বাংলাদেশের মেরিনারদের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ বাস্তবতা : মাহমুদুর রহমান (৩২তম)
আপনাদের হয়ত সবার মনে আছে নব্বই এর দশকে “যায় যায় দিন” সাপ্তাহিক পত্রিকায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল বারী স্যারের “নীল চোখ” নামে একটি লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। তখন উনার এই লেখাটি আমার কাছে এতই প্রিয় ছিল যে, শুধু “নীল চোখ” পড়ার জন্যই আমি সপ্তাহ ধরে অধীর হয়ে থাকতাম। উনার এই লেখা গুলো তখন আমাকে এতটাই উদ্বেলিত আর মুগ্ধ করেছিল যে, এক সময় সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললাম- “মেরিনার হবো”।
আমার মত হয়ত অনেকেই বারী স্যারের “নীল চোখ” গড়ে “নীল চোখের“ সন্ধানেই মেরিনার হয়েছেন।
আর এখন বারী স্যারের “নীল চোখ” নেই কিন্তু আছে চোখ ধাঁধাঁনো মিথ্যা স্বপ্নের রঙ্গিন বিজ্ঞাপন। মাত্র ৬ বছরেই একজন ক্যাপ্টেন/ চীফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আপনিও মাসে আয় করতে পারবেন ৮০০০- ১০,০০০ ডলার……. ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বারী স্যারের “নীল চোখের” সেই চমকপ্রদ কাহিনী অথবা বর্তমান সময়ের কাল্পনিক মিথ্যাচার বিজ্ঞাপন নিয়েও কোন কথা লিখতে চাই না। মেরিনারদের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে জীবনের বাস্তবতার নিরিখে কিছু বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতে চাই- যা থেকে অভিজ্ঞতা বা আইডিয়া নিয়ে ফ্রেশ চীফ ইঞ্জিনিয়ার/ মাষ্টার থেকে শুরু করে জুনিয়র ক্যাডেট পর্যন্ত সবাই তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের একটা বাস্তব ছক বা কর্ম পরিচালনা করে এগুতে পারে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং দেশের প্রধান দুটি সমুদ্্র বন্দর দিয়ে সিংহভাগ আমদানী রপ্তানী সম্পন্ন হলেও মেরিন সেক্টর সব সময় অবহেলিত ছিল এখনও অবহেলিত। আগে শুধুমাত্র মেরিন একাডেমী থেকে ক্যাডেট বের হতো ৪০/৫০/৬০ এর বাইরে সারা বছর ধরে হয়ত সর্বোচ্চ ১০/২০ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি বা কখনও তার চেয়ে কম প্রত্যক্ষ প্রবেশ ক্যাডেট বের হতো। সরকারী এবং বেসরকারী জাহাজ মিলে এই সংখ্যার সবাই মোটামুটি চাকুরী পেয়ে যেতো। ২০০৫/ ২০০৬ থেকে ২০১৩/২০১৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের মেরিন সেক্টরে সবচেয়ে ভাল সময় ছিল। এ সময় সরকারী/ বেসরকারী মিলে সর্বোচ্চ ৭২/৭৮ বিদেশগামী জাহাজ ছিল। এ সময় সরকারী মেরিন একাডেমীর ক্যাডেট আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় এবং ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই একে একে ১৮টি বেসরকারী প্রাইভেট একাডেমীর অনুমোদন দেওয়া হয়।
যাই হোক, এগুলো এখন স্বপ্নের কথা। একজন চাকুরীপ্রার্থী জুনিয়রের দীর্ঘশ্বাস দিয়ে আবার অবাস্তবতায় ফিরে আসি। সেদিন “মেরিনারদের আড্ডা”-তে চতুর্থ প্রকৌশলী ৪৭ তম ব্যাচের মারুফের একটা পোষ্ট খুব মনের মধ্যে দাগ কাটলো- পোষ্টটি ছিল- “সিওসি পাওয়ার পর ১৩ মাস ট্যাংকার শীপে চাকুরী করে এখন ৮ মাস বসে আছি” জানি- একদিন এই অপেক্ষার শেষ হবে চাকুরীও একদিন পাবো।
আসলে মারুফের এই ছোট পোষ্টের মধ্যে তার মনের সমস্ত কষ্ট এবং হাহাকার থেকে বর্তমান জুনিয়রদের চাকুরীর অবস্থা কতটা খারাপ তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। বাংলাদেশের সরকারী এবং বেসরকারী জাহাজের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে যাওয়ায় মেরিনাররা সবাই এখন অপেক্ষা করছে বিদেশী জাহাজে যোগদানের জন্য। বিদেশী জাহাজে যোগদানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের ভিসা সমস্যা। যার কারণে অনেক বিদেশী কোম্পানী ভাল বেতনে বাংলাদেশের মেরিনারদেরকে চাকুরীতে যোগদানের সুযোগ দিলেও ভিসা সমস্যার কারণে তারা বিদেশগামী জাহাজে যোগদান করতে পারছেনা।
দ্বিতীয়তঃ
দু একটি এজেন্ট বাদে অধিকাংশ এজেন্টই সাব এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাব হিসাবে কাজ করে। সাব এজেন্টদের কাছে টপ ফোর ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ক্যাডেট / / 3rd Officer/ 4th Engineer এসব ব্যাংকের তেমন কোন Requirement থাকেনা।
আবার বিদেশী কোম্পানীতে জয়েন করতে হলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চীফ অফিসার বা দ্বিতীয় প্রকৌশলী হতে হবে। কাজেই, ক্যাডেট / 3rd Officer/ 4th Engineer এসব র্যাংক পার করেই তবে তো চীফ অফিসার হতে হবে।
কাজেই এটা পরিষ্কার যে, এই সমস্ত জুনিয়র র্যাংক পাড়ি দিতে প্রয়োজন বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজ। এখন আপনারাই বলেন, মার্কেটে এখন যে পরিমাণ ক্যাডেট/ 3rd officer / 2nd officer অপেক্ষমান আছে সেই তুলনায় বাংলাদেশী জাহাজের সংখ্যা অতি নগন্য। কাজেই অপেক্ষমান এই বিপুল সংখ্যক ক্যাডেট / 3rd Officer/ 4th Engineer চাকুরী পাবে কবে, কিভাবে?
মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কিছু ক্যাডেট / 3rd Officer/ 4th Engineer ইত্যাদি র্যাংক ফরেন কোম্পানীতে যোগদান করছে কিন্তু এই নগন্য সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে একটা ছেলে কিভাবে এটাকে ক্যারিয়ার হিসাবে নেবে-সেটা অবশ্যই প্রশ্ন সাপেক্ষ।
কাজেই আমার ধারণা, বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা না বাড়লে বর্তমান অসংখ্য ক্যাডেট / 3rd Officer/ 4th Engineer এই সব র্যাংকের চাকুরীর সমস্যার সমাধান হবেনা। হওয়া সম্ভব নয়-এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এবার আসুন “মেরিন প্রফেশন” হিসেবে কেমন সেটা আলোচনা করি।
“মেরিন প্রফেশন” বর্তমানে মিডল এজ্ড প্রফেশন হিসাবে বিবেচিত।
মিডল এজ্ড প্রফেশনঃ ২৮/৩০ থেকে ৫০/৫৫) বছরঃ মিডল এজ্ড প্রফেশন হল, আপনি অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে অনেক কষ্টে চীফ অফিসার হলেন- এতে আপনার বয়স হয়ে গেল ২৬/৩০ বছর। এরপর, আপনি বিয়েশাদী করলেন, ছেলে মেয়ে হল- এখন অনেক ফরেন কোম্পানী ৫০/৫৫ বছরের উর্দ্ধে মাষ্টার/ চীফ ইঞ্জিনিয়ার র্যাংকে চাকুরী দেয়না। এমনকি দেশীয় কোম্পানী এস.আর শিপিং ও শুনেছি এই নিয়ম চালু করেছে। তার মানে আপনার সর্বমোট চাকুরীকাল ৩০ থেকে ৫০/৫৫ বছর ধরলাম আপনার বয়স এখন ৫০/৫৫ বছর আপনাকে আর বিদেশী কোম্পানী চাকুরীতে নিচ্ছে না- এই বয়সে আপনার ছেলে মেয়েও কর্মজীবনে প্রবেশ করেনি- তাহলে এখন আপনার সংসার চলবে কিভাবে? অথচ চাকুরীর জন্য আপনার কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা আছে। বলবেন যে Shore Job করবো।
চলুন বাংলাদেশে মেরিনারদের Shore Job এর বাস্তবতা একটু দেখে নেওয়া যাক।
“মেরিটাম সংবাদ” নিয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরী করতে গিয়ে বাংলাদেশী মেরিনারদের অত্যন্ত করুণ এবং ভয়াবহ চিত্র আমার সামনে চলে এসেছে- যেটা আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই।
(১) বাংলাদেশে মেরিন চীফ ইঞ্জিনিয়ারদের Land Job power plant sector এ কিছু Job আছে। কিন্তু সেটাও এখন আর তেমন চাইলেই পাওয়া যাচ্ছেনা। তাহলে, আপনারা যারা আজ থেকে ৮/১০ বছর পরে চীফ ইঞ্জিনিয়ার হবেন- তখন যে আপনারা এই সেক্টরে আর কোন Job পাবেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
(২) ক্যাপ্টেন বা মাষ্টার মেরিনারদের Land Job এর তেমন সুযোগ নেই। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে মাষ্টার/চীফ ইঞ্জিনিয়ারদের কিছু সংখ্যক পদ আছে। কিন্তু প্রার্থীর তুলনায় সে পদের সংখ্যা অতি নগণ্য। আর ৮/১০ বছর পরে আপনারা যখন ঐসব পদের চেষ্টা করবেন তখন ঐ পদগুলো ফিল আপ থাকবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
অনেক দুরে যাওয়া লাগবে না, আমি নিজেই সরকারী চাকুরীর সমস্ত যোগ্যতা সম্পন্ন করে অপেক্ষমান আছি বিগত ৪ বছর ধরে। কিন্তু আমি এখন বিজ্ঞপ্তির আশায় আছি। জানিনা কবে বিজ্ঞপ্তি পাবো বা আদৌ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। বাংলাদেশের এটাই একমাত্র সেক্টর যেখানে বছরের পর বছর চাকুরীর কোন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়না। বছরের পর বছর পদ খালী থাকে তারপরও কোন বিজ্ঞপ্তি আসেনা।
আপনারা সবাই জানেন, প্রশাসন ক্যাডারে সচিব থেকে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীতে লেঃ জেনারেল থেকে জেনারেল করা হয়েছে পুলিশ বাহিনীতে আইজিপির মর্যাদা সেনাবাহিনীর জেনারেলের সমান মর্যাদার সমান করা হয়েছে। আমার এ কথা বলার উদ্দেশ্য হল-কোন সেক্টরে যখন পদ মর্যাদা বাড়ানো হয় তখন ঐ সেক্টরে স্বাভাবিকভাবে পদের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন ঐ সেক্টরে লোকবল অনেক বাড়ানো হয়। সেই বাস্তবতায় মেরিটাইম সেক্টর এখানে একটি চরম অবহেলিত সেক্টর। শুধু তাই নয় নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধের কারণে মেরিনারদের কাছ থেকে মহাপরিচালক, বন্দর চেয়ারম্যান, মেম্বার মেরিন ইত্যাদি উচ্চ পদগুলো হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন সক্রিয় থাকাকালে সরকারী চাকুরীতে মেরিনারদের অবাধ প্রবেশ খুবই সহজ ছিল এখন সেটা রূঢ় বাস্তবতা, এখন সেটা শুধুই স্বল্প। তার মানে বোঝা গেল সরকারী চাকুরীতে ভবিষ্যৎ মেরিনারদের প্রবেশের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।
(৩) বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজ বেশী না থাকায় মেরিন সুপার/ টেকনিক্যাল সুপার এই পদেও ভ্যাকেন্সি নেই।
(৪) বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় মেরিন চীফ ইঞ্জিনিয়ারা যারা ওয়ার্কশপ, শিপ রিপেয়ার, স্পেয়ার পার্টস সাপ্লাই এর ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাদের অবস্থাও এখন চরম খারাপ। বলা যায়, ব্যবসায় লালবাতি জ্বলছে।
(৫) মেরিন সার্ভেঃ বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজ না থাকায় বিভিন্ন সার্ভে কোম্পানী যেমন: : DNV-GL, BV, ABS G2 আরও যেসব ক্লাস সার্ভে কোম্পানী আছে বাংলাদেশে তাদের জনবল কমিয়ে দিয়েছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাহলে এই সেক্টরে যেসব সিনিয়র মেরিনাররা কর্মরত আছেন তাদেরও ভবিষ্যতে চাকুরীহীন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আপনারা হয়ত জেনে অবাক হবেন যে, আপনাদের যেমন জব নেই অনেক সিনিয়র মেরিনার যাদের বয়স ৫৫ এর উর্দ্ধে তাদেরও জব নেই। যেহেতু বিদশেী কোম্পানীগুলো ৫৫ এর উর্দ্ধে বয়সের কাউকে চাকুরী দেয় না।
কাজেই বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা না বাড়ালে জুনিয়র মেরনিারদের যেমন চাকুরীর বাজার ভাল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তেমনি সিনিয়র মেরিনারদের সামনে অনেক খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।
আর আজকে আপনারা যেমন ৮/১০ বছর পওে শোর জব এর চেষ্টা করবেন শোর জব কিভাবে পাবেন? আদৌ কি সম্ভব?
আপনাদেরকে আর একটা বিষয় জানিয়ে রাখি- আমি একজন মেরিন সার্ভেয়ার হিসাবে দেশে ছুটিতে থাকাকালীন বিভিন্ন দেশীয় বড় বড় কোম্পানীর যেমন আবুল খায়ের গ্রুপ, ভ্যানগার্ড, মেঘনা গ্রুপ, তীর গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ইত্যাদি গ্রুপের ভাড়া করা জাহাজে সার্ভে করতে যায় তখন কথা প্রসঙ্গে এসব কোম্পানীর উর্দ্ধতন ব্যক্তিদের সাথেও কথা হয়। কৌতুহল বশত তাদের কাছে জানতে চায়, এসব কোম্পানী আরও জাহাজ কিনবে কি না।
জবাবে উনারা বলেন- জাহাজ কেনার সম্ভাবনা তেমন নেই- কারণ মালিকেরা কম টাকায় নতুন নতুন জাহাজ ভাড়া করে দ্রুত এবং নির্বিঘ্নে মাল আনাতে পারছেন এবং ঝামেলা মুক্তভাবে মালামাল দ্রুত খালাস করতে পারছেন।
কাজেই আপনারা বুঝতে পারছেন- বিএসসির জাহাজ কেনার সম্ভবনা কম আর প্রাইভেট সেক্টরে যাদ জাহাজের সংখ্যা না বাড়ে তাহলে মেরিন সেক্টরের উন্নতির আশা করাটা সম্পূর্ণ অবাস্তব, অকাল্পনিক চিন্তা।
আপনাদের প্রশ্ন ও উত্তরঃ
(১) অনেকেই হয়তো বলবেন সারা বিশ্বে শিপিং সেক্টরে অনেক ভ্যাকেন্সী আছে শূন্যতা আছে, তহালে আমরা কেন জব পাচ্ছি না?
উত্তর: সারা বিশ্বেও শিপিং সেক্টরে শূণ্যতা আছে। আমিও আপনাদের সাথে একমত। আমরা জব পাচ্ছি মূলত দুটি করাণে —
(ক) হক এন্ড সন্স বাদে অন্যান্য ম্যানিং কোম্পানীগুলোর ডাইরেক্ট স্যানিং নেই। তারা সবাই সাব ম্যানিং হিসাবে কাজ করে।
টি.এম.এ. চালু হওয়ার আগে হক এন্ড সন্স নিজেই মেরীর একাডেমীর ক্যাডেট/তৃতীয় অফিসার ইত্যাদি জুনিয়র ব্যংাকে চাকুরী দিতো। এখন তাদের নিজেদের একাডেমী থাকায় মেরিন একাডেমীর জুনিয়রগন চাকুরী পাচ্ছে একই সাভাবিক।
বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজ না থাকলে বিদেশী জাহাজের উপর নির্ভর করে জুনিয়র ব্যাংক চাকুরী পাওয়া এক রকম অসম্ভব।
দ্বিতীয়তঃ ভিসা সমস্যা
তাই সারা বিশ্বে শিপিং সেক্টরে চাকুরীর শূণ্যতা থাকলেও আমাদের জুনিয়রদের চাকুরীর বাজার ভাল হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।
প্রশ্ন- ২ঃ আপনারা হয়ত বলতে পারেন “মেরিন একটা Royal প্রফেশন” অথব আপনি সবকিছুতেই Negative চিন্তা করছেন?
উত্তরঃ মেরিন আগেও যেমন Royal প্রফেশন ছিল এখনও Royal প্রফেশন। কিন্তু আমাদের দেশের মেরিটাইম সেক্টর ডেভেলপমেন্ট না হওয়ায় এত অধিক সংখ্যক মেরিনারের জন্য এটা Royal প্রফেশন নয়।
আপনাদের একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই- চীনে শত শত শীপইয়ার্ড আছে, ড্রাইডক আছে, শীপ রিপেয়ার ওয়ার্কশপ আছে, শত শত পোর্ট আছে। সেখানে তাই মেরিনারদের প্রচুর জবের সুযোগ আছে। আমাদের দেশে মেরিটাইম সেক্টরে কি আছে? শুধুমাত্র ২টি পোর্ট ও একটি মাত্র ড্রাইডক পোর্ট এবং ড্রাইডকের অধিকাংশ পোর্টগুলো আবার নেভীদের দখলে। তাহলে সিনিয়র মেরিনারদের চাকুরী সুযোগ কোথায়? আর প্রাইভেট ডকইয়ার্ড, শীপইয়ার্ড ওয়ার্কশপ তো প্রায় বাদ হওয়ার পথে। তাহলে মেরিন চাকুরীর সুযোগ কোথায়?
প্রশ্ন-৩ঃ অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন-সিনিয়র মেরিনাররা কি বাস্তব জীবনে কেউই সফল নন?
উত্তরঃ অবশ্যই অনেকে সফল। তবে এখনকার বাস্তবতা আর আগের বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। আগে মেরিনার ছিল খুবই কম। মেরিটাইম সেক্টর ছিল পুরোটাই খালি। তখন মেরিটাইম সেক্টরের বড় বড় পদগুলোতে নেভী ছিলনা, তখন মেরিটাইম সেক্টরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মেরিনারদের হাতেই ছিল। এখন মেরিনার বেশী পদ মোটেও খালী নেই। আর, পদ খালী থাকলেও বছরের পর বছর কোন বিজ্ঞপ্তি নেই। তাহলে, চাকুরীর সুযোগ কোথায়? তবে এটা দুঃখজনক হলেও সত্য- আগের মেরিনারদের মধ্যেও সবাই ক্যাপ্টেন এফ.আর. চৌধুরী হতে পারেন নি, সবাই ড. সাজিদ হোসেন হতে পারেন নি, ক্যাপ্টেন আজিজুল হকও ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান হতে পারেন নি। অনেক সিনিয়র মেরিনারগণের অনেকেই কিন্তু অতি সাধারণ জীবন-যাপন করেন।
প্রশ্ন-৪ঃ BMRT-তে অনেক জুনিয়র মেরিনাররা প্রায়ই একটা কথা বলে সংগ্রাম করে জীবন চালাবো। এ কথাটা আসলে কতটুকু বাস্তব সম্মত?
উত্তরঃ এ কথাটা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট মোটেও বাস্তবসম্মত কথা নয়। আমি আপনাদেরকে একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই- আমার এক আত্মীয়কে অনেক চেষ্টা তদ্বির করে এস.আর. জাহাজে ৪র্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জয়েন করালাম। ৬ মাস পরে জাহাজ দেশে আসলো তাকে সাইন অফ করিয়ে দিলো। এখন তাকে আবার জাহাজে উঠতে গেলে তদ্বির করতে হবে। এভাবে প্রতিবার জাহাজে উঠার সময় কি তদ্বির করে জাহাজে উঠানো সম্ভব? অন্য প্রফেশনের ক্ষেত্রে চিন্তা করেন- একবার তদ্বির করে টাকা পয়সা খরচ করে চাকুরীতে জযেন করাতে পারলে মোটামুটি সে একটা স্থিতিশীল জীবন যাপন করতে পারবে।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মেরিনারদের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল জীবন-যাপন করা প্রায় অসম্ভব। BMRT-তে আমার একটা পোষ্টের কমেন্টে আরেফিন নামে একজন জুনিয়র খুব সুন্দরভাবে লিখেছে- “সিঙ্গেল থাকলে লম্বা সময় চাকুরীহীন থাকলেও তেমন একটা সমস্যা হয় না। বরং বাবরুল ইসলাম রাতুলের মত বান্ধবীর টাকায় ঘোরা এবং রেষ্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করেও সময় কাটানো যায়। কিন্তু অন্য একটা মানুষের দায়িত্ব নিয়ে বেকার জীবন কাটানো যাবে না। নয়তো ভবিষ্য বাংলা সিনেমানর জসীম এর মত সংসারে অশান্তি লেগেই থাকবে। সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চার দুধ কেনার টাকা থাকবে না, ঈদে সেমাই কেনার টাকা থাকবে না, বাড়িওয়ালা প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়ার জন্য দরজার সামনে অপমান করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে কথা গুলো বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় অনেক কঠিন সত্যি।
প্রশ্ন-৫ঃ অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন- আস্তে আস্তে এই অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
উত্তরঃ বাংলাদেশী মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলে এই জব সমস্যার আশু সমাধান হবেনা- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কোন কোন ক্ষেত্রে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
যেমনঃ এখন সার্টিফিকেট বিহীন বেকার ক্যাডেটের সংখ্যা বেশী। মেরিন একাডেমীসহ অন্যান্য প্রাইভেট একাডেমী ক্যাডেট সংখ্যা কমালেও এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে না। তখন দেখা যাবে সার্টিফিকেটধারা বেকার মেরিনারদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, বাংলাদেশের মেরিন সেক্টর এত অধিক সংখ্যক। বেকার মেরিনারদের কর্মসংস্থানের উপযুক্ত নয়। অনেক বাস্তব এবং অপ্রিয় সত্য কথা লেখার জন্য আমি সিনিয়র মেরিনারদের কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
এবার আসুন, এই সমস্যাগুলোর সমাধানের ব্যাপারে কি উদ্দ্যেগ নেওয়া যেতে পারে?
প্রথমতঃ মেরিন একাডেমীর ৪৯, ৫০, ৫১ ব্যাচ এবং এদের সমসাময়ীক অন্যান্য প্রাইভেট একাডেমী এবং ফিশারিজের যারা আছেন-সবাই মিলে ৬ষ্ট ব্যাচের আলী আশরাফ নুর স্যার এবং আমার সাথে সমন্বয় সাধন করে কিভাবে? BSMRMU থেকে ৪ বছরের অনার্স ডিগ্রী নেওয়া যায় সেই চেষ্টা করা। এদের মধ্যে যাদের পারিবারিক সাপোর্ট বা পারিবারিক স্বচ্ছলতা আছে তাদের অন্য দিকে না তাকিয়ে ব্র্যাক ইউনিভাসির্টিতে এল,এল,বি বা অন্য পছন্দ মত বিষয়ে অনার্স এবং মাষ্টার্স/ এম.বি.এ করে বি.সি.এস বা অন্য প্রাইভেট চাকুরীর চেষ্টা কর। তবে আমার অনুরোধ থাকবে Law-তে অনার্স করা যাতে মেরিনের মত এক ধাপ্পাবাজীর সাবজেক্ট বাদ দিয়ে ভাল কিছুতে পড়া, কিংবা সি.এস.ই না পড়া। Law-এর কথা এ কারণে বললাম- ব্যারিষ্টার/ এডভোকেট হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগলেও এই প্রফেশনে ডাক্তারদের মত সারাজীবন ইনকামের সুযোগ আছে।
দ্বিতীয়তঃ মেরিন একাডেমীর ৪৭, ৪৮, ৪৯ ব্যাচের যারা ইতিমধ্যে ১ বছরের সী টাইম সম্পন্ন করেছে-তারা সহজেই এম.বি.এ-তে ভর্তি হয়ে যেতে পারবে। দুই বছর পরে এম.বি.এ. কমপ্লিট করে সহহজেই বিসিএস সহ সকল প্রাইভেট চাকুরীর দরজা আপনার জন্য খোলা থাকবে।
আবার ও বলছি- ক্লাস 3 এর পেছনে অনর্থক না ছুটে প্রয়োজন বোধ ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে টিউশনি করে এম.বি.এ শেষ করেন আপনাদের জন্য বিসিএস সহ সকল চাকুরীর দরজা খোলা থাকবে। মেরিনের লাখ টাকার মিথ্যা স্বপ্নের পিছনে না ছুটে প্রাইভেট চাকুরীর ৩০/৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটা সহজ স্থিতিশীল জীবন গড়ে তুলুন।
আমি আবার ও বলছি মেরিনের চাকুরীর সেই ভাল দিন আর নেই। কবে যে সুদিন আবার আসবে সেটা স্পষ্ট করে বলা যায় না। জীবনের সঠিক বাস্তাবতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তৃতীয়তঃ মেরিন একাডেমী ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬ এবং এদের সমসাময়িক ফিশারিজ ও প্রাইভেট একাডেমীর যারা আছেন তাদের আর প্রফেশন ছাড়ার জন্য আমি বলবো না। তাদেরকে কষ্ট করে হলেও এই মেরিন প্রফেশনকে থাকতে হবে।
আপনাদের কাজ হবে পরিবারে টাকা যথা সম্ভব কম খরচ করে সিওসি পরীক্ষাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা ডেক ও ইঞ্জিনের ক্লাস-১ সম্ভব হলে সিঙ্গাপুরে দেওয়া।
সিঙ্গাপুরে শোর জব এর স্কোপ অনেক বেশী আছে। সিঙ্গাপুরের সার্টিফিকেট থাকলে এবং টেংকার জাহাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সিঙ্গাপুরে শোর জব পাওয়ার সুযোগ আছে। এ কারণে যে করেই হোক ট্যাংকার জাহাজে সী-টাইম করার চেষ্টা করেন।
চতুর্থতঃ মেরিন একাডেমীর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ এবং সমসাময়ীক অন্যান্য ফিশারিজের যারা ইতিমধ্যে ক্লাস-১ সম্পন্ন করেছেন বা করতে যাচ্ছেন চেষ্টার করবেন দেশের বাইরে সেটেল হওয়ার। চেষ্টা করতে পারেন সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া অষ্ট্রেলিয়া, ইউকে, কানাডা, ইউএসএ, মধ্যপ্রাচ্য এই দেশগুলোতে আমাদের একাডেমীর অনেক সিনিয়র কর্মরত আছেন। যে দেশে যাওয়ার ইচ্ছা করবেন সেই দেশের সিওসি ক্লাস-১ নিতে পারলে শোর জব এর ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। সম্ভব হলে ট্যাংকার শীপে চাকুরীর চেষ্টা করবেন। তাহলে সহজেই টেকনিক্যাল সেইলর এর জব পেয়ে যেতে পারবেন।
পঞ্চমতঃ মেরিন একাডেমী ফিশারিজ, ডাইরেক্ট এন্ট্রি, প্রাইভেট একাডেমী এসব ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন বাদ দিয়ে সব গ্রুপের প্রতিনিধি নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা। যেন বাংলাদেশের মেরিনারদের ভিসা সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান সম্ভব হয়।
৬ষ্ঠঃ মেরিন একাডেমী, ফিশারিজ, ডাইরেক্ট, প্রাইভেট একাডেমী সব ধরনের মেরিনারদের নিয়ে একজন নিরপেক্ষ ও কমিউনিটি ফিলিংস আছে এমন কোন ব্যক্তি/ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সার্বজনীন “মেরিনার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড” চালু করা যা থেকে যে কোন মেরিনারকে তার আপদকালীন সময়ে তার/ তার পরিবারকে সামাজিকভাবে টিকে থাকার মত সহায়তা করা যায়।
মেরিনারদের সামাজিক নিরপেক্ষতার বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত। এ বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন
সপ্তমঃ একটি শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম গড়ে তোলা। যার মাধ্যমে আমরা মেরিন সেক্টরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে মেরিন সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারবো। এছাড়া এটা সিনিয়র ও জুনিয়র মেরিনারদের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।
অষ্টমঃ সমন্বিতভাবে ফেক CDC, COC বন্ধের চেষ্টা করা। তাহলে অরিজিনাল মেরিনাররা চাকুরী পাবেন।
আমি জানি, মেরিন একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রাইভেট একাডেমী এবং ফিশারিজের সমস্ত জুনিয়র মেরিনাররা যখন একটি চাকুরী বা মেরিন সেক্টরের উন্নয়নের একটা ভাল খবরের আশায় স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে, আশায় বুক বেঁধে আছে এমনি একটি সময়ে আমার এমন একটি ভিন্নধর্মী লেখা পড়ে তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
শুধু তাই নয়, চমৎকার বিজ্ঞাপনের গোলক ধাঁধায় পড়ে যে সব মেরিনার ইতিমধ্যে জীবনের কিছু সময় এই লাইনে পার করে ফেলেছে তারা আমার এ লেখাটি পড়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে- এমনটাই হয়ত স্বাভাবিক।
আমি জানি, আমাদের আজকের এই অবস্থান জন্য আপনারা ততটা দায়ী নং বরং তার চেয়েও আরও বেশী ও দায়ী ইংল্যান্ডে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ মাতৃকার সেবা দিতে আসা শাহ মেরিটাইম এন্ড বিজনেস সেন্টার নামক মহাসেবাশ্রম খুলে সেবার নামে শত শত মেধাবী ছেলেদেরকে নিশ্চিত অন্ধকার পথে ঠেলে দিয়েছে এর জন্য দায়ী আমরা, আমাদের কিছু সিনিয়র স্বার্থান্বেষী। আমাদেরই মত কোন বিবেকহীন স্বার্থান্বেষী সিনি্য়র ওদের সদা ভুল স্বপ্ন দেখিয়ে এই গভীর মাঝ সমুদ্রে এনে ছেড়ে দিয়েছে-ওদের আর দোষ কি?
আবারও একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- বাংলাদেশী সেক্টরে বাংলাদেশী জাহাজের সংখ্যা না বাড়লে জুনিয়র মেরিনারদের এই জব ক্রাইসিসের আশু সমাধান সম্ভব নয় …… তাতে সে ফরমুলাই আবিষ্কার করুক না কেন।
আমার জানা তথ্য মতে, ইন্ডিয়া এবং ফিলিপাইন্স যে দুটি দেশ থেকে ডাইরেক্ট ম্যানিং হয় সেখানেই শত শত ক্যাডেট/ জুনিয়র মেরিনার এখন চাকুরী পাচ্ছে না। সেখানে সাব ম্যানিং হিসাবে আমাদের দেশের ক্যাডেট/ জুনিয়র মেরিনাররা চাকুরী পাবে কিভাবে?
তাই যারা এখন মহাসমুদ্রের তীরে আছেন কিনারা দেখতে পাচ্ছেন- সময় নষ্ট না করে গভীর মাঝ সমুদ্রের দিকে না এগিয়ে নিরাপদভাবে কিনারায় উঠে নিশ্চিত জীবন-যাপন করাই শ্রেয়। আর তা না হলে, আজ থেকে কিছু বছর পরে “মেরিন” নামক মাঝ সমুদ্রে গিয়ে কিনারায় আর কোন সন্ধান খুঁজে পাবেন না। তখন আমার আজকের লেখাটির কথা মনে পড়লেই আপনার হাতে সমাধান আর থাকবেনা।
এতক্ষনে হয়ত ভাবতে পারেন আপনার/ আপনাদের নিয়ে আমার এত মাথা ব্যাথা কেন/ দুঃশ্চিন্তা কেন? আমরা মাঝ সমুদ্রে ডুবে গেলেই বা আপনার কি লাভ বা ক্ষতি? এর মাঝে বলছি BMRT-তে জুনিয়রদের বিভিন্ন পোষ্ট পড়ি তখন তাদের হাহাকার আর হতাশাজনক কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
কারণ একটাই, সিনিয়র মেরিনারগণ মেরিন সমাজের বিবেক, মেরিনারদের পথ-প্রদর্শক। তারাই জুনিয়র মেরিনারদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করতে পারে। তবে, আর যাই ভাবুন না কেন আমি অন্তত আপনাদেরকে নিয়ে ব্যবসার কথা ভাবছিনা।
একজন মেরিনার হিসাবে আমি জানি, প্রতিটি মেরিনারের জীবনের সাথে লুকিয়ে থাকে এক বুক চাপা কান্না, না পাওয়ার বেদনাম অনেক কষ্ট, অনেক অপেক্ষা। তাই ব্যবসা করতে হলে অসহায় মেরিনারদেরকে নিয়ে কেন? আপনার অর্থ থাকলে ব্যবসা করার হাজারটা পথ আপনার সামনে খোলা আছে। আপনি কি জানেন, প্রতিটি মেরিনারের চোখের পানি, দীর্ঘশ্বাস আপনার জীবনে অভিশাপ হয়ে আসবে। তাই প্রতিটি লেবেলের জুনিয়রের কাছে আমার উপদেশ ২/৩ বছর কষ্ট করেছেন/ আরও ২/৩ বছর কষ্ট করে টিউশনি কওে হলেও অন্য লাইনে গিয়ে নিজের একটি নিশ্চিত স্থিতিশীল জীবনের কথা চিন্তা করার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। কোন রকম দ্বিধাগ্রস্ত আর হতাশায় না ডুবে বিশেষ করে ৪৯/৫০/৫১ ব্যাচের এবং এদের সমসাময়িক প্রাইভেট+ ফিশারিজের যারা আছেন এখনই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য প্রফেশনে চলে যাওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। একজন সিনিয়র মেরিনার হিসাবে এ ধরনের হতাশাজনক কথা লেখা যদিও আমার কখনই উচিৎ নয়- কিন্তু শুধুমাত্র বাস্তব অভিজ্ঞতা আর বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই কথাগুলো লিখেছি। কারণ জীবনের বাস্তবতা যত কঠিনই হউক না কেন, তাকে মেনে নিতেই হবে।
(লেখাটি দীর্ঘ হওয়াতে কিছু টাইপগত ভুল থেকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্মানীত পাঠকের সুদৃষ্টিই প্রত্যাশিত)
Link: Published on 4 May 2016 www.poriborton.com
———————-
লেখকঃ
ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুর রহমান (B.M.A-32nd Batch)
চীফ ইঞ্জিনিয়ার এন্ড মেরিন সার্ভেয়ার
প্রধান সম্পাদক, মেরিটাইম সংবাদ
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭৩৩-৬২৫৯০১. Email: mahmud32nd@gmail.com
=========================================================
প্রিয় মাহমুদুর রহমান ,
বর্তমান সময় ও বাস্তবতার আলোকে তোমার লেখাটি খুবই সুন্দর ও সময়োপযোগী হয়েছে । কিছুদিন আগে জিয়াদ নামক একটি বালক পাইপের চিপায় পড়ে জীবন দিয়েছিল । সারা দেশবাসীর করুণ আকুতি জিয়াদকে সেই চিপা পাইপ থেকে উদ্ধার করতে পারে নি ।
মেরিটাইম সেক্টর এর চেয়েও লম্বা পাইপের চিপায় পড়ে গিয়েছে। সেই পাইপটি মহাসমারোহে আমরাই বানিয়েছি এবং মুখটিও যথারীতি খোলা রেখেছি । তবে বিশ্বব্যাপী শিপিং এর মন্দা এই পাইপটিকে শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করেছে , তাতে কোন সন্দেহ নেই । তোমার বর্ণনামত চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অনেক জিয়াদকে এই পাইপে আমরাই ঢুকিয়েছি। আম জনতার অপাধ আমরা খোলা পাইপটি দেখেও সরব না হয়ে নীরব থেকেছি । ২০০৮ সাল থেকেই শিপিং এর মন্দা শুরু হয়েছে , এর প্রভাব যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সি ফেয়ারার দের উপরে পড়বে তা আমরা ঠিকভাবে ঠাহর করতে পারি নি । একটা দেশের প্রশাসনকে যুগপদ ক্রিমিনালাইজেশন ও মিলিটারাইজেশন করার বিপদ হলো এগুলি । জবাবদিহিতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা তখন নিজেই চিপা পাইপের মধ্যে ঢুকে যায় ।
আমাদের লোভ , আমাদের অজ্ঞতা , আমাদের ভীরুতা সমাজের সকল স্তরে এই ধরনের অসংখ্য চিপা পাইপ তৈরি করেছে । যারা এসব ব্যাপারে সাবধান করে তাদেরকে শত্রু গণ্য করি ।
আমরা মূল সমস্যায় হাত না দিয়ে অনেক দূর থেকে লেফট রাইট করে থাকি । নিজের বাবাকে সুপার হিরো ভাবার মত সরকারকে
গণ্য করি সুপার হিরো । বিশ্ব বাস্তবতা , দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিধারা পর্যবেক্ষণ না করেই আশা করি সরকার চোখের নিমিষেই ভিসা সমস্যা সমাধান করে ফেলবে । বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক যে দেশটির সাথে , সেখানকার ভিসা পাওয়াই আরো দুস্কর হয়ে পড়েছে । আমাদের অবস্থা হয়েছে , যার জন্যে করি চুরি সেই বলে চোর । মধ্যপ্রাচ্যেও সেই একই বিড়ম্বনা । যে মুসলিম গন্ধের জন্যে সমস্যায় পড়েছি- সেই সব মুসলিম বিশ্বও আবার একই ভাবে নাক সিঁটকায় । হায়রে কপাল !!!
কাজেই অসহায় মায়ের মতো ডেকচিতে পানি দিয়ে ভাত রান্নার মিথ্যা অভিনয় না করে তুমি সত্য কথাটি সহজভাবে জানিয়ে দিয়েছো । বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে এর চেয়ে ভালো উপায় আমার চোখে পড়ছে না । তোমার এই লেখাটি থেকে আশা করি অনেকেই বাস্তব পরিস্থিতিটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন এবং নিজেদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা সম্পর্কে একটা দিক নির্দেশনা পাবেন । মেরিটাইম ফোরাম সহ আরো যারা এব্যাপারে কাজ করছেন , তারাও এই সব বিপদগ্রস্ত ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসিত হতে সহায়তা করতে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করতে পারবেন ।
যে কথাটি বলার জন্যে এই কঠিন কথাগুলি লিখেছি তা হলো -ন্যাড়া যেন একবারই বেলতলায় যায় । বার বার তা দেখতে চাই না ।
– মিনার রশীদ (২১তম)
========================================================
The article written by Mahmudur truly reflected some hard facts about this profession.Some of them are inherent ,while others are recent developments,such as visa issues,en masse approval of a large number of private marine academies.We passed out back in 1993,with an exception of a short period right after STCW 1995 came into being,job for Bangladeshi mariners has never been so easy ever since,for juniors it has always been the worst.I have spent almost my entire sea career in foreign companies,and I always find myself as insignificant minority-it is so evident anyone can understand it looking at the crew composition of any renown shipping company.
But fake promises & rosy picture start right from the academy,needless to say the money-shark fraud private academies do it to the utmost to rob the pockets of poor aspirants.In our days our so boastful commandant fond of beating his own trumpet(forgive me for being disrespectful) always love to say -if I want,I can arrange your job anytime.But truth is we stumble at the on set of our career & the bumpy journey continued for long part of the career.Question is:could he?If he could,then why he didn’t.It was his professional & moral responsibility.Just making a statement like that,I presume,is a crime.
Bangladesh could establish itself as a country of quality seafarers in spite of mounting challenges,we are minority as said earlier ,yet we are visible in the shipping industry.We had the access to some leading shipping companies of the world because our predecessors proved that we are capable.But ask yourself,how much contribution academy has to this end.We passed out of the academy with virtually zero knowledge & know hows.Academy cadets excelled in sea-life because of their own talents & efforts,not because they had quality training.
Academy might have a glorious history,but not quality training & grooming policy.It runs on archaic structure,ideas & policies.It has huge infrastructure & sufficient facilities,but much is the utilization -I don’t know-10%? 20% ?,surely somewhere close to that.If I recall my cadet life at academy,I can only visualize cleanship,parade training,some workshop activities & some insignificant good lectures,and of course ragging-what else,I don’t know,I don’t remember.We did not even instructors for our key subjects.
Maritime sector in Bangladesh is now in pathetic state.It is engulfed with countless problems.In one end it is invaded by the Navy,who are completely incapable & ignorant of dealing with the sector,on the other end it is run by corrupt,inefficient personnel working in a resource-strapped administrative body.Then comes poor training system.To add fuel to the fire countless private academies were approved to be established.And poor image of the country & visa problem need no mention.
The world shipping industry is in the transformation era,it is embracing sweeping changes in terms of technology,regulations & globalization,and competition is fierce.To add with that owners are venturing cheaper & newer markets for supply of seafarers -China,Vietnam,Sri Lanka…. .While are nations are keeping pace, we are lagging behind each day,and moving with age-old mindset & wrong policies.
C/E Shamer Ahmed Chowdhury
28th batch
=============================================================================
Thank you.Now I am in class 11.My dream to be a mariner.But now what can I do?Please tell me.