শুভ নববর্ষ ১৪২০
শিউলি ফোটা ভোর, শাপলা ফোটা দুপুর আর সন্ধার হাস্নাহেনার সুবাস, এই দেশ ছাড়া আর কোথায় মিলে? মৌসুমী বাতাস নিয়ে আসে জলবায়ূ, খোদার দান এক-একটা বৃষ্টির ফোটা এক- একটা ডলার। মিলিয়ন টন খাদ্য শস্যর মুল্য ট্রিলিয়ন ডলারের কম নয়। শত কষ্টেও হাসিমুখে বেঁচে আছে ষোলো কোটি। সেই সাথে হিমালয়ের
বৃষ্টি বিধৌত খনিজ (মিনারেল) ঝর্ণাধারায় চলে আসে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার বুক বেয়ে। প্লাবনে পড়ে পলি, বাড়ে আমাদের বুদ্ধি। ……………….নতুন বত্সরে সাহিত্য ফুটানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু “বুদ্ধি”-তে এসেই দিক পরিবর্তন (course alter) করে ফেলেছি। জাহাজের একটা রসালো বুদ্ধির গল্প মনে পড়ে গেল, না লিখলেই নয়।
১৯৮৪ সাল, আমি তখন বাংলার কল্লোল-এর কেডেট। ইউ.এস.এ-র বেশ কয়েকটা পোর্ট শেষ করে আমরা শেষ পোর্ট-এ লোডিং শেষ করেছি। আর দু’ ঘন্টা পর পাইলট বোর্ডিং, সেইল করবো চিটাগাং-এর দিকে। আমার কেবিনে একটা ডিব্বায় কিছু পয়সা জমে আছে। কাগুজে ডলার দেশে-বিদেশে কাজে লাগে – পয়সা নয়।
জাহাজ থেকে নেমে জেটিতে টেলিফোন বুথে চলে গেলাম, দূর-সম্পর্কের এক আত্নীয়কে ফোন করবো। গত একমাস আমরা যুক্তরাষ্ট্রে চষে বেড়িয়েছি, তাকে ফোন করার কথা একবারও মনে হয়নি। যেহেতু আমার কিছু অপ্রয়োজনীয় পয়সা পড়ে আছে, সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্যই ফোন করা।
জেটিতে ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে, আমার জাহাজের কয়েকজন ক্রু কয়েন ফেলে কোক বের করে খাচ্ছে – অথচ তাদের কেবিন ভর্তি সফট-ড্রিঙ্কস, খুব সম্ভবত আমার মতই অপ্রয়োজনীয় পয়সা কাজে লাগাচ্ছে। টেলিফোন বুথে একটার পর একটা কয়েন ঢুকিয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে পকেট খালি করে ফেলেছি। একজন এবি দূর থেকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডাকলো, “কেডেট সাইব, এদিকে আস।” একটা মেশিন দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো, “এটা কী?” মাথা সমান উচু ওয়িং মেশিন। দুই ফুট বেসের একটা এনালগ মিটার, মাঝখানে একটা কাটা, প্রায় ৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন মাপা যাবে। আমি বললাম, “এটা ওজন মাপার যন্ত্র। এইখানে ২৫ পয়সার কয়েন দিয়ে ওজন মাপা যায়।”
এবি পকেট থেকে একটা কোয়ার্টার বের করে আমাকে আবার প্রশ্ন করলো, “সব ফুইসা শেষ, একটাই আসে, এইটা দিয়া দুইজনের ওজন মাপা যায় না?” এবির পেছনে আর একজন ক্রু দাড়িয়ে আছে। আমার পকেটেও কোয়ার্টার নেই। আমি বললাম, ” না, দুইজনের ওজন মাপা যাবে না। এই দেখেন, কোয়ার্টার দিলে মেশিনটা এক্টিভেট হবে, তখন এই পাদানিতে দাড়ালে ঘড়ির কাটার মত এটা ঘুরে যেখানে থামবে, সেটাই আপনার ওজন। আর আপনি যখন নেমে যাবেন, তখন কাটা আবার শুন্যের ঘরে ফিরে এসে মেশিনটা ডি -এক্টিভেট হবে, আরেকজনের ওজন মাপতে হলে আবার পয়সা দিয়ে ওটাকে এক্টিভেট করতে হবে।”
এবি কিছুক্ষণ চিন্তা করে আমাকে বললো, “তুমাকে দুইটা লম্বর (number) বলব, তুমি মনের মধ্যে গাথি ফালাইবা।” তারপর পেছনে দাড়ানো সাথীকে বললো, “কান্দে উঠ।” পেছন থেকে দ্বিতীয় জন লাফ দিয়ে প্রথম জনের কাধে চড়ে বসলে। এবি স্লটের ভিতর কোয়ার্টার গলিয়ে ওয়িং মেশিনের পাদানিতে দাড়িয়ে চিত্কার করে বলল, “তিনশ বিশ, ফাল দে।” দ্বিতীয় এবি লাফ দিয়ে কাধ থেকে নেমে গেল। প্রথম এবি আবার চিত্কার করে বলল, “একশ শৈত্তর।”
ক্ষুদ্র ঘটনা – কিন্তু ঘটে গেল দ্রুততার সাথে। আমার ‘সার্কিট ডিলে’ সত্তেও কোনভাবে সংখ্যা দুটো মনে রাখতে কামিয়াব হয়েছিলাম। ওয়িং মেশিন থেকে নেমে এবি আমাকে বলল, “আমার ওজন একশ শৈত্তর, ঠিক কিনা? এইবার যোগ- বিয়োগ করি বলি ফেল, হেতের ওজন কত?”
মেসবাহ/১৮
Recent Comments