প্রেম হতে আর কতক্ষণ! আর ছয় মাস ধরে চ্যাট করছ, ছয় মাস কি কম?
: তুমি দেখি ভীষণ ফাজিল….
: আমাকে আর পুরোপুরি দেখলে কোথায়? দেখতে চাও?
: তোমাকে দেখে কাজ নেই। বদ কোথাকার!
: বদ মানে!!! এখনো দেখেছ কি? আমি একেবারে বদের হাড্ডি। এই হাড্ডি দিয়েই তোমাকে…।
মনিটরের কোণায় লাল ক্রসটা টিপে দিল কেয়া। প্ল্যানিং ম্যানেজার কাঁচের বন্ধ কেবিন থেকে বের হয়েছেন। কেয়াদের অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মটা বেশ সুন্দর। ছোট ছোট কিউবিকলে অফিস কক্ষটা ভাগ করা। অবশ্য সিনিয়রদের কাঁচ ঘেরা কেবিনে বসার ব্যবস্থা। কেয়ার কিউবিকলটি প্ল্যানিং ম্যানেজার শাহেদ খানের কেবিনের ঠিক বিপরীতে। সে মাথা তুললেই শাহেদ খানের সকল গতিবিধি দেখতে পায়। শাহেদ খান পাশ দিয়ে যাবার সময় বরাবরের মত অমায়িক হাসি উপহার দিয়ে গেছেন। কেয়া এত মুগ্ধ হল! পোশাক পরিচ্ছদ, কি ব্যবহার, কি কাজের দক্ষতা, সবকিছুতেই শাহেদ খান অতুলনীয়। কেয়ার ইদানীং এক আধবার মনে হয় কানা কি শাহেদ মত দেখতে? শাহেদ খানের মত লম্বা, হ্যান্ডসাম, অমায়িক আর দুর্দান্ত মেধাবী? একবার যদি কানার সাথে সরাসরি দেখা করা যায় কেমন হয়? সে চাইলেই কানা হয়তো ঠিকানা দেবে কিন্তু তার নিজেরই ভয় হয় জানতে বা দেখা করতে। মানসালোকে বাবার চেহারাটা ভেসে ওঠে।
কানার প্রোফাইলে পারসোনাল ইনফরমেশনে শুধু লেখা আছে ‘ওয়ার্কিং ইন এ প্রাইভেট ফার্ম’। ঢাকা শহরে কত হাজার যে প্রাইভেট ফার্ম আছে। কোনটা যে কানার।
জীবনটা যেন কানা গলি।
কোথায় সে কেমনে বলি।
দুই
অফিস আওয়ারে কানাকে কদাচিৎ অনলাইনে পাওয়া যায়। তবে রাতের বেলা স্বাচ্ছন্দে চ্যাট হয়।
: তুমি কি অন লাইনে নাকি?
: না আমি মাঠে। ফুটবল খেলি।
: গুড…. গুড। ভাল কথা তবে কয়টা গোল দিলে জানাবে।
: গোল আর দিলাম কই….. খেয়েই যাচ্ছি।
: খাও … খাও স্বাস্থের জন্য ভাল।
: তোমার জন্য দুইটা রেখে দিয়েছি। আমি আবার শেয়ার না করে কিছু খাই না।
: জানো গতরাতে লামিয়ার বাসায় দাওয়াত ছিল। তার কথা তোমাকে বলেছিলাম মনে আছে?
: তোমার প্রিয় বান্ধবী, তাই তো? নতুন বিয়ে হয়েছে।
: হুঁ, ওর বরের বাসায় আমাদের কয়েক বান্ধবীকে দাওয়াত করেছিল। হেভি খাওয়া দাওয়া। তোমাকে খুব মিস্ করছিলাম সেই সময়। আজ রাতেও আমার ছোট খালার বাসায় দাওয়াত আছে।
: ইয়া …. আই মিসড দা খাওয়া দাওয়া। আই উইল মিস ইওর খালাস খানাদানা অলসো।
: হা … হা…. জানো কানা, তুমি খুব ভাল লিখতে পারো।
: আমি আরো অনেক কিছু পারি। আস্তে আস্তে জানতে পারবে।
: হুম…..। এখন মনে হয় আমি তোমাকে কিছুটা হলেও চিনছি। আমার একটা ক্ষমতা আছে। আমি খুব দ্রুত মানুষ চিনতে পারি।
: তুমি মানুষ চিনতে পার ভাল কথা। কিন্তু আমি তো মানুষ না। আমি হলাম দানব। তাও আবার কানা। কানা দানব।
: ও …… আমি তাহলে মানুষদের সাথে সাথে দানবদেরও বুঝতে পারি। দেখেছ আমি কত গুণী! এত প্রতিভা যে কোথায় রাখি!!!
: আজকের কোন ডিশে রেখে দিও।
তিন
: অন লাইনে আছ নাকি”
: তোমার কি খবর মাছি? আমি তো কেঁদে মরি… তোমার জন্য ভেবে মরি…..
: ব্যস্ত ব্যস্ত… কাজ আছে। ভাল থেক। বাই……।
চার
: কানামাছি ভোঁ ভোঁ…….
: উ.. তুমি অনলাইনে কানা?
: না, আমি পুকুরে। পুঁটি মাছ ধরি।
: দুই একটা পুঁটি আমার জন্য রেখ। আমার খুব পছন্দের পুঁটি মাছ ফ্রাই। পুঁটি ধরার জন্য কানাকে ধন্যবাদ। কানা কি শুধু পুঁটি ধরে? অন্য কিছু করে না?
: অনেক কিছুই তো করে।
: যেমন?
: চাকরি করে, পুঁটি ধরে আর জালও বুনে, তোমার মত মাছিদের ধরার জন্য হা … হা ….।
: সামটাইমস তোমার কথা শুনে আমার মাথা ধরে যায়। তোমার সাথে চ্যাট শেষ করে উঠে আমাকে নাপা খেতে হয়।
: তুমি বরং এইচ প্লাস খাও, দ্রুত কাজ দেয়।
: ফাজিল। নীরবতা। অনেকক্ষন।
: নীরব কেন? কোই গেলা? পুটি মাছ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলা?
: আমি নাপা আনতে গিয়েছিলাম। তোমার জন্য।
: তুমি একটা ভীষণ ফাজিল। অবশ্য আমিও একটু ফাজিল আছি।
: মিস ফাজিলা খাতুন…. মিস্টার ফাজিলের ভুবনে স্বাগতম।
: বাহ…. ফুল ছাড়াই স্বাগতম জানাচ্ছো?
: না … না… ফুল বানু…. তোমাকে ফুল দিয়েই বরণ করবো। মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী… দেব খোপায় জড়াবো ফুল……।
: বাহ… কবি হয়ে যাচ্ছ দেখছি।
: যাচ্ছি তো। এখন তো অনেক রাত। কবিতা পড়ার প্রহর হয়েছে রাতের নির্জনে। আচ্ছা শোন এখন উঠি, ঘুমাতো যাবো।
কানার চ্যাট বক্সটা নীরব। কালতো সাপ্তাহিক ছুটি। আরেকটু কথা হলে কি হত! কানার বড্ড জলদি ঘুম পেয়ে যায়। ইদানীং কানার সাথে অনেকক্ষণ কথা না হলে ভালই লাগে না। ইচ্ছে করেই নিজের সেল নম্বরটা দিতে চায় নি কেয়অ কখনো। আজকাল ফেসবুকে অনেকে বড় মিথ্যা বুলি আওতায়.. কত কি গোপন করে …. কত দূর্ঘটনা ঘটে, … সেল নম্বর দিয়ে নতুন কোন প্যাচে পড়তে চায় না সে।
আরো কিছু দিন যাক। তারপর দেখা যাবে।
বিবিএ পড়ার সময় থেকে যুদ্ধ করে বিয়েটাকে ঠেকিয়ে আসছে। এরপর এই ফার্মে ইন্টার্নিশিপ। তাও অনুমতি পেতে এক মাস সময় লেগেছিল। অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মে ইন্টারশিপ বাবার পছন্দ নয়। কথা দিতে হয়েছিল…. যার তার সাথে প্রেম নয়, তাদের নির্বাচিত পাত্রের গলায় মালা পরাবে কেয়া।
আচ্ছা …… ফেইবুকে কানার ফ্রেন্ডস লিস্টে তো অনেক নারী পুরুষই আছে। কানা কি অন্য কারোর সাথে এরকম চ্যাট করে ঘন্টার পর ঘন্টা? কেন যে আজকাল শুধু ফেসবুকে কানার নামটা খুজতে থাকে কেয়ার মনটা। চারদিক উথাল পাতাল। আকুল পাথার।
থৈ নাই। থৈ নাই॥
পাঁচ
: দুইদিন অনলাইনে ছিলে না। অসুখ করেছিল নাকি? কি ব্যাপার বলতো। রাগ করেছ নাকি? কোথায় সারাদিন গুম হয়েছিলে মাছি?
: আমি ছিলাম আমার বাড়িতে, তুমি ছিলে কোন হাঁড়িতে?
ছয়
: কি ব্যাপার কেয়া, এত রাতে না ঘুমিয়ে কি করিস ফেসবুকে?
: মশা মারি …… গাধা।
: তুই তো নিজেই একটা মাছি। আচ্ছা কত সুন্দর সুন্দর ছদ্ম নাম ব্যবহার করে মেয়েরা…..। অমুক ফেইরি…. অমুক রোজ…… আরো কত কি? তুই খুঁজে খুঁজে নাম নিলি….. মাছি। অদ্ভুত!
: হুম। তা ঠিক রূপা। নামটা কিম্ভুত শোনায়।
: তোর নাকি ইদানীং কানা নামের কোন একটা ছেলের সাথে দারুণ ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে এফবিতে।সত্যি নাকি?
: তোকে কে বলল?
: লামিয়া বলেছে। অবশ্য তুই নাকি বলতে মানা করেছিলি।
: ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে? দাঁড়া ওকে এক্ষুণি কল দেই।
: মাথা খারাপ? রাত বারোটা বাজে। ওর নতুন বিয়ে হয়েছে জানিস না? এত রাতে ফোন করলে ওর হাজব্যান্ড বিরক্ত হবে না?
: এখুনি ফোন দেব। আর বলব, তোর নাকি প্রেসার হাই? রূপা বলেছে। তাই ফোন দিলাম।
: পায়ে পড়ি, মাফ করে দে। আচ্ছা কানা দেখতে কেমন?
: জানি না তো। প্রোফাইল পিকচার নেই তো। বুঝবো কি করে?
: ও আচ্ছা। প্রোফাইল পিকে তোরও তো ছবি নাই। একটা মাছির ছবি দিয়ে রেখেছিস।
: হু…. কানা নাকি মাছি নামটা দেখেই ইন্টারেষ্টেড হয়ে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। আমাদের নাম দুটো যোগ করলে হয়- কানামাছি। আমারও মজা লেগেছিল। তাই অ্যাড করেছিলাম।
: তো…. এই কানা সাহেব কি করেন?
: কি করে জানি না। তবে ভাত খায়, এটুকু জানি।
: হি…. হি… সত্যি জানিস না? আমি তো শুনলাম তোরা নাকি সারাক্ষণ চ্যাট করিস।
: তোকে কে বলল? লামিয়া? দাঁড়া ওকে ফোন দিচ্ছি…।
: প্লিজ এখন না…. সকালে দিস… আচ্ছা মাফ করে দেনা ভাই……।
সাত
: ম্যাডাম কি করেন আপনি? অন লাইনে?
: আমি ক্রিকেট খেলি। রান নিচ্ছি।
: ক্যামনে রান নিচ্ছ তুমি? আমি না তোমাকে রান আউট করে দিলাম?
: রান আউটের আগের রানটা। যেটা দিয়ে ম্যাচ জিতলাম।
: ওই বলটা তো নো বল ছিল।
: নো বল ছিল কিনা জানি না তবে তুমি একটি হরিবল।
: তোমার কি আজ মন খারাপ?
: জানো, বাসায় আমার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। পাত্রের নাকি গুণের শেষ নেই।
: তা তুমি কি বললে?
: আমি বললাম, এখুনি নয়। আরো কিছুদিন পর। ওরা বলল, ন্যাকা।
: কি! এত বড় সাহস। আমার ন্যাকা মাছির মনে কষ্ট দেয়। কে বলেছে এ কথা তার নাম বল। আজ তার একদিন কি আমার একদিন।
: থ্যাংক ইউ সো মাচ।
: তোমার জন্য কোরাল মাছ।
: আচ্ছা ভাবছি বিয়েটা করে ফেললে কেমন হয়?
: কি বললে!! কানার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে মাছি? কে সেই ভন্ড? কানা তো ছিলাম আগে থেকেই। এখন বুকটাও ছ্যাদা করে দিলে।
কেয়া খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এটা বন্ধুত্ব, নিছক কথার পিঠে কথা নাকি অন্য কিছু? আজকাল কোনটা বন্ধুত্ব কোনটা নয়, কোনটা প্রেম কোনটা প্রেম নয়, কোনটা বল কোনটা নো বল কিছুই ঠাহর করা যায় না। কানা কেন যে এমন! গুণতো আছেই। সাথে রহস্য নিপুণ॥
আট
ক’দিন ধরে অফিসে একটা মৃদু গুঞ্জন। আসছে শুক্রবার শাহেদ খানের আকদ। সবার শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। শাহেদ খান ঠোটে স্থিত হাসি এক ফাকে কেয়াও অভিনন্দন জানিয়ে দিল। লাঞ্চ আওয়ারে সতীর্থদের মাঝে তুমুল আড্ডা। বিসিএসের কোটা ব্যবস্থা, বিপিএলের ম্যাচ ফিক্সিং, যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার, তেতুল বিতর্ক, ছিয়াত্তর বছর পর স্কটিশ অ্যান্ডি মারের উইম্বলডন জয়…. ইত্যাদি ইত্যাদি।
শাহেদ খান কফি মগ হাতে কো- ওয়ার্কারদের পেছনে এস দাড়ালেন। আরিফ ভাই চায়ে কাপ হাতে নীরব শ্রোতা। জানালার পাশে আজম ভাই লাঞ্চের শেষ সিগারেটটায় শেষ টান দিচ্ছেন। একবার চোখাচোখি হল। সুদর্শন টুটুল ভাই ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছেন। আরজু ভাই একটা জোক বলা শুরু করেছেন।
: পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট রূপকথা শুনাচ্ছি। বহু বহু বছর আগের কথা। এক দেশে ছিল এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলেটি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, আমাকে বিয়ে করবে? মেয়েটি বলল না। অতঃপর ছেলেটি সুখে শাস্তিতে জীবন কাটাতে লাগল।
সবাই হাসছে। কো-ওয়ার্কার সবাইকে তার বেশ লাগে। ইন্টার্নি শেষে সে একই অফিসে জুনিয়র পোস্টে জয়েন করেছিল। সবার সাথেই তার সুসম্পর্ক। সবাই যখন হাসছিল-
কেয়া তখন ভাবছিল।
অফিস ছুটির পর শ্রাবণের বিকেলে বিষন্ন মনে রাজপথে নেমে আসে কেয়া। চতুর্দিকে নাগরিক কোলাহল। ঢাকা শহরে কত যুবক! এর মাঝে কোনটা কানা?
নয়
: থাক। তোমাকে অবশেষে অনলাইনে পাওয়া গেল আজ। যা মিস করছিলাম……….।
: রিয়েলি? মোগাম্বো খুশ হুয়া।
: খুব ব্যস্ত ছিলে তাই না? আচ্ছা তোমার কিসের কাজ বলতো কানা?
: কেন গো মাছি?
: আহা বলই না। তোমার অফিসটা কোথায়?
: হবু বরের খোঁজ খবর নিচ্ছ?
: সব সময় ফাজলামো।
: ফাজলামো কেন হবে? একবার ডেকেই দ্যাখ না। সাত সাগর তের নদী পার করে তোমার কাছে চলে আসবো।
: তোমার প্রোফাইলে তো কোন ইনফরমেশনই নেই। আচ্ছা কোন ছবি কেন নেই?
: দূর… ওসব মেয়েদের কাজ। একগাদা সাজবে আর ছবি তুলবে। বাই দা ওয়ে তোমার অ্যাকাউন্টেও কোন ছবি নেই।
: ছিল তবে কয়েক মাস আগে সব ডিলিট করে দিয়েছি। আমার এক ফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। পরে আজেবাজে ছবি দিয়ে তার নামে ফেইক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেই থেকে ভয় পেয়ে গেলাম। সব অ্যালবামগুলো ডিলিট করে দিলাম।
: ভাল করেছ।
: হুম……. আজ সারাদিন খুব ব্যস্ত ছিলে মনে হয়?
: সামান্য। আজ সন্ধ্যার পর পার্টি ছিল। হেভি খাওয়া দাওয়া হল। ছবিও তুলেছিলাম কিছু।
: তাই! তা তোমার ছবি না হোক, একটা খাবারের ছবি তো দিতে পার… দেখি কেমন ভোজন হল। আমার খাবারের ডিশের ছবি দেখতে খুব ভাল লাগে।
: ওকে, নো প্রব, একটা খাবারের ছবি পোষ্ট করছি তোমার ইনবক্সে। দেখে নাও।
কেয়া ইনবক্সে ছবির জন্য অপেক্ষা করে। নোটিফিকেশন দেখে দ্রুত চ্যাট বক্সে মনোযোগ দেয়। বাহ্ দারুণ তো। কি সুন্দর খাবারের ছবি। এক মুহূর্ত! তরপর সময় যেন থমকে দাঁড়াল। পর্বতের মত। নড়ে না। সরে না। এটা যে আজ তাদের অফিসের পার্টির ছবি। এই ডিশগুলোই তো ছিল। সব খাবার এক। হুবহু। এ কি করে হয়! তার মানে কানা তাদের অফিসেরই কোন এমপ্লয়ি? হা ঈশ্বর! এত বড় খেলাটা খেলার জন্য বিধাতা তাকেই নির্বাচন করে রেখেছিলেন।
বুকের ভেতর দাপাদাপি। হার্টবিট বাড়ে। অযথা দ্রুততায়। এক মুহূর্ত দেখে নিল নিজের চারপাশ। ডান, বাম, আগে, পিছে। পার্টি শেষ পেট পুরে খেয়ে দেয়ে অনেকে চলে গেছে, অনেকে অল্প জিরিয়ে নিচ্ছে। কারো হাতে শেষ চুমুকের চায়ের কাপ, কেউ মুঠোফোন ক্ষুদে বার্তা লিখেন ব্যস্ত, কেউ কথনে ব্যস্ত। কারো লাইটারটা এই মুহূর্তে দপ্ করে জ্বলে উঠলো। কেউ হেলমেটটা হাতে নিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেছে। কার কাছে জানতে চাইবে সে কানার কথা। নামটাও এমন! কি যে বিপদ! দ্রুত কী বোর্ড আঙুল চালালো। কেয়া।
: খাওয়া দাওয়া শেষ হল তবে। এখন আর কি করবে?
: হাতের কফিটা শেষ করেই উঠে পড়বো। কার হাতে কফির মগ! উদভ্রান্তের মত নিজের কিউবিকল থেকে চতুর্পাশ লক্ষ্য করে কেয়া। হল জুড়ে এখন একমাত্র একজনই কফিতে চুমুক দিচ্ছে একটু পর পর সামনে ল্যাপটপ নিয়ে। মাথা তুললেই কাঁচের কেবিনে তাকে দেখতে পায় কেয়া। শাহেদ খান।
: আজ কি রংয়ের শার্ট পড়েছ কানা?
: নীল রংয়ের। কেন, বলতো মাছি?
চারদিক নাগরিক কোলাহল। নাগরিক আয়োজন আর ব্যস্ততা। এর মাঝে দিকভ্রান্ত নাবিকের মত রাস্তায় নেমে আসে কেয়া। নীল শার্ট পরনে কফি মগ হাতে কানার অবয়ব অসহ্য অভিজ্ঞতা এক।
দশ
সেদিন মঙ্গলবার ছিল। বুকের ভেতর স্বপ্নগুলো ভাঙছিল।
এগার
বাবা খুব দ্রুত পাত্রপক্ষকে প্রতিশ্রুতি দিতে চায়। কেয়া আর অসম্মতি জানাল না। বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরিরত আবিরকে তার মন্দ লাগে নি। একবার মনে হয়েছিল সে রাতেই কেয়া তার এফবি অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাকটিভ করে ফেলে অথবা ফ্রেন্ড লিষ্ট থেকে কানাকে আনফ্রেন্ড করে দেয়।
পরমুহূর্তে মনে হল থাক না কানা কানার স্থানে। আগের মত দুষ্টমি ভরা তার কথা আর মুহূর্তগুলো কতই না আনন্দঘন। সেও তো আর সত্য পরিচয় কখনো জানায় নি। বোহেমিয়ান স্বপ্নের মত এখন দিনগুলো আর রাতগুলো আবির তো আছেই, আবিরের জায়গায়। মন্দ কি? সেও মাছি হয়ে থাকুক কানার কাছে। মন্দ কি?
—————————————
ফারহানা তেহসিন খান: সহধর্মিণী – আতিক উল আজম খান (২৭) গ্রন্থ প্রকাশ – ১। মধ্য নিশিথের নীল ২। দুরের গাংচিল ৩। কাঞ্চনজঙ্ঘার দেশে । নাট্যকার – ১। মেঘের পড়ে মেঘ (৫ পর্ব) এনটিভি ২। সমর্পণ (২ পর্ব) – এনটিভি ৩। কালদণ্ড, মঞ্চায়িত – হিউসটন, আমেরিকা। লেখালেখি – দৈনিক আজাদি, অনলাইন, যায় যায় দিন, দৈনিক পূর্বকোন, বিভিন্ন ম্যাগাজিন।
Recent Comments