একটি সেতুর গল্পঃ মাহমুদ- ২১ ন

একটি সেতুর গল্পঃ মাহমুদ- ২১ ন

উত্তাল উত্তমাশাঃ ১৪ জানুয়ারি ২০২২

গত রাত থেকেই সমুদ্র উত্তাল। বাতাসের গতিবেগ অনেক বেড়েছে, সাথে ঢেউ। রোলিং তেমন নেই, কারণ ঢেউ একদম সামনে থেকে, তবে মাঝে মধ্যে ঢেউ এর উপর আছাড় খাচ্ছে জাহাজের মাথা। বৃষ্টি হলে কই মাছ যেমন ডাঙ্গায় উঠতে চায়, আর সে প্রচেষ্টায় সে মাথা উঁচু করে একেকবার আছড়ে পরে, আমাদের জাহাজ অনেকটা তেমনই করছে। বিশাল মহাসাগরের কাছে জাহাজ যতই বিশাল হোক, সে বালুকণা মাত্র। তার পরেও প্রযুক্তি আর প্রকৃতির লড়াই চলছে অবিরাম। আমার ছোট ছেলে আড়াই বছর বয়সে প্রচণ্ড জেদি ছিল। ক্ষুদ্র দেহ আর নিঃসহায় হাত নিয়ে তুমুল সংগ্রাম করত। অনেক সময় তাকে জাপটে ধরে রাখতাম, কিন্তু সেই লিকলিকে শরীর নিয়ে বাপের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেত, এবং বলা যায় জিতেও যেত। আমরা জাহাজ নিয়ে অনেকটা তেমনই করছি, দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের বিরুদ্ধে গোঁয়ারের মত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি, আমাকে এগুতেই হবে।

উত্তাল সাগরের চেয়ে আমাদের বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে স্রোত। গত রাত কেটেছে আধো ঘুম আধো জাগা অবস্থায়। দু ঘণ্টা ঘুমিয়েছি হয়ত আবার জেগে ব্রিজে গিয়ে খবর নিয়েছি। সকালে আফ্রিকান উপকুলের ভয়ংকর স্রোত একদম বিপরীতে। সকাল ১১ টার দিকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছি, সে সূত্রে ফোন করে ব্রিজে জানালাম যে আমি ঘুমাব, অফিস থেকে ফোন আসলে যাতে জানানো হয়, মানে জরুরী কিছু না হলে যাতে উঠানো না হয়। এর উত্তরে ইমতিয়াজ জানাল স্পীড নেমে এসেছে ১২-১৩ তে, যেখানে আমাদের স্পীড করার কথা ২২-২৩ কিমি। প্রায় ১০ কিমি স্রোতের বিরুদ্ধে চলছে জাহাজ। এতটাই টায়ার্ড উপরে গিয়ে আর দেখার ইচ্ছে হলো না। জানি কারেন্ট প্রতিকুল, কিন্তু এত শক্তিশালী স্রোত কল্পনা করিনি। লাঞ্চ না করেই ঘুমিয়েছি, সেই ঘুম ভেঙেছে বিকাল চারটায়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন দিলাম, স্পীড কেমন করছে জানার জন্য, শুনলাম কোন উন্নতি হয়নি। ব্রিজে গিয়ে ওয়েদার রিপোর্ট নিয়ে বসলাম। আজকাল ওয়েদার চার্ট গুলো খুবই একুরেট। স্রোতের যে ম্যাপ দেয়া আছে, সে হিসেবে দেখলাম আরেকটু ঘুরে গেলে হয়তো স্রোত কিছুটা কম হবে, তবে দূরত্ব বাড়বে। এটা অনেকটা, ঢাকার রাস্তায় যেমন একটু ঘুরে গিয়েও কম জ্যামের রাস্তা বেছে নেই, তেমন। এখন স্রোতই আমাদের জ্যাম। ইলেকট্রনিক চার্টে মেপে দেখলাম ঘুরে গেলে মাইল দশেক অতিরিক্ত, সুতরাং একটু চেষ্টা করে দেখা যায়। জাহাজ আরও সমুদ্রের গভীর দিয়ে নূতন রুট তৈরি করে কোর্স পাল্টে দিলাম, পাল্টানোর সাথে সাথেই স্পীড একটু একটু করে বাড়তে লাগল।

আমরা এখন যাচ্ছি পোর্ট এলিজাবেথ উত্তর দিকে রেখে, সামনে ডারবানের দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ বন্দর। জোহানসবার্গ এবং কেপটাউনের পরে বড় শহর ডারবান। ডারবান নাবিকদের খুব পরিচিত, এখানে আসা যাওয়া হয় অনেকেরই। কেপ টাউনে যখন ডাচরা ছিল, তখনই ডারবান তাদের করায়ত্তে আসে। তবে এখন আমরা প্রায় ষাট কিমি দূর দিয়ে পার হচ্ছি, বিশেষ করে স্রোতের কারণে। তাই এই আবহাওয়াতে ডারবানের আলোও দেখা যাবে না। পোর্ট এলিজাবেথ, ডারবান সহ এ এলাকাটাকে বলা হয় ‘নাটাল’। ১৪৯৭ সালে ভাস্কো দা গামা ক্রিসমাসের সময়ে এ এলাকা দিয়ে প্রথম বারের মত ইউরোপ থেকে ভারত যাচ্ছিল। পর্তুগীজ ভাষায় ক্রিসমাসকে নাটাল বলা হয়, সে সূত্রে সে এর নাম করন করেন নাটাল। এ এলাকাটি আরেক কারণে বিখ্যাত, বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর আদিমতম মানব সম্প্রদায় হয়ত এ এলাকাতেই বসবাস করত, প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে। কিন্তু ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে ১৬৮৬ সালের দিকে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জাহাজ ১৬৮৬ সালে ডারবানের উপকুলে বিধস্থ হয়। স্থানীয় আদিবাসীরা জাহাজের নাবিকদের ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের আচরণ ছিল খুবই বন্ধুত্বসুলভ। ডাচ নাবিকরা তাদের সাথে বসবাস শুরু করে এবং তাদের ভাষা শিখে যায়। পরে কেপ টাউন এর ডাচ ঘাঁটি থেকে লোক পাঠানো হয় এদের উদ্ধার করার জন্য। আদিবাসী রাজার সাথে নেগোশিয়েশন করে তাদের ছাড়িয়ে নেয়া হয়, একই সাথে রাজার সাথে সাথে চুক্তি হয় ডারবান এলাকা কিনে নেবার জন্য। ১৬৮৯ সালে আদিবাসী গোত্র “আবাম্বো” দের কাছ থেকে ডাচরা ডারবান এলাকা কিনে নেয় ১৬৫০ পাউন্ড এর বিনিময়ে, সেখান থেকেই বলা চলে ডারবানে ইউরোপীয় আগমন শুরু।

উত্তমাশা অন্তরীপ


আজকে সারাদিন বলতে গেলে কোন কাজ হয় নি, সাগরের সাথে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়াই ছিল বড় কাজ। এরকম আবহাওয়া একটি বড় জাহাজের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ না, তবে কেপ অফ গুড হোপ ফ্রিক ওয়েভের জন্য বিখ্যাত। এখানে যখন বাতাস থাকেনা, তখনও ৩০-৪০ ফিট এর ফ্রিক ওয়েভ সৃষ্টি হবার মত ইতিহাস রয়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজিং এর মাধ্যমে এখন ফ্রিক ওয়েভ সহজে পরিমাপ করা যায়, সর্বোচ্চ ফ্রিক ওয়েভ দেখা গিয়েছে প্রায় ৯৫ ফিট উঁচু। আমাদের মত জাহাজে ২০-৩০ ফিট ঢেউ তে বেশ সহজেই রাইড করতে পারে, কিন্তু হঠাত ফ্রিক ওয়েভ আসলে সেটার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে, বিশেষ করে বড় জাহাজের জন্য। ছোট একটি জাহাজ ঢেউয়ের গাঁ বেয়ে চড়তে পারে সার্ফারদের মতো, কিন্তু বড় জাহাজ দু টুকরো হবারও ইতিহাস আছে। এজন্য লোডেড বড় জাহাজকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়।

রাতে প্রধান চিন্তা থাকে সাগরের দিকে তাকিয়ে বুঝা যায় না কত বড় ঢেউ আসছে। তাই রাতে ডিউটি অফিসারদের বারবার সতর্ক করে দিতে হয়। কোর্স পরিবর্তন করার পর বেশ ভালোই উন্নতি হয়েছে, ঘণ্টা দুয়েক পর ১২ কিমি থেকে ১৫ কিমি, মধ্যরাতে প্রায় ১৭-১৮। এভাবে তবজি গুণতে গুনতেই আজকের দিন শেষ, এবং শুভ রাত্রি।


একটি সেতুর গল্পঃ ১৫ জানুয়ারি ২০২২

আজকেও পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ৭০-৮০ কিমি পার হয়ে যাচ্ছে মাঝে মধ্যেই। গত কাল ঢেউ এর আকার ছিল লম্বাটে, আজকে তা গভীর হয়েছে, যাকে আমরা বলি হেভি এন্ড হাই সুয়েল। গতকাল সূর্য ছিল, আজ প্রায় নেই বললেই চলে, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। আজকে নিয়ে প্রায় তিনদিন চলছে দলাই মারাই, আমার অনুমান আরও ২-৩ দিন চলবে। বাজে আবহাওয়া যখন শুরু হয়, তখন প্রথম এক দুদিন একটু খারাপ লাগে, এর পরে অভ্যাস হয়ে যায়, যেমন আজকে আর তেমন খারাপ লাগছে না। আর এখনকার আবহাওয়া কে খুব একটা খারাপ বললে আল্লাহ নারাজ হবে, বলা চলে খুবই রিজনেবল। জুলাই অগাস্টে এখানকার অবস্থা ভয়ঙ্কর থাকে। জাহাজের গতি এখন বেশ ভালো, প্রায় ২০ কিমি করছি ৭০ কিমি বাতাসের বিরুদ্ধে, এজন্য মনঃ বেশ ফুরফুরে। এর চেয়েও বেশী ফুরফুরে কারণ আজকে আমার ২ মাস পূর্ণ হলো। নভেম্বরের ১৫ তারিখে জাহাজে যোগ দিয়েছি, আজকে জানুয়ারির ১৫। আমাদের কন্ট্রাক্ট এর মেয়াদ চার মাস, তার অর্ধেক শেষ। আরও খুশির খবর এবার হয়ত আরও আগেই ছেড়ে দেয়া হবে। জাহাজ ড্রাই ডকের জন্য চীন যাবে, চীনে কোন সাইন অফ নেই, এমনকি চায়নিজ নাবিকরাও তার নিজের দেশে নামতে পারেনা কভিড এর কারণে। তাই অফিস থেকে জানানো হয়েছে, যারা আগে চলে যেতে চায়, তারা ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে যেতে পারবে। সে হিসেবে আর মাস খানেক পরেই হয়ত বাড়ি ফিরব।

অনেক আগে হুমায়ুন ফরিদির একটি নাটক খুব বিখ্যাত হয়েছিল, একটি সেতুর গল্প। আজকাল সেতু কে কেউ সেতু বলে কিনা জানিনা, সবাই বলে ব্রিজ আর কালভার্ট। বিদেশের কেউ না জানলেও বাংলাদেশে আমরা সবাই জানি ১৯৬৯ সালে নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর পর পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো পদ্মা ব্রিজ। কিন্তু মনে করেন এমেরিকাতে গেলাম, কেউ জানতে চাইল আমি কোন দেশ থেকে এসেছি। বললাম পদ্মা ব্রিজ যে দেশ বানিয়েছে সে দেশ থেকে এসেছি। তখন যদি প্রশ্ন করে ‘পদ্মা ব্রিজ কি?’, তখন কেমন লাগবে? তেমনি আমি যখন প্রতিদিন ডায়রিতে ব্রিজ আর ব্রিজ এর উল্লেখ করি আর মানুষ জানতে চায় ‘ব্রিজ কি জিনিষ’ তখন বেশ কষ্ট পাই। আমার এত বিখ্যাত পদ্মা ব্রিজ কেকেউ চেনেনা? প্রথম আমার ভাগ্নি এরকম প্রশ্ন করেছিল, মামা ব্রিজ কি জিনিষ। প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়েছিলাম, এটা কেমন প্রশ্ন! আসলে জাহাজে সারাদিনে ব্রিজ শব্দটি যতবার উচ্চারিত হয়, স্রষ্টার নাম ও ততবার উচ্চারিত হয় না, তাই কেউ ব্রিজ কি জিগ্যেস করলে মাথা হালকা আউলাইয়া যায়। আমরা জানি বাংলাদেশে একটি অফিস সব কাজ করে, যেমন বনানীতে আগুন লাগলে সেটা কিভাবে নিভাতে হবে, হলি আরটিসানে টেররিস্ট এটাক হলে সেটা কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে, শাহেদ কে কখন এরেস্ট করতে হবে, কাকে একটা ভ্যান কিনে দিতে হবে, সবই একটি অফিস থেক আসে। কিন্তু জাহাজে ব্রিজ বাংলাদেশের সেই অফিস থেকেও শক্তিশালী। জাহাজে আগুন লাগলে ব্রিজ থেকে সব কমান্ড করবে, জাহাজ ডুবতে গেলে ব্রিজেই থাকবে শেষ ব্যক্তি, জাহাজে কেউ যোগ দিলে প্রথমেই সবাই ব্রিজে যাবে তার দলিল দস্তাবেজ দেবার জন্য, জাহাজের ডেকে একজন অতিথি পা দিলে ব্রিজকেই প্রথম জানান হবে, জাহাজে কেউ অসুস্থ হলে সে প্রথম ব্রিজকে ফোন করবে, জাহাজে টাকা বিলি করলে সেটাও ব্রিজে হবে, একজন ইঞ্জিনিয়ার রাতের বেলা ইঞ্জিন রুমে গেলে তাকেও ব্রিজকে জানাতে হবে, ইঞ্জিন সামান্য স্লো করতে হলে ব্রিজকে জানাতে হবে, পানি সাপ্লাই বন্ধ করতে হলে ব্রিজকে জানাতে হবে, খাবার দেরী হলে ব্রিজকে জানাতে হবে, পার্টি শুরু করতে হলেও ব্রিজ কে জানাতে হবে। সুতরাং জাহাজে ব্রিজ আর ব্রিজে ভরপুর, কিন্তু বাস্তবতা হল জাহাজে কোন সেতু নেই। ব্রিজ হলো জাহাজের কমান্ড সেন্টার। ক্যাপ্টেন কে খুঁজতে হলে প্রথমেই ব্রিজে ফোন করা হবে, বাইরে থেকে যত যোগাযোগ হবে, রেডিও কল কিংবা টেলিফোন, সব ব্রিজে। এখান থেকে জাহাজ চালানো হয়, এখানে সব সময় একজন ডিউটি অফিসার থাকে, যে ক্যাপ্টেনের অবর্তমানে কমান্ডার ইন চার্জ, বিমানে যেমন ককপিট।

যদিও ককপিট মানে যেখানে মোরগের লড়াই হয়, কিন্তু বিমানের ককপিট শব্দটি নৌযান থেকেই এসেছে। বোট বা নৌযানের চালক কে বলা হয় কক’সয়েন। ককসয়েন যেখানে দাঁড়িয়ে বোট চালায়, তাকে বলা হত কক-পিট। এমনকি বিমানের ককপিটে বসে যে বিমান চালায়, তাকে বলা হয় পাইলট, সেটাও জাহাজ থেকে নেয়া। রোমান ও ফ্রেঞ্চ পিলতে, মানে নৌকার হাল, রাডার বা দাড়, সেখান থেকে পাইলট। কিন্তু তারা এখন পাইলট আর ককপিট নিয়ে আকাশে চলে গেছে, আমাদের জন্য রেখে গেছে “ব্রিজ”। আমার ভাগ্নির নামও ব্রিজ, মানে ‘সেতু’। সেই সেতু একদিন আমার লেখা পড়ে প্রশ্ন করল মেসেঞ্জারে, মামা তুমি বার বার সেতু বা ব্রিজ লিখো, এই সেতু মানে কি। তার প্রশ্নের উত্তর তো উপরে যেভাবে দিয়েছি সেভাবে দিলাম, কিন্তু আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম আসলেই তো, আমরা ব্রিজ বলি কেন? সেতু প্রশ্ন করার আগে আমার মনে কখনো প্রশ্নের উদয় হয়নি আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ব্রিজ কে কেন ব্রিজ বলি? আসলে জানিনা কয়জন নাবিক জানে ব্রিজ শব্দটি কিভাবে এসেছে, কিন্তু কয়েক যুগ জাহাজের ব্রিজে চাকরি করেও আমি জানতাম না। এই প্রশ্নটি থেকে আমিও জানলাম ব্রিজ কেন বলা হয়। ঢাকা থেকে খুলনা গামী কিছু ষ্টীমার ছিল, রকেট পরিবহণ, গাজী এমন একটি স্টিমারের নাম। যারা দেখেছে তারা জানে এদের মাঝ বরাবর দুটি বিশাল পাখা ঘুরে, এই পাখার ঘূর্ণনেই জাহাজগুলো চলতো। এদের বলা হয় প্যাডেল ষ্টীমার। নৌযানের যান্ত্রিকায়ন শুরু হয়েছে ষ্টীম ইঞ্জিন দিয়ে, আধুনিক ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে নয়। প্রথম যখন ষ্টীম ইঞ্জিন লাগানো হয়, তখন প্রোপেলার ছিল না, জাহাজের দুই পাশে গাজী ষ্টীমারের মত প্যাডেল থাকত। দুই পাশের প্যাডেল ঘুরানোর জন্য দুই পাশে দুটি ষ্টীম ইঞ্জিন বা ষ্টীম হাউস থাকত, যা ছিল খুবই উঁচু। জাহাজের ক্যাপ্টেন এই দুই ষ্টীম হাউজের জন্য দুপাশে দেখতে পারত না। সুতরাং ন্যাভিগেশনের সুবিধার জন্য দুই ষ্টীম হাউসের উপর একটি ব্রিজের মত বানানো হল, সেখানে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন জাহাজ চালাতো, ব্রিজের উপর দিয়ে ডানে বামে গিয়ে নির্দেশ দিত এই ইঞ্জিন স্লো করো, ওটা কে বাড়াও, এভাবে। সেই ব্রিজ থেকে ক্যাপ্টেন ইঞ্জিন অর্ডার দিত, এবং ন্যাভিগেশন করত। এর পর ষ্টীম জাহাজ আরও আধুনিক হয়েছে, এক তলা থেকে কয়েক তলা হয়েছে, কিন্তু ক্যাপ্টেন যেখান থেকে ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ করে তার নাম ব্রিজই রয়ে গেছে। এই হল একটি সেতুর গল্প।


Abdullah Al Mahmud (21N), <planetbd@gmail.com>

Share