[SMC Magazine ‘নোঙর’] ফেইসবুক স্ট্যাটাস – আতিকুল আজম খান (২৭)

[SMC Magazine ‘নোঙর’] ফেইসবুক স্ট্যাটাস – আতিকুল আজম খান (২৭)

১।সামর্থ্যঃ
সন্তান তার বাবা মায়ের কাছে অমুল্য, স্বর্গীয় ধন। প্রতিটি বাবা-মা তার সন্তানের আবদার আর দাবি পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেন। এই সহজ কথাটা বুঝতে আমাদের কত বছর লেগে যায়। মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্তের সাধ আর সাধ্যের সাথে নিরন্তর সংগ্রাম। উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তে এত সমস্যা নেই।
ছেলের সাইকেলের শখ হয়েছে। মাসের শেষ, হাতে টাকা নেই। বাবা শুরুতে মানা করে দিলেন। নিজের সামর্থ্যের কথা বুঝালেন। ছেলে কিছুই বুঝতে নারাজ। তার প্রতিবেশি বন্ধুদের ৩/৪ জনেরই সাইকেল আছে। তার বাবাটা এরকম কেন। অন্যদের বাবারাই ভালো, তার বাবা পচা। ফালতু একটা চাকরি করেন। একটা সাইকেল পর্যন্ত কিনে দিতে পারেন না। এরকম বাবা থাকা না থাকার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ইস, যদি তার ও সামির বা শিমুলের মত বাবা থাকতো! নতুন মডেলের একটা সাইকেল চালাতে পারত। অথবা ক্যামেরা সহ মোবাইল। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা কি বুঝলেন, শার্ট গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন। বন্ধু থেকে ধার করে হলেও সাইকেল কিনে আনবেন, যেখান থেকেই হোক……।
ঈদের শপিং চলছে। সবার বাজেট বরাদ্দ। মেয়ে একটা জামা ধরে আছে, যেটা বাজেটের অনেক উপরে। সেটাই সে কিনবে নইলে এই ঈদে পুরানো কাপড় পরে কাটাবে। মেয়ে তার বান্ধবীদের জামাগুলো দেখেছে, একটার চেয়ে একটা জমকালো। এর চেয়ে কমদামি কিছু কিনলে ওদের সাথে আর বেড়ানো যাবে না। সবাই তাচ্ছিল্যের চোখে তাকাবে, হাসবে। বাবা-মা নিজেদের মধ্যে কষ্টভরা চোখ নিয়ে তাকালেন। মা ফিসফিস করে বললেন, ‘আমার জন্য সুতির শাড়ি হলেই চলবে, তুমি ওকে এটা কিনে দাও। আমার পুরানো একটা দামি শাড়ি আছে, অনেক দিন পরিনি। ওটা ঠিকঠাক করে নিব। ঈদ তো বাচ্চাদের জন্য।’ মেয়ের মুখে হাসি ফুটল।
বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতেই সারা জীবন ব্যস্ত থাকেন। আমরা অনেক দেরিতে এটা অনুভব করি। নিজের বাচ্চা যখন মার্কেটে গিয়ে এটা- ওইটা টানাটানি করে, হয়ত তখন। যখন নিজের সামর্থ্যের বাইরে কিছু একটা আবদার করে হয়ত তখন…………
ছবিটা দেখে মন খারাপ হল। হয়ত নিজেদের ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ায়। হয়ত কিছু এরকম মুহূর্তে, যেসব ভাবনা মনে উঁকি দিয়েছে সেসব মনে পড়ায়। হয়ত আবদার পুরন না হওয়াতে বাবা-মায়ের সাথে তর্ক / ঝগড়াকরার কথা মনে পড়ায় বা না খেয়ে ঘর বন্ধ করে বসে থাকার লজ্জাকর স্মৃতি মনে ভেসে উঠায়……।
সময়গুলো ফিরে আসতো!! সম্ভব হলে অনেককিছু বদলে নিতাম …………।।

সময়ের পরিক্রমায় আমরা অনেকেই এখন বাবা-মা। ছবিটা দেখে মনে হল, ছোটকালে আমরা অনেকেই এ ধরনের অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছি।
২। বৈষম্যঃ
চট্টগ্রামের কোন এক অভিজাত এলাকা। একটু পাহাড়ি, গাড়ি না থাকলে হেঁটে উপরে উঠতে হয়। রিকশা সহজে উঠে না। সে সময় খুব কম বাড়ি ছিল সেখানে। বড় বড় বাউন্ডারির ভেতর সুবিশাল সব বাংলো টাইপ বাড়ি। বাড়িগুলো অবশ্য সাধারনত দোতলার বেশি হত না। শুধু একটা পরিবারই কর্মচারীদের নিয়ে বাস করত। ভাড়া নিলে পুরোই নিতে হত। সব বাড়িতেই কম বেশি ২ বা এর বেশি গাড়ি থাকতো। যেহেতু অন্য যানবাহনের নাগাল পাওয়া কঠিন ছিল। বাংলোর সামনে অনেকটুকু বাগান, একপাশে মসৃণ ঢালাই করা ড্রাইভওয়ে।
এলাকার প্রবেশমুখেই রিকশা থেকে নেমে হেঁটে ধীরে ধীরে উপরে উঠছি। এক বন্ধুর বাসায় বিকালের চায়ের নিমন্ত্রন। অফিস শেষে অনেকেই রাজকীয় সব মডেলের গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছেন। দুপাশের বাড়িগুলো উঁচু দেয়ালের কারনে খুব একটা দেখা যায় না। শুধু গেটের ফাঁকফোকর দিয়ে বাড়ির অনেকটুকু চোখে পড়ে। একটা পঙ্গু ফকির কিভাবে যেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে উপরে উঠে এসেছে। বয়স সবেমাত্র কৈশোর পেরিয়েছে। একটা বাসার গেটের কাছে একটা গাড়ি এগিয়ে আসতে দেখে কিছু পাওয়ার আশায় দাঁড়ালো। গাড়িটা ফকিরের পাশে থামল। দারোয়ান গেট খুলছে। গাড়ির কালো গ্লাস নেমেছে। ভেবেছি একটা হাত বেরিয়ে আসবে, কিছু দেবে এরপর এই দৃশ্যের সমাপ্তি। কোন হাত বের হল না। একটু পর গ্লাসটা উঠে গেলো আর গাড়িটাও ভিতরে ঢুকে গেলো। ফকিরের মুখ দেখে আন্দাজ করলাম নিম্নোক্ত বাক্য তাকে হজম করতে হয়েছে………।
ঃ এত সাহস তোমার! পাহাড় বেয়েও উঠে এসেছ ভিক্ষা করতে। কিছু করে খেতে পার না? ………।
তারপর হয়ত নিজে নিজে গ্লাস নামাতে নামাতে ….স্বগতোক্তি.. –
ঃ এলাকার দারোয়ানরা করেটা কি? এখানে থেকেও যদি ফকিরদের উপদ্রব সহ্য করতে হয়!! সব কয়টাকে বিদায় করে দেয়া উচিত।
নিমন্ত্রন রক্ষা করে ঘণ্টাখানেক পর ফিরছিলাম।। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। ওই বাসার সামনে এসে দেখি ফকিরটা সেই বাসার উল্টা দিকে ফুটপাতে বসে আছে। মাথা একটু উঁচু করে কিছু দেখার চেষ্টা করছে। দেখে ক্লান্ত লাগছে, কিছু পেটে পড়েনি মনে হয়। কিছু একটা দিলেই একে বিদায় করা যেত, করা হয়নি। ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখার চেষ্টা করছি ও এতো মনোযোগ  দিয়ে কি দেখে। গেটের উপর লেখা ” কুকুর হইতে সাবধান”।
ভিতরে বাগানে একটা ছোট বাথটাব। দুটো কুকুরকে সেখানে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল দেয়া হচ্ছে। কাছেই প্লেটে কুকুরগুলোর জন্য কিছু খাবার রাখা। মালিকের ছেলে আর সুপারভাইজার জাতীয় কেউ দেখাশুনায় ব্যস্ত। ফকিরটার দিকে তাকালাম। চুলে জট, অনেকদিন চিরুনি পড়েনি। কবে গোসল করেছে ঠিক নেই। মুখ শুকনা। দুপুরে হয়ত পেটে দানা পড়েনি। ভিতরের দৃশ্য দেখে ওর মুখে একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি। সেটা আমার মনে গেঁথে গেলো। কি ভাবছিল, ছেলেটা?
এই জীবনের চেয়ে মালিকের কুকুর হয়ে জন্মালে আদর যত্ন, খাবার বেশি পেতাম? জীবন কখনো কখনো বড়ই নির্দয় আর বৈষম্যে ভরা…………।।
ওই এলাকা দিয়ে কিছুকাল পর যাবার সময় দেখলাম, প্রবেশ পথে গার্ড বসেছে। হয়ত ফকিরদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রন করার জন্য। রাস্তার কয়েকটা কুকুর অবশ্য মহা আনন্দে ভিতরে দৌড়াদৌড়ি করছে…………।
এই স্ট্যাটাসের উদ্দেশ্য অবশ্য ভিক্ষাকে উৎসাহিত করা নয়। আমাদের গনতন্ত্র ও বড়ই অদ্ভুত। যেখানে ধনী আরও ধনী হয়, গরিব আরও গরিব। সামর্থ্যবান মুসলিমরা ঠিক মত যাকাত আদায় করলে, সবাই নিম্ন সামর্থ্যের লোকজনের পাশে আরেকটু দাঁড়ালে মানুষ হয়ত কুকুরের চেয়ে একটু ভালো অন্তত জীবন যাপন করবে। কে বলতে পারে আজকের রাজা কাল ফকির হবে না। মানুষ মানুষেরই জন্য……………।।

৩। মালয়শিয়ান এয়ারলাইন্স তার ২৩৯ জন যাত্রি নিয়ে নিখোঁজ হবার ৬ ঘণ্টা পর উপহার হিসাবে পেলাম একই এয়ারলাইন্সের একই বোয়িং ৭৭৭ এর একই রুটের (দক্ষিণ চিন সাগরের উপর দিয়ে) যাত্রার প্লেন টিকেট। একটা অদ্ভুত অনুভুতি হল। তেমন বড় ব্যাপার না যদিও।

প্রতিদিন শতাধিক রিকশা উলটায়, ৫/৬ টা মাইক্রোবাস চ্যাপ্টা হয়, ২/৪ খানা বাস খাদে পড়ে আর মাঝে মাঝে রেলগাড়ি লাইনচ্যুত হয়। কিন্তু আমরা কি এসবে ভ্রমন বন্ধ রেখেছি?

একটা প্রশ্ন না করে পারছি না, অনেক এয়ারলাইন্সের অপশন থাকার পরও একটা প্লেন সাগরে পড়ে যাবার পর পর এমন সাহসি কয়জন আছে, যারা একই এয়ারলাইন্সে টিকেট করবে?

আমার মনে হয় ওরা এখন আগের থেকেও অনেক বেশি সতর্ক। আর ল অফ এভারেজ বলে একটা কথা আছে। গ্রিনলাইন বা সোহাগ এর বাসে প্রতি রাতে ডাকাতি হয় না। মানে একই কপাল হয়ত বারবার পুড়ে না।
আর যদি পুড়েই যায়, তাইলে এটাই হয়ে থাকবে আমার শেষ স্ট্যাটাস

(এগুলো সব কথার কথা, আল্লাহ মৃত্যু যখন যেভাবে নির্ধারিত করে রেখেছেন, সেটাকে অতিক্রম করার সাধ্য কি আমাদের আছে? আর মৃত্যু চিন্তা থাকা ভালো, এটা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে)।

৪।
– মালয়শিয়ান এয়ার উড়ছে ৩৯০০০ ফুট উঁচু দিয়ে। সবাই হাসি মুখে ডিনারে ব্যস্ত। হটাৎ বিনা নোটিশে শুরু হল প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। সাথে অল্প অল্প বামে ডানে কাত হয়ে যাওয়া। পাইলটের টেনশন ভরা ঘোষণা – ” আপনারা সবাই তাড়াতাড়ি সিটে এসে বেল্ট বেঁধে বসে পড়ুন”। সবার হাসিমুখ আর ডিনার আকাশে উড়ে গেলো। দোয়া-দরুদ আর ফ্যাকাসে মুখ করে যাত্রিরা বসে আছে। দুই একজন সামনের সিট খামচে ধরেছে। একজন বিড়বিড় করছে শুনলাম – ‘ ভাই, সকলে মানা করছিল। তারপরও কোন দুঃখে মালয়শিয়ান এয়ারের টিকেট কিনতে গেছিলাম!! “। আমি ঝাঁকুনির মধ্যে কলেমা পড়ে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবার চেষ্টা করছি, কি কি কাজ জীবনে অসমাপ্ত রয়ে গেলো………।। সবই দেখি অসমাপ্ত  আমরা কি আসলেই কখনো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকি? এটা ঠিক, আমি প্রতিবার দেশের বাইরে যাবার সময় কিছু জিনিস এমনভাবে গুছিয়ে রেখে যাই, যে এটাই আমার শেষ যাত্রা……… কে বলতে পারে……।। এয়ার পকেটে বেশ অনেকক্ষণ ঝাঁকুনি দিয়ে শেষমেষ থামল …………।।

এদিকে প্লেন ছিল ১ ঘণ্টা লেট। সাড়ে ১১ টায় নামার কথা, নেমেছে ১২ টা ২০ এ। আর গ্রামীন ফোনের সৌজন্যে ৩ মাস ব্যবহার না করায়, আমার সিম ও বন্ধ। এই এক ঘণ্টা কোন খবর না পেয়ে বাসায় ও প্যানিক ছড়িয়ে গেলো। কে বলছিল এই প্লেনে উঠতে??

অবশেষে প্লেনের অবতরন। পরিবার, বন্ধু আর শুভানুধ্যায়ীদের দোয়াতে সুস্থভাবে ঘরের ছেলের ঘরে ফিরা। ধন্যবাদ সবাইকে………।।

৫। HAPPINESS IS –
স্যাটেলাইট ফোনে ছোট্ট মেয়েটা যখন জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কেমন আছ? তুমি কবে ফিরবে? তাড়াতাড়ি চলে আসো।”
মনটা তখন আলোর গতিকেও হার মানিয়ে পৌঁছে যায়………ওখানে,
ছুঁয়ে আসতে চায় হৃদয়ের ছোট্ট অংশটুকুকে, যেটা ঘরে রয়ে গেছে……………।।

৬। বিষঃ
সিঙ্গাপুরের মোস্তফা শপিং সেন্টারে হাঁটছিলাম। হটাত এক পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা। বিজনেস ট্রিপে বাংলাদেশ থেকে এসেছে। সপ্তাহ খানেক থাকবে। এখানে কম দামি কিছু রেস্ট হাউজ পাওয়া যায়, ওখানেই উঠেছে। মাঝে কয়েক বছর দেখা হয়নি। একটা কফি শপে বসলাম।

কোলাকুলি করার পর জিজ্ঞেস করলাম, আর কি খবর?
– এই ভালো। একটু লাজুক স্বরে বলল, কয়েক মাস আগে বিয়ে করলাম। পারিবারিক পছন্দ।
– হুম, লেট ম্যারেজ। তারপর ও এত লাল হয়ে যাচ্ছিস কেন? ভাবি কি করে?
– ইয়ে, অনার্স পড়ে। বয়সের গ্যাপটা একটু বেশি।
– সাথে নিয়ে আসতি। সিঙ্গাপুর ঘুরে যেত।
– প্রথমবার এসেছি, কোথায় উঠবো কিভাবে থাকব শিউর ছিলাম না। পরের বার………।
– তারপর কেমন কাটছে দিনকাল? অন্যরকম লাগার কথা……।।
– আমাকে কিছু টিপস দে তো। কমবয়সি মেয়ে বিয়ে করে ঝামেলায় পড়লাম। আমার কথা সে বুঝে না, ওর কথা আমি বুঝি না। সিঙ্গাপুর না নিয়ে আসায় এমনিতেই মন কষাকষি, কথা কাটাকাটি হয়েছে……। আগেই ভালো ছিলাম!!
– একজনের টিপস আরেকজনের কাজে লাগে না। শিখে যাবি আস্তে আস্তে সংসার করা কাকে বলে!!
– তোর ট্রিট। বিয়ের খাওয়া বাকি ছিল। বিল দিয়ে দে। বলে বিদায় নিলাম……।।

পরদিন মোবাইলে জরুরি ফোন। আবার আগের লোকেশনে দেখা করার জন্য। চোখ দুটো লাল, চুল উসকোখুসকো। সারারাত ঘুমায়নি বুঝাই যাচ্ছে।
– কিরে হটাত, জরুরি তলব। ভাবির সাথে ঝগড়া?
– কিভাবে বুঝলি? যাকগে, ঠিক ঝগড়া না। কিন্তু আমাকে বলেছে এক শিশি বিষ নিয়ে যেতে। সিঙ্গাপুরে না নিয়ে আসায় পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ হবে বুঝি নাই। মনে হচ্ছে, আমিই বিষ খাই………

একটু হালকা করার চেষ্টা করলাম,
– মনে হয় বাংলাদেশের বিষে ভরসা নাই। যদি ফরমালিন মিশানো থাকে। খেলেও কাজ হবে হবে না, খামোখা পেটে ওয়াশ দিতে হবে। তেলাপোকা, ইদুর মরে না আর মানুষ………। কাজ হল না ঠাট্টায়।
– আমি মরছি আমার জ্বালায়, আর তোর এইসব কথা ভালো লাগছে না।
পরিস্থিতি গুরুতর। আচ্ছা কি কথা হয়েছে তোদের মধ্যে?
– এই নানা কথার মধ্যে জিজ্ঞেস করলাম কি আনব সিঙ্গাপুর থেকে? ২/৩ টা আইটেম এর নাম বলার পর বলল। এক বোতল পয়জন ও নিয়ে এস। আমি তো শুনেই ফোন রেখে দিছি। তারপর আর ঘুম আসে!!

বললাম, চল তোকে বিষ কিনে দেই। মনে হয় বুঝেছি।
পারফিউম সেকশনে গিয়ে নিয়ে দিলাম 100 ml এর এক শিশি ‘POISON’ পারফিউম।
বন্ধু তো পুরাই হতভম্ব, শালার পারফিউমের নাম ও আবার পয়জন হয়!!

চল তোকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলাম, আবার ট্রিট দে। এবার ভালো কোন রেস্টুরেন্টে!!

৭। হবু নেত্রীঃ
মেয়ের সাথে রিকশা করে বাসায় ফিরছি। অভিযোগের সুরে বলল,
– আমার ক্লাস টিচার বলেছে, আমার মত মেয়ে উনার থাকলে খুব খুশি হতেন। আর তুমি আমাকে পাত্তা দাও না। সারাক্ষন এটা ওটা করতে বল।
একটু চমকে গিয়ে বললাম,
–  তোমার বাসার গুনাগুনের কথা টিচার জানে? এই যেমন কোকো চকলেট খেয়ে দাঁত মাজতে বললে, বল টাইগার দাঁত মাজে না। রুম অগোছালো করে রাখো (এই গুন মনে হয় আমার থেকে পাওয়া 😛 ), টিভির সামনে বসে ভাত খেতে চাও ( Unfortunately এই গুণটাও মনে হয় আমার থেকে বিশেষ করে খেলার সময় …… 😛 ) ………।।  তোমাকে এত পছন্দ করার কারন?
– আমি ক্লাসে সবাইকে চুপ করায় রাখি তো, পড়াশুনাসহ সব কিছু মিলিয়ে……।। ক্লাসে ৭৫ ভাগ ছেলে, আমাকে ভয় পায় !!
–  তুমি কিভাবে টাইট দাও? তুমি না অনেক আগে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলা?
–  ধুর পাপা, আমি তো ৯ মাস ধরে ক্যাপ্টেন। ১ মাস পরপর বদলায়, কিন্তু আমি কন্ট্রোল ভালো করি তো তাই আমাকে বদলায় না। ছেলে ১ টা করে মাসে মাসে সাথে থাকে, কিন্তু ওগুলো গাধা টাইপ……।।
এবার কৌতূহলী হলাম, কিভাবে টাইট দাও?
– সবাই চেঁচামেচি করে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। আমি শুধু শুধু এনার্জি লস করি না। আমি একটা খাতা কলম নিয়ে সবার সামনে গিয়ে বসি।
– খাতায় বা বোর্ডে নাম তো অনেকেই লেখে!!
– হুম, আমি আসলে লেখার ভান করি। দুষ্টু গুলোর জন্য কাগজ কলম খরচ করিনা হিহি……।।
কাগজের উপর কলম বুলাতে থাকি!!
– তারপরও কাজ না হলে?
– ক্লাস টিচার খুব নরম। উনার নাম নিলে কাজ হয় না। আমি বাইরে গিয়ে ফিরে আসি, যে ২/৩ জন টিচার খুব কড়া আর নম্বর কাটে দুষ্টামি করলে, অদল বদল করে ওদের নাম নিয়ে বলি দুষ্টুদের নাম জমা দিতে বলেছেন। নম্বর কেটে দিবে ক্লাস টেস্টের রেজাল্ট থেকে। ২/১ বার কেটেছে তো আগে, সব একদম চুপ হয়ে যায়।

৮। ভিখারিঃ
কবছর আগে একটা রাজকীয় বাসায় একটা দরকারে যেতে হয়েছিল। বাইরে কেতাদুরস্থ গার্ড, আলিশান বাংলো আর থরে থরে সাজানো নতুন মডেলের সব গাড়ি। উনার ৪ ছেলে, স্ত্রী, আর ১ মেয়ের জন্য ৬ টা গাড়ি, নিজের ৩ টা সহ মোট ১১ টা গাড়ি। আমাকে ১০/১১ টা ইন্ডাস্ট্রির নামসহ কার্ড এগিয়ে দিলেন। কয়েক বছরেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সরকারী দলের চেনাজানা, ভিতরের পথঘাট সব নখদর্পণে। সেদিন –
আমি ঈর্ষার চোখে তাকিয়েছিলাম……………
পরে জানলাম, উনি একজন ঋণখেলাপি। বিভিন্ন কোম্পানির নামে নেয়া ঋণের পরিশোধের নাম নেই। কোম্পানি ২/৩ টা ভালো চললেও অনেকগুলোই নামে বা কাগজপত্রেই শুধু অস্তিত্ব। দৌড়াদৌড়ি চলছিল ঋণের পুনঃ তফসিল করার ব্যাপারে। হয়ে যাবে আমি নিশ্চিত ছিলাম। উপর মহলে যোগাযোগের কারনে অনেকেরই হয়েছে। মেহনতি মানুষের জমাকৃত টাকা নানা যোগসাজশে তুলে আর ফেরত দেন না। সেই টাকায় বিলাস আর ভোগের জীবন। অবশ্য কিছু টাকা এখানে ওখানে দিতে হয়। এটা জগতের নিয়ম, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। অর্থাৎ উনারাই আসলে সবচেয়ে বড় ভিখারি। নিজের কিছু নেই, অন্যের টাকায় বাহাদুরি। বাইরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট………।।
এরপর আমি আরও কবার ওই বাসার আশপাশ দিয়ে গিয়েছি। আমার চোখে আর প্রাচুর্য চোখে পড়েনি। কাঙ্গালিপনা চোখে পড়েছে। প্রতিবারই –
আমি করুনার চোখে তাকিয়েছিলাম……………।।
PDF Logo_2PDF Version [Published at SMC Magazine “নোঙর” May 2014]
————————-

Atiqul Azam Khan27

আতিকুল আজম খান (২৭) পেশায় মাস্টার মেরিনার। জন্ম/বসবাসঃ চট্টগ্রাম। লেখালেখি – যায় যায় দিন, দৈনিক আজাদি, ম্যাগাজিন, অনলাইন।

Share