Somali pirates free hijacked Bangladeshi vessel MV Abdullah after counting ransom

Somali pirates free hijacked Bangladeshi vessel MV Abdullah after counting ransom

Somali pirates have released a Bangladesh-flagged vessel and its 23-member crew on 14 April 2024 after a ransom was reportedly paid. The bulk carrier was carrying 55,000 tonnes of coal from Mozambique to the United Arab Emirates when it was taken over around 600 nautical miles east of Mogadishu, Somalia’s capital, on March 12, 2024.

The MV Abdullah was carrying coal from Mozambique to the United Arab Emirates (UAE) when it was hijacked off Somalia’s coast about a month ago on 12th March 2024. The pirates alleged that they received $5m, but there is no independent confirmation of the claim.
A spike in hijackings has been reported off Somalia’s coast in recent months. More than a dozen vessels have been targeted since late November.
Security experts said a security vacuum had developed off Somalia’s coast after foreign navies patrolling its waters turned their attention to the Red Sea, where Yemen’s Houthi rebel group have been attacking ships. Between 2005 and 2012, pirates off the Horn of Africa raked in between $339m and $413m by holding crew members hostage and demanding ransom payments, the World Bank has estimated. Reuters news agency reported that it was told by two pirates that a $5m ransom was paid for the release of MV Abdullah and its crew.
The vessel’s owner, the KSRM Group, said the vessel and its crew were freed following negotiations. “We struck a deal with the pirates,” Mizanul Islam of SR Shipping, the group’s maritime arm, told AFP news agency.
“We cannot say more about the money,” he said, adding: “All the crew are safe and secure.”
The ship has since sailed to UAE, escorted by two warships.

জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুটি যুদ্ধজাহাজ ছবি: ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনীর অপারেশন আটলান্টার এক্স পোস্ট থেকে Warships of EUNAVFOR ATALANTA escort the MV ABDULLAH after the release. More information: https://ow.ly/ApFz50RfVyr


জলদস্যুদের কবল থেকে যেভাবে মুক্তি পেল বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ মুক্তিপণের অর্থ পাওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছে জলদস্যুরা।
স্থানীয় সময় শনিবার রাত বারটার দিকে দস্যুরা নেমে যাওয়ার পর ২৩ ক্রুসহ জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে রওনা হয়েছে জানিয়েছেন জাহাজটি মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম।
জাহাজ ও ক্রুদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কত টাকা দিতে হয়েছে তা জানা যায়নি। যদিও এ বিষয়ে রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামে কেএসআরএম গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মুক্তিপণ দিয়ে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার কোন তথ্য তাদের জানা নেই।
ওদিকে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তির পর ক্রুরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের মা শাহানুর আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. খানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
গত বারই মার্চ কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাওয়ার সময় জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আব্দুল্লাহ।
জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের কাছাকাছি অবস্থান করছিলো।
‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম দেওয়া হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত বছর এটি সংগ্রহ করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করতে থাকে কেএসআরএম গ্রুপ।
Source: BBC Bangla

এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নাবিকেরা ছবি: সংগৃহীত


জিম্মিদশা কাটল ২৩ নাবিকের: মুক্ত হয়ে দুবাইয়ের পথে এমভি আবদুল্লাহ

সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিক ৩২ দিন পর মুক্তি পেয়েছেন। শনিবার রাত ৩টা ৮ মিনিটে জাহাজে অবস্থানরত জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। এরপরই মূলত অবসান ঘটে জিম্মিদশার। রোববার জাহাজটির মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের পক্ষ থেকে মুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ পাওয়ার পরই জলদস্যুরা নাবিকদের ছেড়ে দেয়। সমঝোতার মাধ্যমে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাহাজের মালিকপক্ষ। তবে মুক্তিপণের অঙ্ক নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তারা।

সূত্র জানায়, মুক্তির আগে ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ থেকে পর পর তিনটি চক্কর দিয়ে ডলারভর্তি তিনটি ব্যাগ জাহাজটির পাশে পানিতে ফেলা হয়। মুক্তিপণ পাওয়ার ৮ ঘণ্টা পর জলদস্যুরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে জাহাজ থেকে নেমে যায়। এরপর জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করে দুবাইয়ের হারামিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া নাবিকরাই জাহাজটি নিয়ে রওয়ানা হন। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। আগামী ১৯ অথবা ২০ এপ্রিল জাহাজটি দুবাই পৌঁছাতে পারে। সেখান থেকেই নাবিকদের জাহাজে অথবা ফ্লাইটে করে দেশে ফেরানোর কথা রয়েছে। সুস্থ অবস্থায়ই জাহাজের সব নাবিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে নাবিকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই সময় তারা সুস্থ আছেন বলেও জানান। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটি মুক্তির বিষয়ে রোববার নগরীর আগ্রাবাদে এসআর শিপিংয়ের অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন মালিকপক্ষ। এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, আমরা ইন্টারন্যাশনাল শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমাদের ইন্টারন্যাশনাল আইন মেনেই ব্যবসা করতে হয়। উদ্ধার প্রক্রিয়াটাও ইন্টারন্যাশনাল ল’ অনুযায়ী একদম লিগ্যালি হয়েছে।

শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে জিম্মি জাহাজ ও নাবিক মুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত বার্তা পান জানিয়ে তিনি বলেন, ৯টি বোটে ৬৫ জলদস্যু চারপাশ ঘিরে ছিল। এমভি আবদুল্লাহ’র মধ্যেও জলদস্যুরা ছিল। তারা চলে যাওয়ার পর নাবিকদের সঙ্গে আমাদের ভিডিওকলে কথা হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে কবির গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, জাহাজটি ১৯ বা ২০ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছাবে। সেখানে কিছু ফরমালিটিজ আছে। সেগুলো শেষ করতে চার-পাঁচদিন লাগতে পারে। সেটা শেষ করে তারা হয়তো ওই জাহাজেই ব্যাক করতে পারেন অথবা ফ্লাই করতে পারেন দুবাই থেকে। সে সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। সময় এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে জাহাজটাকে আমরা ফেরত আনছি। কারণ, জাহাজের কন্ডিশন একটু চেক করার প্রয়োজন আছে। মুক্তিপণের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু জিনিস আমরা প্রকাশ করতে পারব না। পাইরেসিকে আমরা এনকারেজ করতে পারব না।

জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করতে সরকার সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছে জানিয়ে শাহরিয়ার জাহান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। পরররাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিক্ষামন্ত্রী টাইম টু টাইম আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তিনি বলেন, বিদেশি যুদ্ধজাহাজ ফোর্সফুলি আমাদের জাহাজটাকেও টেকওভার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের সরকারের অবস্থান ছিল, আমাদের মানুষের কোনো ক্ষতি হয় এ ধরনের কোনো অবস্থায় আমরা যাব না। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকেও এ ধরনের অবস্থান ছিল।

যেভাবে দেওয়া হয় মুক্তিপণ : জানা গেছে, জলদস্যুরা নাবিকদের জাহাজের ডেকে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। চারপাশে অস্ত্র তাক করে ছিল তারা। একটি ছোট আকারের উড়োজাহাজ চক্কর দিয়ে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র পাশে ডলারভর্তি তিনটি হলুদ রঙের ব্যাগ পানিতে ফেলে। সব নাবিক জীবিত ও অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই উড়োজাহাজ থেকে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। জাহাজের পাশেই সাগরে দুটি স্পিডবোটে অপেক্ষমাণ জলদস্যুরা সঙ্গে সঙ্গে পানি-প্রতিরোধী সেই ব্যাগ তুলে নেয়। এরপর ডলারগুলো পরীক্ষা করে আসল বলে নিশ্চিত হওয়ার পর দস্যুরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে স্পিডবোটে করে জাহাজ ত্যাগ করে। তার আগে বলে যায়, ‘তোমরা এখন মুক্ত’। মুক্তির আনন্দে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন নাবিকরা। মুক্তি পাওয়ার পর জাহাজ থেকে নাবিক আইনুল তার ছোট ভাই মুন্নার সঙ্গে জাহাজ থেকে কথা বলেন। আইনুলের উদ্ধৃতি দিয়ে মুন্না সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার সময় সব নাবিককে জাহাজের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায় জলদস্যুরা। তাদেরকে তখন গানপয়েন্টে রাখা হয়। তখন তারা ভয় পেয়ে যায়। এর পর প্লেন থেকে সাগরে ডলার ফেলা হয়। সেই ডলার তুলে এনে জাহাজে গুনে দেখে ঠিক আছে কি না। এর কয়েক ঘণ্টা পর দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে নিজেদের বোটে করে চলে যায়।’

মুক্তি পাওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের সব নাবিক যে জীবিত ও অক্ষত আছেন তার ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়। ওই চিত্রে দেখা যায় ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ সব নাবিককে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সেই ভিডিওচিত্র মধ্যস্থতাকারীসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এর পরই উড়োজাহাজ থেকে মুক্তিপণের ডলারভর্তি ব্যাগ সাগরে ফেলা হয় জলদস্যুদের জন্য।

কত টাকা মুক্তিপণ : মুক্তিপণের বিষয়ে জাহাজ-মালিকপক্ষ কোনো তথ্য না দিলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৫ কোটি টাকা) পাওয়ার পর দস্যুরা নাবিকদের মুক্তি দিয়েছে। ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ ছাড়িয়ে আনতে জলদস্যুদের ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। দুজন জলদস্যুর বরাতে বার্তা সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে। জলদস্যুদের একজন আবদিরশিদ ইউসুফ রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দুই রাত আগেই আমাদের কাছে ডলার আনা হয়। আমরা যাচাই করে দেখেছি, ডলারগুলো আসল না জাল। তারপর আমরা ডলারগুলো কয়েকটি দলের মধ্যে ভাগ করে সরকারি বাহিনীকে এড়িয়ে জাহাজ ত্যাগ করি।’ সব নাবিকসহ জাহাজটিকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানান আবদিরশিদ ইউসুফ। সোমালিয়া সরকারের কর্মকর্তারা অবশ্য এ বিষেয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে উল্লেখ করে বার্তা সংস্থাটি। সোমালিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যমও মুক্তিপণের পরিমাণ কত সে বিষয়ে একই তথ্য দিয়েছে। সোমালিয়ার গণমাধ্যম ‘পান্টল্যান্ড মিরর’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে জানিয়েছে, ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার মুক্তিপণ পাওয়ার পর জলদস্যুরা বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ’কে ছেড়ে দিয়েছে।

সোমালিয়ায় ৮ জলদস্যু গ্রেফতার : সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ডের পুলিশ আট জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে, যারা বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনায় জড়িত ছিল। পান্টল্যান্ড পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে সোমালিয়ার ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘গেরো’ রোববার এ খবর দিয়েছে। এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজে শেষ পর্যন্ত ৬৫ জন জলদস্যু ছিল। বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ৩টার দিকে তারা নয়টি স্পিডবোটে করে জাহাজ ছেড়ে যায়। এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হওয়ার কিছু সময় পর এই জলদস্যুদের গ্রেফতারের খবর এলেও তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসাবে দেওয়া অর্থ উদ্ধারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পান্টল্যান্ড পুলিশের এক কর্মকর্তা গেরোকে বলেন, মুক্তিপণ দেওয়ার প্রবণতা জলদস্যুদের আরও বেশি জাহাজে হামলা করতে উৎসাহিত করতে পারে।

পান্টল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্স রোববার বিকালে তাদের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় জানায়, তারা ভারত মহাসাগরের পান্টল্যান্ড উপকূলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এরকম এক অভিযানে তারা জলদস্যুদের আটক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে। ওই পোস্টের সঙ্গে দেওয়া চারটি ছবির একটিতে আট জলদস্যুকে দেখা যাচ্ছে, যাদের পাহারা দিচ্ছিলেন তিন পুলিশ সদস্য। গেরোর প্রতিবেদনে বলা হয়, জলদস্যুতা ঠেকাতে পান্টল্যান্ড মেরিন পুলিশ তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে মিলে সোমালিয়া উপকূলে নজরদারি বাড়িয়েছে।
Source : Jugantor

The Bangladesh-flagged bulk carrier MV The MV Abdullah’s owner, KSRM Group, gave a press conference in Chittagong, Bangladesh after Somali pirates freed the cargo vessel and its crew members.


সোমালিয়ায় জলদস্যুতা ও এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই: গোলাম সোহরাওয়ার্দী

২০১০ সালের ডিসেম্বরে এমভি জাহান মনি নামে প্রথম বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছরের গত ১২ মার্চ দ্বিতীয় বাংলাদেশি জাহাজ হিসেবে একই পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে এমভি আব্দুল্লাহ। এসআর শিপিং লিমিটেডের মূল কোম্পানি কেএসআরএম গ্রুপ উভয় জাহাজের মালিক। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়, সোমালি জলদস্যুদের সম্পর্কে শিপিং কোম্পানির পর্যাপ্ত জানাশোনা রয়েছে।

সোমালিয়ার জলপথ কিছু সময়ের জন্য শান্ত ছিল। বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনী তাদের জাহাজ রক্ষার জন্য ওই এলাকা পাহারা দেয়। আমরা বাংলাদেশি সরকার কিংবা নৌবাহিনীর সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত নই। বাংলাদেশের সামুদ্রিক নৌপরিবহন বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো তার পরিসর স্বল্প। তাই জাহাজ বা নাবিকদের রক্ষা বা উদ্ধারে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকা পালনের এখনো কোনো সুযোগ নেই।

এমভি জাহান মনির বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে আমি বিশ্বাস করি, জাহাজের মালিকপক্ষ এই কঠিন পরিস্থিতি উতরানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক অবস্থানে রয়েছে।

এ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় কিছু ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে, এবং আমাদের নিউজ চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত খবরকেও অসত্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভবিষ্যতের যেকোনো উদ্ধার অভিযান এবং বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত।

জাহাজের ক্রুরা একটি বার্তা পাঠিয়েছিল যাতে লেখা ছিল: ‘‘এমভি আবদুল্লাহ। সোমালিয়ায় জলদস্যুরা আক্রমণ করেছে, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। তাদের কাছে বন্দুক আছে। আমাদের উপর হামলা হয়েছে।’’

আসিফুর রহমান নামে একজন ক্রু সদস্য ফেসবুকে পোস্ট করেছেন যে, জাহাজটি ‘‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে, এবং একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে জলদস্যুদের জাহাজে উঠতে দেখা গেছে।

প্রায় ৫০ জনের সোমালি জলদস্যুর একটি দল গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন ক্রুসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ হাইজ্যাক করে।

অ্যামব্রে নামে একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, একদল সশস্ত্র ব্যক্তি জাহাজটির দখল নিয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাটি দাবি করেছে, ঘটনাটি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল (১ হাজার ১১১ কিলোমিটার) পূর্বে ভারত মহাসাগরে ঘটেছে।

ছিনতাইকারীরা জলদস্যু- এমনটা ধরে নিলে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হবে। তারা সু-প্রশিক্ষিত ন্যাভিগেটর এবং ব্যবসায়িক ব্যক্তি- যারা সামুদ্রিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বোঝে। তারা খুব দ্রুত এবং নিরাপদ উপায়ে মুক্তিপণ চায়। তারা ঠিকভাবেই জানে টাকার উৎস কোথায়? জাহাজের পি অ্যান্ড আই ক্ষতিপূরণকারী ক্লাবকে (বীমাকারী) জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আলোচনা শুরু করতে হবে। তবে অবশ্যই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে।

পান্টল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্স (পিএমপিএফ) কিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে- এমন খবরের বিষয়ে আস্থা রাখা নাও যেতে পারে। পিএমপিএফ হলো একটি সুসজ্জিত ইউনিট, যা দক্ষিণ আফ্রিকার আধা-সামরিক ভাড়াটেদের দ্বারা প্রশিক্ষিত এবং যারা ব্যক্তিগতভাবে পান্টল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি অনুগত, তবে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ইস্যু রয়েছে।

এরই মধ্যে জলদস্যুদের সঙ্গে বাংলাদেশি ক্রুদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে আমাদের গণমাধ্যম ও সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। রমজান মাস হওয়ায় এবং জলদস্যুরা মুসলমান হওয়ায় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে পরবর্তীতে কী হয়।

লেখক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত একটি মেরিটাইম-সম্পর্কিত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, বিশ্বব্যাপী যার শাখা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএএ) সভাপতি।
Writer: Ghulam Suhrawardi (6N); Source : Jugantor


যে কারণে কম সময়ে ছাড়া পেল এমভি আবদুল্লাহ

ছিনতাই হওয়ার পর প্রায় এক মাসের মাথায় মুক্তিপণ দিয়ে সোমালিয়ার উপকূল থেকে জিম্মি জাহাজ ছাড়িয়ে আনার নজির খুবই কম। সে তুলনায় এমভি আবদুল্লাহ দ্রুত সময়ে মুক্ত হয়েছে। জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের আগের অভিজ্ঞতা ও দস্যুদের ওপর চাপ বাড়ায় সমঝোতার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে বলে মনে করেন সমঝোতার প্রক্রিয়ায় থাকা কর্মকর্তারা।
সোমালিয়ার দস্যুরা ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে ১২ মার্চ। মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়া পায় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিটে, অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল প্রথম প্রহরে। এ হিসাবে জিম্মি করার ৩২ দিন পর জাহাজটি মুক্তি পেয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালে কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। ওই জাহাজ উদ্ধার করতে ৯৯ দিন সময় লেগেছিল।
এমভি আবদুল্লাহর আগে সর্বশেষ মুক্তিপণ ছাড়াই বুলগেরিয়ার জাহাজ এমভি রুয়েনকে উদ্ধার করা হয়। এমভি রুয়েন কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করে গত ১৬ মার্চ। তিন মাস জিম্মিদশায় ছিল জাহাজটি। এর আগে ইসরায়েলের একটি জাহাজ ছিনতাই করলেও সফল হয়নি দস্যুরা। এক দিনের মাথায় আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী জাহাজটি উদ্ধার করে।
সোমালিয়ার উপকূলে দস্যুতা চরমে ওঠে ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। ২০১২ সালের পর দস্যুতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১৭ সালে দুটি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও উদ্ধার করা হয়। দস্যুতার হার যখন বেশি ছিল, তখনো গড়ে প্রতিটি জাহাজ উদ্ধারে কয়েক মাস সময় লেগেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ওয়ান আর্থ ফিউচার ফাউন্ডেশন এক দশক আগে ‘ওশান্স বিয়ন্ড পাইরেসি’ প্রকল্পের আওতায় সোমালিয়া উপকূলে দস্যুতা নিয়ে সমীক্ষা চালায়। সংস্থাটির ‘দ্য ইকোনমিক কস্ট অব সোমালি পাইরেসি ২০১২’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে ৩১টি জাহাজ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছিল। প্রতিটি জাহাজ ছাড়া পেতে গড় সময় লেগেছে ১৭৮ দিন। ২০১২ সালে আটটি জাহাজ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে গড়ে সময় লেগেছে ৩১৬ দিন।
কীভাবে এত দ্রুত জাহাজটি মুক্ত করা সম্ভব হলো-জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের পর প্রথম দিন থেকেই আমরা কাজ শুরু করি। নাবিকদের দ্রুত নিরাপদে ফেরানোই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আগের অভিজ্ঞতা থাকায় দস্যুদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সমঝোতার প্রক্রিয়াগুলোও আমরা গুছিয়ে এনেছিলাম। সোমালিয়ার উপকূলে দস্যুতার প্রবণতা বাড়ার পর আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর তৎপরতা বাড়ায় দস্যুরাও চাপে ছিল। সরকারও নাবিকদের উদ্ধারে আমাদের সব রকমের সহযোগিতা করেছে। এতে খুব দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
কেএসআরএম গ্রুপ ও বাণিজ্যিক জাহাজের দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমভি জাহান মণির জিম্মির ঘটনার সময় দস্যুদের হাতে অনেকগুলো জাহাজ ছিল। সে সময় একের পর এক জাহাজ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া হচ্ছিল। দস্যুদের হাতে নগদ অর্থের প্রবাহ ছিল। ফলে মুক্তিপণের সমঝোতায় খুব তাড়া ছিল না দস্যুদের। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। দস্যুদের হাতে নগদ অর্থ নেই। গত নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাই করলেও মুক্তিপণ ছাড়াই দুটি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ শুধু বাংলাদেশি এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি ছিল। ফলে দস্যুরাও যত দ্রুত সম্ভব নগদ অর্থ পাওয়ার চেষ্টায় ছিল। এ কারণে মালিকপক্ষ ও দস্যু-দুই পক্ষের বোঝাপড়া দ্রুত হয়েছে।
সোমালিয়ায় জিম্মি বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের দীর্ঘ সময় জিম্মি থাকার ঘটনা এমভি আলবেদো জাহাজের। মালয়েশিয়ার এই জাহাজের নাবিকদের ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ছিনতাই করেছিল দস্যুরা। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই জাহাজটি ডুবে যায়। ধাপে ধাপে নাবিকেরা সর্বশেষ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৪ সালের ৭ জুন। অর্থাৎ এই জাহাজের নাবিকেরা মুক্তি পেতে ১ হাজার ২৮০ দিন বা সাড়ে ৩ বছর সময় লেগেছিল।
বাণিজ্যিক জাহাজ ছাড়া দীর্ঘ সময় জিম্মি রাখার ঘটনা ঘটেছিল একটি মাছ ধরার জাহাজের। মাছ ধরার জাহাজটির নাম এফবি প্রান্তলয়-১২। জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোমালিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জিম্মি রাখার ঘটনা এটি। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল ছিনতাই হওয়া মাছ ধরার জাহাজটি মুক্ত হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। জাহাজটির ২৪ জন নাবিকের মধ্যে ৬ জন নানা পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। মিয়ানমারের ১৪ জন নাবিক মুক্তি পান ২০১১ সালে। সর্বশেষ ৪ জন মুক্তি পান ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ এই ৪ জন মুক্তি পেয়েছেন ৪ বছর ৩১৩ দিনে বা ১ হাজার ৭৭৪ দিনে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক দশক আগের চেয়ে এখনকার সোমালিয়ার উপকূলের পরিস্থিতি ভিন্ন। জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া জাহাজের সংখ্যা ছিল কম। দস্যুদের অর্থের প্রয়োজন ছিল বেশি। আবার জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপও দ্রুত সমঝোতা করতে চেয়েছিল। ফলে আগের ঘটনাগুলোর চেয়ে কম সময়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের মুক্ত করে আনা সম্ভব হয়।
source : prothomalo


এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেনের বর্ণনায় উঠে এল দুর্বিষহ জিম্মিদশার ৩৩ দিন

এমভি আবদুল্লাহর মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদের সঙ্গে ইইউ নৌবাহিনীর এক সদস্যছবি: সংগৃহীত

৩৩ দিন জিম্মি করে রাখার পর গত শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জিম্মিদশার শুরু থেকে মুক্তি পর্যন্ত সবকিছুই ঘটে জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদের চোখের সামনে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথে থাকা জাহাজটি থেকে গতকাল মঙ্গলবার হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে দুর্বিষহ এই জিম্মিদশার বর্ণনা দিয়েছেন ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ।

যেভাবে হানা দেয় জলদস্যুরা
১২ মার্চের সকাল। ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নীল সাগরে (ভারত মহাসাগর) ছুটে চলছিল। কেবিনে অফিসের কাজ সেরে সকাল সাড়ে ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) ব্রিজে (জাহাজ পরিচালনা করা হয় যে কক্ষ থেকে) মাস্টারের চেয়ারে গিয়ে বসি। জাহাজের তৃতীয় কর্মকর্তা তখন দায়িত্বে। তাঁকে বলি, ‘সব ঠিকঠাক আছে? চোর নাই তো?’
মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা বোঝাই করে সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর হয়ে যাচ্ছি আমরা। একটু পরই তৃতীয় কর্মকর্তা জানালেন, ‘স্যার, জাহাজের ডান পাশে অনেক দূরে একটি ফিশিং বোট দেখা যাচ্ছে।’
ফিশিং বোটটি দৃশ্যমান হওয়ার পর জাহাজটি বাঁয়ে ঘুরিয়ে দিই, যাতে ব্যবধান বেড়ে যায়। নৌযানটি আমরা পর্যবেক্ষণ শুরু করি। হঠাৎ করে দেখি, নৌযানটি থেকে একটি স্পিডবোট সাগরে ভাসানো হয়েছে। তখনই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, জলদস্যুরা আসছে।
স্পিডবোট দ্রুতগতিতে আমাদের দিকে আসতে থাকে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কয়লা বোঝাই থাকায় আমাদের গতি ছিল কম। ঘণ্টায় সাড়ে ১০ নটিক্যাল মাইল।
স্পিডবোটটি কাছাকাছি চলে আসার পর একবার ঢেউ সৃষ্টি করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। উচ্চচাপে পানি ছিটানো হয়। আবার ডানে-বাঁয়ে জাহাজ ঘুরিয়ে স্পিডবোটটির গতি কমানোর চেষ্টা শুরু করি।
একই সময়ে জরুরি বার্তার বাটনে চাপ দিই। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগ করি। তবে সেখানে কেউ ফোন ধরেননি। সে সময় ভিএইচএফে (বেতার) যোগাযোগ করে কাছাকাছি কোনো যুদ্ধজাহাজ পাইনি। কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি।
জলদস্যুরা উঠে যাবে জেনে আমাদের শেষ চেষ্টা ছিল জাহাজের সিটাডেলে (সুরক্ষিত কক্ষ) আশ্রয় নেওয়া। মোট ২৩ জন নাবিকের মধ্যে ২০ জনকে সিটাডেলে যাওয়ার নির্দেশ দিই।
সিটাডেলে যাওয়ার আগে বেশ কিছু কাজ করতে হয়। ইঞ্জিন বন্ধ করার জন্য চতুর্থ প্রকৌশলী ইঞ্জিনকক্ষের দিকে দৌড়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে এবং আমি ব্রিজের নিচের ডেকে থেকে সিটাডেলে যাওয়ার শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তবে চারজন জলদস্যু অস্বাভাবিক দ্রুততায় ব্রিজে উঠে প্রথমে দ্বিতীয় কর্মকর্তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘মাস্টার মাস্টার’ বলে আমাকে খুঁজতে থাকে।
দ্বিতীয় কর্মকর্তা ভয় পেয়ে যান। প্রাণহানির শঙ্কায় আমি দ্রুত সেখানে চলে এসে হাত তুলি। তখনই জলদস্যুরা ‘অল ক্রু’ বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপরই আমি সব নাবিককে ব্রিজে চলে আসার নির্দেশ দিই।
শুরুতে ভয় পেয়ে যান নাবিকেরা। সেখানকার সময় সকাল ১০টা ৬ মিনিট থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে যায়।
নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর জলদস্যুরা জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করার কথা বলে। সে অনুযায়ী ইঞ্জিন বন্ধ করার পর মাছ ধরার নৌযানটি আমাদের জাহাজের সঙ্গে বাঁধা হয়। ওই নৌযানে একজন পাকিস্তানি এবং বাকিরা ছিলেন ইরানের জেলে।
জাহাজ থেকে নৌযানটিতে তেল দেওয়ার নির্দেশ দেয় জলদস্যুরা। তেল দেওয়ার পরই জলদস্যুরা নৌযানটি ছেড়ে দেয়। নৌযানে থাকা সব জলদস্যু জাহাজে ওঠে।
মোট ১২ জন সশস্ত্র জলদস্যু আমাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আনন্দে তারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আমাদের কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেয় তারা। তবে ল্যাপটপ ও কয়েকটি মুঠোফোন আমরা লুকিয়ে রেখেছিলাম।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর এই ছবি গত ১৫ মার্চ প্রকাশ করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী ছবি: ভারতীয় নৌবাহিনীর এক্স পোস্ট থেকে নেওয়া


জিম্মিদশা শুরু
মাছ ধরার নৌযানটি চলে যাওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন চালু করি। সোমালিয়ার উপকূলের দিকে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় জলদস্যুরা। সে সময় একজন জলদস্যু একটি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। কল দেওয়ার পর ‘আহমেদ’ পরিচয় দিয়ে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘হাউ আর ইউ ক্যাপ্টেন? এভরিথিং ইজ ওকে?’ এরপরই জাহাজটি কীভাবে কোথায় নিতে হবে, তার পথনির্দেশনা দিয়ে দেয় জলদস্যুনেতা। সে অনুযায়ী জাহাজ চলতে থাকে।
রোজার দ্বিতীয় দিন তখন। ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে চিফ কুককে ইফতারি তৈরি করার জন্য ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি জলদস্যুদের। ছোলা দিয়ে কোনোভাবে ইফতার সেরে নিই আমরা সবাই।
দ্বিতীয় দিন ইফতারের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেশন আটলান্টার একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পিছু নেয়। যুদ্ধজাহাজ থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ভিএইচএফে জলদস্যুদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, ‘তোমরা জাহাজ ছেড়ে যাও। না হলে অভিযান চালানো হবে।’
নির্দেশনায় কোনো কাজ না হওয়ায় যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ানো হয়। হেলিকপ্টারটি এমভি আবদুল্লাহর চারপাশে ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে এমভি আবদুল্লাহর চারপাশে পানিতে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
জলদস্যুরা আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে রাখে। যুদ্ধজাহাজ যাতে দ্রুত চলে যায়, তা বলার জন্য আমাকে জলদস্যুরা ভয় দেখায়। প্রাণহানির আশঙ্কায় আমি ভিএইচএফে জানাই, ‘আমরা অস্ত্রের মুখে আছি। তোমরা দূরে চলে যাও। নাবিকদের নিরাপত্তার জন্য হলেও তোমরা একটু দূরে সরে যাও।’ প্রায় আধা ঘণ্টা পর যুদ্ধজাহাজ দূরে চলে যায়।
দুই দিন ছয় ঘণ্টার মাথায় এমভি আবদুল্লাহকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সোমালিয়ার উপকূলের কাছাকাছি যাওয়ার পর ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি চলে আসে।
ভারতীয় যুদ্ধজাহাজে একজন বাংলায় কথা বলতে পারতেন। জলদস্যুদের অস্ত্রের মুখে তাঁকেও চলে যেতে বলি।
যুদ্ধজাহাজ পিছু নেওয়ায় দুই দফা নোঙর তুলে তৃতীয় দফায় সোমালিয়া উপকূলের জেফলের দিকে এমভি আবদুল্লাহকে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল তখন জাহাজটি।

জিম্মিদশার দিনগুলো
সোমালিয়ার উপকূলে যাওয়ার আগে ১২ জন জলদস্যু আমাদের জিম্মি করে রেখেছিল। জেফল উপকূলে দ্বিতীয়বার নোঙর করার সময় আরও ১০ জন জলদস্যু অস্ত্র নিয়ে আসে।
শেষবার যখন নোঙর ফেলা হয়, তখন আরও ১৩ জন জলদস্যু জাহাজে যোগ দেয়। সব মিলিয়ে ৩৫ জন জলদস্যু জাহাজে ওঠে।
যুদ্ধজাহাজ পিছু নেওয়ায় জলদস্যুরা জাহাজে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে। রকেট লঞ্চার, মেশিনগান, এম-সিক্সটিনসহ নানা রকমের অস্ত্র। অস্ত্রের বহর দেখে মনে হয়েছে, যেন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি।
শুরুর দিকে ব্রিজ কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতাম আমরা। একটি প্রসাধনকক্ষ ব্যবহার করতাম সবাই। জলদস্যুরা সার্বক্ষণিক অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিত।
আমি দেখলাম, জলদস্যুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করে উপায় নেই। ভালো ব্যবহার করে তাদের বুঝিয়ে আমরা কেবিনে থাকার সুযোগ পেলাম। কত দিনে মুক্তি পাব, তা জানি না। তাই খাবারদাবার রেশনিং করতে হবে। সে অনুযায়ী রেশনিং শুরু করি।
আমরা ১৬ জানুয়ারি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পথে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর হয়ে মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা বোঝাই করেছিলাম।
চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রায় ১৪ লাখ টাকার বাজারসদাইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ এসআর শিপিং (কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান)। জাহাজে তিন মাসের খাবার ছিল। মাছ, মাংস থেকে শুরু করে শুকনো খাবার—সবই ছিল।
মাপুতো বন্দর থেকে জুস, দুধ, সবজি, ফল ও পানি নিয়েছিলাম। জাহাজে খাবার থাকলেও কত দিন জিম্মি থাকতে হয়, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিছুটা ভয় ছিল—খাবার যদি শেষ হয়ে যায়! কারণ, আগে জিম্মি হওয়া জাহান মণি জাহাজের ১০০ দিন লেগেছিল মুক্ত হতে।
জলদস্যুরা জাহাজে দুম্বা নিয়ে আসত। গরম পানিতে সেদ্ধ করে লবণ ও কিছু মসলা মিশিয়ে তারা তা খেত। এগুলো আমাদের জন্য খাওয়ার অযোগ্য ছিল। একপর্যায়ে তারা নিজেদের রান্না করার জন্য লোক নিয়ে আসে জাহাজে। আমরা ইফতারের সময় লেবুসহ নানা ধরনের শরবত পান করতাম। সাহ্‌রিতে ভাতের পাশাপাশি দুধ থাকত।
জাহাজে পানি শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব—এমন আশঙ্কায় শুধু খাবার পানি সরবরাহ ঠিক রাখতাম আমরা। বাথরুমে সাগরের পানি ব্যবহার শুরুর অনুরোধ করি জলদস্যুদের। এতে জাহাজে থাকা পানির ওপর চাপ কমে। সপ্তাহে দুই দিন গোসল করে পানি রেশনিং করতে থাকি আমরা।

গণমাধ্যমে ছবি দেখে জলদস্যুদের হুমকি
ঈদুল ফিতরের দিন আমরা জলদস্যুদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে নামাজ আদায় করি। জাহাজের পণ্য রাখার খোলের ওপর নামাজ আদায় শেষে ছবি তোলার জন্য জলদস্যুদের কাছে অনুরোধ করি।
জলদস্যুদের মধ্যে যে ব্যক্তি (আহমেদ) ইংরেজি জানত, সে ক্যামেরা দিয়ে আমাদের ছবি তুলে দেয়। পরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছবি প্রকাশ হলে তা জেনে যায় জলদস্যুরা।
গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে জলদস্যুরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। তাদের সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই নাবিকদের কাছে মুঠোফোন আছে। আহমেদ বলতে থাকে, ‘তোরা এই ছবি পাঠিয়েছিস?’ পরে আমরা বলি, ‘মুঠোফোন নয়, ল্যাপটপ দিয়ে ছবি পাঠানো হয়েছে।’ পরে ল্যাপটপ কেড়ে নেয় জলদস্যুরা।

জলদস্যুরা যেদিন ভিডিও করল
মুক্তি পাওয়ার দুই দিন আগে হঠাৎ আহমেদ এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে দাঁড়াতে বলে। সে আমাদের ভিডিও করতে শুরু করে। তার কথা অনুযায়ী, আমি নাবিকদের নাম জিজ্ঞাসা করে পরিচয় করে দিই। শুনেছি, এই ভিডিও তারা কেএসআরএম গ্রুপের কাছে পাঠিয়েছে। আমরা যে সুস্থ আছি, তা দেখতে চেয়েছে কেএসআরএম গ্রুপ। আমাদের মনে তখন আশার সঞ্চার হয়।

মুক্তির ক্ষণ
দুই দিন পর আবার ডাক পড়ল সব নাবিকের। আমাদের সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে জলদস্যুরা। রোদের দিকে সামনে তাকানো যাচ্ছিল না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখি, ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ আসছে। অদূরে দুটি যুদ্ধজাহাজ। আমরা ভয় পেয়ে যাই। কারণ, তখন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৬৫ জন জলদস্যু। তাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আছে।
উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার পর আমাদের আবার ব্রিজে নিয়ে মাথা নিচু করে বসিয়ে রাখে জলদস্যুরা। এ সময় কী হয়েছে, আমরা কিছু দেখিনি।
একপর্যায়ে জলদস্যুদের কথায় এমভি আবদুল্লাহর নোঙর তুলে পেছনের দিকে সরিয়ে নিতে থাকি। এর আগে চারটি স্পিডবোটে করে বেশ কিছুসংখ্যক জলদস্যু তীরের দিকে চলে যায়। জাহাজ পেছনের দিকে সরিয়ে নেওয়া হতে থাকে। একপর্যায়ে দেখতে পাই, রাতে তীর থেকে জাহাজের দিকে আলো ফেলে ইশারা দেওয়া হচ্ছে।
জলদস্যুরা জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ইঞ্জিন বন্ধ করার পর জলদস্যুরা বলে, ‘ক্যাপ্টেন, কাম।’ এ সময় পাঁচটি স্পিডবোটে করে সব জলদস্যু অস্ত্রসহ জাহাজ থেকে নেমে যায়। সোমালিয়ার সময় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিটে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল প্রথম প্রহরে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর বাড়তি নিরাপত্তায় এমভি আবদুল্লাহর চারপাশে এভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে

মুক্তির আনন্দ
জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পর জাহাজটি ঘুরিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে থাকি। নাবিকদের মনে তখন নতুন জীবন পাওয়ার স্বাদ। সবাই বাড়িতে স্বজনদের কাছে মুক্তির খবর জানাতে থাকেন।
রাতের বেলায় জাহাজ চলছে। দুই পাশে তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ। সকাল হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুদ্ধজাহাজ থেকে নৌবাহিনীর সদস্যরা আমাদের জাহাজে ওঠেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। নাবিকেরা মনের আনন্দে ছবি তুলতে থাকেন।
আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীতে থাকা চিকিৎসকেরা আমাদের সব নাবিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। স্প্যানিশ নৌবাহিনীর একজন নারী চিকিৎসক আমাকে বলেন, ‘সব নাবিক সুস্থ আছেন।’

এত দ্রুত ছাড়া পাব কল্পনা করিনি
জলদস্যুদের হাত থেকে এত দ্রুত ছাড়া পাব, তা কখনো কল্পনা করিনি। কারণ, সোমালিয়ার উপকূল থেকে জিম্মি জাহাজের এক মাসের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার ঘটনার নজির খুব একটা নেই।
জিম্মি করার পর অনেক দেশের মালিকপক্ষ জাহাজ পরিত্যক্ত করে চলে গেছে—এমন উদাহরণও আছে। তবে আমরা নিশ্চিত ছিলাম, কেএসআরএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহজাহান ও তাঁর সন্তানেরা যেভাবেই হোক, নাবিকদের জীবন রক্ষা করবেন।
জিম্মিদশার পর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদর দপ্তর সার্বক্ষণিক আমাদের জাহাজের অবস্থানের ওপর নজর রেখেছে। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সব সময় আমাদের পাশেই ছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমাদের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন, তা আমাদের জন্য বড় পাওয়া।

জাহাজ এখন যেখানে
গতকাল মঙ্গলবার রাতেও জাহাজটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। দুবাইমুখী জাহাজটির পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। আজ বুধবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে ২২ এপ্রিল দুপুরের মধ্যে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাতে পারে বলে জানান ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ।
প্রথম আলোর রিপোর্ট।


Share