[News]দেশি নাবিকের কদর বাড়ছে বিদেশি জাহাজে
আন্তর্জাতিক নৌ জাহাজে দিন দিনই কদর বাড়ছে দেশের নাবিকদের। তারাও বিশ্বের বড় বড় শিপিং লাইনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আয় করছেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। বর্তমানে নাবিকদের বার্ষিক আয় ৪০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশি নাবিকদের দক্ষতার প্রশংসা করে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট নৌ-প্রকৌশলী ড. সাজিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় সাত হাজার বাংলাদেশি নাবিক কাজ করছেন। তাদের বার্ষিক আয় প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি ক্যাডেটদের চাহিদা বাড়ছে। আবার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনও নতুন করে জাহাজের বহর যুক্ত করছে। এ কারণে ক্যাডেটদের চাহিদাও বাড়বে।
দেশে নাবিক প্রশিক্ষণের জন্য কাজ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান মেরিন একাডেমি। এর বাইরে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশি নাবিকরা এখন দেশি নৌ জাহাজের পাশাপাশি বিশ্বের বড় বড় শিপিং লাইনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।
আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্যে ক্যাডেট সরবরাহকারী কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে ড. সাজিদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্য জাহাজে ক্যাডেট সরবরাহ করে প্রচুর ডলার আয় করছে। এখানে বাংলাদেশের বড় সুযোগ আছে। কারণ এখন বাংলাদেশের অদক্ষ জনবল মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে মাসে ২৫০-৩০০ ডলার আয় করে। কিন্তু একজন ক্যাডেটের ন্যূনতম বেতন শুরু হয় ৫০০ ডলারের বেশি দিয়ে। ফলে দক্ষ ক্যাডেটরা দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ ডলার আয় করে।’
ক্লিয়ার সিস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সারা বিশ্বে ১৬ লাখ নাবিক আছেন। মোট নাবিকের ২ শতাংশ নারী, ৯৮ শতাংশ পুরুষ। এর মধ্যে সর্বাধিক নাবিক সরবরাহকারী দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ফিলিপাইন, চীন, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া এবং ইউক্রেন। নাবিকের বড় বাজারে বাংলাদেশি নাবিকের সংখ্যা মাত্র ১৬ হাজার, যা মোট নাবিকের মাত্র ১ শতাংশের মতো। কিন্তু এই বাজারে বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী ক্যাডেটদের যুক্ত হওয়ার অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন ক্যাডেট প্রশিক্ষণে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ক্যাডেটদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেনÑ ‘অফিসার, ক্রু মিলে বিদেশি জাহাজে নিয়োজিত নাবিক আছেন প্রায় ১৬ হাজারের মতো। এর মধ্যে অন বোর্ড (জাহাজে) থাকেন সাত থেকে আট হাজার।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির বিজনেস ডেভেপলমেন্ট অফিসার আতিকুর রহমান চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, একজন নাবিক শুরুতে ক্যাডেট হিসেবে মার্চেন্ট জাহাজে ওঠেন ৩০০-৬০০ ডলার বেতনে। ১২ মাস সি সার্ভিসের পর তিনি তৃতীয় অফিসার হন। তখন বেতন হয় গড়ে ৩ হাজার ডলার। এরপর পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় অফিসার হলে পান ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার ডলার। পরবর্তীতে চিফ অফিসার, বাল্ক ক্যারিয়ার এবং কন্টেইনার জাহাজের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ হাজার ডলার বেতন পান। অয়েল ট্যাংকার, এলএনজি জাহাজের ক্ষেত্রে ১০ হাজারের বেশি ডলার বেতন পাওয়া যায। সর্বশেষ ধাপে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাপ্টেন হলে বাল্ক ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার ডলার, অয়েল ট্যাংকারের ক্ষেত্রে ১৪-১৫ হাজার ডলার বেতন পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বসন্ধুরা এলপিজি এসটিএস অপারেশন পরামর্শক ক্যাপ্টেন নূর মোহাম্মদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশের নাবিকদের বাইরে খুব সুনাম আছে। তাই বিদেশি জাহাজে বাংলাদেশি নাবিকদের চাহিদা বাড়ছে। এর জন্য সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে। তবে মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট নৌ প্রকৌশলী ড. সাজিদ হোসেন স্যার ও আতিক স্যার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এখন প্রতি মাসেই মেরিন ক্যাডেটদের চাকরি হচ্ছে বিদেশি জাহাজে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিসা জটিলতার কারণে অনেক সময় বাণিজ্যিক জাহাজে উঠা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেকে বিদেশি শিপিং লাইন থেকে প্রস্তাব পেয়েও ভিসা জটিলতায় জাহাজে উঠতে পারেন না। সরকার এসব বিষয় সহজ করলে নাবিকদের চাকরির সুযোগ বাড়বে। এতে ডলার আয়ও বাড়বে।’
মেরিন একাডেমির তথ্য অনুযায়ী এখন পুরুষ নাবিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারী নাবিকরাও সমুদ্রগামী নৌ জাহাজ চালাচ্ছেন। বাংলাদেশি নাবিকরা এখন ব্যস্ত সাত সমুদ্রের, আন্তর্জাতিক সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনায়। অসীম সাহসিকতা নিয়ে কাজ করছেন গভীর সমুদ্রে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পতাকাবাহী জাহাজে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন নাবিকরা।
বাংলাদেশের ক্যাডেটরা এখন কোথায় কোথায় দক্ষতার ছাপ রেখে সুনাম কুড়িয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট নৌ প্রকৌশলী ড. সাজিদ হোসেন জানান, ‘আমাদের পুরুষ ও নারী ক্যাডেটরা এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জাহাজে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলএনজি জাহাজ এবং কেমিক্যাল ট্যাংকার ছাড়াও বাল্ক ক্যারিয়ার ও অয়েল ট্যাংকার নিপুণ দক্ষতায় পরিচালনা করছে। মনটা ভরে ওঠে যখন আমরা জানতে পারি আমাদের নাবিকরা (ক্যাডেটরা) বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে বিশ্বমানের দক্ষতায় কাজ করছে।
Read the full publication here: Protidiner Bangladesh | প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩
Recent Comments