[নোঙর 2016]  রেঞ্জারের পাইরেসী – আশা, নিরাশা ও আতঙ্কের দিনরাত্রি

[নোঙর 2016] রেঞ্জারের পাইরেসী – আশা, নিরাশা ও আতঙ্কের দিনরাত্রি

জাহাজঃ পেট্রো রেঞ্জার
কোম্পানীঃ পেট্রোশিপস প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর
পোর্ট অব রেজিস্ট্রিঃ পোর্ট ক্লাং, মালয়শিয়া

মাস্টারঃ ক্যাপ্টেন কেন ব্লাইথ, অস্ট্রেলিয়ান
চীফ ইঞ্জিনিয়ারঃ মহিউদ্দীন ফারুক (১৯), বাংলাদেশি
চীফ মেটঃ অগাস্টিনাস লী পং, ইন্দোনেশিয়ান
সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ারঃ ইন্দোনেশিয়ান
থার্ড ইঞ্জিনিয়ারঃ আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশি
ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ারঃ পাকশি সিনাওয়াত্রা, ইন্দোনেশিয়ান
ফিফথ ইঞ্জিনিয়ারঃ ফজলে রাব্বী (২৯), বাংলাদেশি
জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারঃ আশিকুজ্জামান (২৯), বাংলাদেশি

১৬ এপ্রিল ১৯৯৮। অন্য যে কোন দিনের মতই কর্মচাঞ্চল্য মুখর পেট্রো রেঞ্জার। প্রায় সাড়ে এগার হাজার টন পরিশোধিত তেল নিয়ে সিঙ্গাপুরের শেল বুকম টার্মিনাল থেকে রওয়ানা দিয়েছে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির উদ্দেশ্যে। বিকেল ছ’টায় সেইল করার কিছুক্ষন পরই সন্ধ্যা নেমে আসে। তারপর রাত।  ঘন কালো আঁধার ভেঙ্গে ধেয়ে আসে একদল পাইরেট। মাঝরাতের ঠিক পর পর পুপ ডেক  (পিছন দিক) দিয়ে সন্তর্পনে জাহাজে উঠে পড়ে ওরা। দীর্ঘদেহী ঘানিয়ান ডেক ক্যাডেট বেনী লুক আউটে ব্যস্ত ছিল ব্রীজ উইঙয়ে।  প্রথমেই বেনীকে আক্রমন করে। সেকেন্ড মেট ভয় পেয়ে দৌড়ে পালায় ব্রীজ থেকে। জাহাজের নিয়ন্ত্রন চলে যায় পাইরেটদের হাতে। এরপর রাতের অন্ধকার শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। ২১ জন ক্রুর জীবনে নেমে আসে অনিশ্চিত এক অমানিশা।

শুধুমাত্র নোঙরের পাঠকদের জন্য, প্রায় ১৮ বছর পর, এই প্রথম এক সাথে হয়েছেন ঘটনার সাক্ষী তিন বাংলাদেশি। কুয়েত থেকে ফারুক মহিউদ্দীন (১৯), অস্ট্রেলিয়া থেকে ফজলে রাব্বী আর সিঙ্গাপুরে বসে আশিকুজ্জামান (২৯)। চতুর্থ জন আমজাদ হোসেনের সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমজাদ হোসেন এখনো চীফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ছুটে চলেছেন সারা পৃথিবীর এ বন্দরে ও বন্দরে।

তীব্র হতাশা, মেঘের কোনে আশা, বিদ্রোহ, সবশেষে স্বাধীনতা এসব নিয়েই স্কাইপ-এ এক সময়ের তিন সহকর্মীর প্রাণখোলা আড্ডা – রেঞ্জারের পাইরেসী, শুধু স্মৃতিচারণ নয়, জীবনের এক অনন্য অধ্যায়।

Petro Ranger
ফারুকঃ বুকম টার্মিনাল থেকে জাহাজ বের হয়ে যাবার পরও প্রায় নয়টা দশটা পর্যন্ত ইঞ্জিনরুমে ছিলাম। পিউরিফায়ারে সমস্যা ছিল। ইঞ্জিন রুম থেকে সব সেট করে উপরে আসি। ডিনার করে বিছানায় শুয়ে টেকনিক্যাল ম্যাগাজিন পড়ছিলাম। ঘড়ির কাঁটা মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। একটা অদ্ভুত শব্দ শুনলাম। কেউ মনে হয় চিৎকার করে দৌড়ে চলে গেল। তার কিছুক্ষণ পর আশিকের ফোন পাই ইঞ্জিন রুম থেকে। ও আমাকে বলল, ‘স্যার জাহাজে পাইরেট উঠেছে, শুনেছেন নাকি?’

রাব্বীঃ আামার আটটা বারটা ডিঊটি ছিল। উপরে এসে গোসল-টোসল সেরে, নুডুলস বানিয়ে আশিককে বললাম, ‘উপরে এসে নুডুলসটা নিয়ে যা’। তখনই ঐ চিৎকারটা শুনেছিলাম। আমি আশিককে বললাম, এত রাতে কে চিৎকার করে? ওটা সেকেন্ড মেট ছিল। খুব ভয় পেয়ে চিৎকার করছিল। ওই আমাদের জানায়, পাইরেটস অনবোর্ড। তখন দেখলাম বোসান, চীফ মেট বের হয়ে এসেছে। অস্ত্র বলতে হাতের কাছে  ছিল একটা মপ স্টিক। ওটা নিয়েই বললাম, চল দেখি উপরে কি হচ্ছে। আমি এখন অবাক হই, আমরা মপ স্টিক নিয়ে উপরে উঠছিলাম পাইরেটদের চেজ করবো বলে। প্রথমে ছিল বোসান, তার পেছনে চীফ মেট, আমি আর আশিক। আমরা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলাম। তখনি দেখলাম, পাইরেটরা নীচের দিকে নামছে। হঠাৎ দেখি সবাই চিৎকার করে দৌড়ে পালাচ্ছে। তা দেখে আমিও পালালাম।

আশিকঃ আমজাদ ভাই কে বললাম আমি পাইরেট ফেস করতে পারব না। পাইরেট আসলে আপনি ফেস করবেন। একবার ভাবলাম লুব অয়েল কুলারের পেছনে গিয়ে লুকাই। আবার ভাবলাম কার্গো ইঞ্জিন রুমে গিয়ে লুকালেই ভাল।

ফারুকঃ প্রথমে ভেবেছি টাকা পয়সা সব লুকিয়ে ফেলি, আবার ভাবলাম টাকা পয়সা না পেলে, ওরা আক্রমনাত্মক হয়ে যেতে পারে। মনে পড়ল, এন্টি পাইরেসি ড্রিলের সময় আমাদের শেখানো হয়েছে, জাহাজে উঠে গেলে পাইরেটদের সাথে কোন রকম ফাইট করা যাবে না। ওদের সহযোগিতা করতে হবে। বেশ খানিক পর, কাঁপা কাঁপা গলায় আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন বলছে, ‘চীফ চীফ’। দরজার নীচ দিয়ে দেখলাম এক জোড়া সাদা পা, সাথে বেশ কিছু কালারড পা। বুঝে গেলাম কি হতে যাচ্ছে। ওরা রুমে ঢুকে, আমার দিকে ছুঁড়ি তাক করল। আরেকজন ক্যাপ্টেনের ঘাড়ের পেছনে বিশাল ছু্রি ধরে আছে। আমার হাত দু’টো দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। আমাকে যেভাবে বেঁধেছে, একি ভাবে ক্যাপ্টেনকে সাথে নিয়ে, সব কেবিনে গিয়ে সবাইকে বেঁধে ফেলে।

রাব্বীঃ আমি রুমে ছিলাম। স্বভাবতই ভয় লাগছিল। একটা সময় মাস্টার কী দিয়ে আমার দরজা খুলে ফেলে। ক্যাপ্টেনের গলায় বড় ছুরি ধরা ছিল। ক্যাপ্টেন আমাকে বলল, ‘জাস্ট ফলো দেয়ার অর্ডার’। ওদের কাছে রশি ছিল না। আমার হাত বেঁধেছিল পিউরিফায়ারের ও’ রিং দিয়ে।

আশিকঃ আমি আর আমজাদ ভাই কন্ট্রোল রুমে ছিলাম। এসময় দু’জন লোক আসে। একজনের মুখ ঢাকা। শুধু চোখ দেখা যায়, এমন। দু’জনের হাতেই ছুরি। আমজাদ ভাই বলল, উনি থার্ড ইঞ্জিনিয়ার। আমি বললাম, আমি গ্রীজার (হেসে)। নিজেকে গ্রীজার বলেই পরিচয় দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি ইঞ্জিন রুমের কিছু বুঝি না।

ফারুকঃ তারপর ক্যাপ্টেনের ডে রুমে সবাই কে নিয়ে যায়। সবাইকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্য ওরা ভীষন চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। তারো অনেক পরে আমজাদ আর আশিককে নিয়ে আসে। একটু পরে আমজাদ ওদের বলল,  “আমাদের ইঞ্জিনের কন্ডিশন ভাল না। তোমাদের লোক হ্যান্ডেল করতে পারবে না।“ তখন ওরা বলল, “ঠিক আছে, তুমি চল।” ওরা আমজাদকে নিচে নিয়ে যায়।

আশিকঃ উনি আবার অল্প অল্প মালে ভাষা বলতে পারতেন।

ফারুকঃ এর মধ্যে জাহাজ বন্ধ করা হয়েছে। স্টেনসিল দিয়ে জাহাজের নামটা বদলে ফেলে ওরা। নতুন নাম হয় উইলবি (WILBY)। চীফ মেটকে নিচে নিয়ে কার্গো নিয়ে কথা বার্তা বলে। বিল অব লেডিং টা চাচ্ছিল। তাতে করে মনে হয়েছে, ওরা প্রফেশনাল হ্যান্ডস।

রাব্বীঃ তখন আমরা তিওমান আইল্যান্ডের কাছাকাছি।

ফারুকঃ প্রথম দিন সকালে খুব এগ্রেসিভ ছিল। বাথরুমে যাবার প্রয়োজন হলে আমাকে একটা বালতি দিয়ে বলল, ‘এখানে কর’। পরে আমার অনুরোধে টয়লেটে যেতে দেয়। ছুরি নিয়ে দরজার সামনে একজন দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড চাপে আমার ব্লাডার প্রায় ফেটে যাবার দশা। কিন্তু কিছুই হচ্ছিল না। জানি না কতক্ষন। আমার মনে হয়েছে, অ-কে-ন-ক্ষন। প্রতিটা সেকেন্ডকে অনেক লম্বা মনে হচ্ছিল তখন। অনেকক্ষন পর রিলিফ হয়ে রুমে ফিরে আসি।

আশিকঃ সকাল দশটার দিকে আমাদের সবাইকে মেস রুমে নিয়ে যায়। একজন একজন করে টয়লেটে নিয়ে যাচ্ছিল। দড়ি পাচ্ছিল না। তাই ইঞ্জিন রুম থেকে ও’ রিং এনে হাত বাঁধছিল।

রাব্বীঃ আমজাদ ভাই ভোর পাচটা পর্যন্ত ইঞ্জিন রুমে ছিল। ওরা জিজ্ঞেস করে, কে তেল ট্রান্সফার করে। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার আমাকে দেখিয়ে দেয়। তখন আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি কয়েকবার নিচে গিয়েছিলাম। মুলত টেকনিক্যাল দিক গুলো আমজাদ ভাই দেখছিল। আমার যতটুকু মনে পরে, ব্রীজে ওদের দুইজন লোক ছিল। একজন ছিল এক্স রেডিও অফিসার। আরেকজন, নেভিগেটর। ওদের সাথে দু’জন প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারও ছিল।

আশিকঃ আমার একটা ক্যাসিও ঘড়ি ছিল। ওটার বেল্টে ছোট্ট একটা কম্পাস লাগানো ছিল। ঐটা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, জাহাজ উত্তর দিকে যাচ্ছে।

ফারুকঃ প্রথমদিন লাঞ্চের সময়য়, পাইরেট ক্যাপ্টেন আমাকে বলল, তোমার খুব সুন্দর একটা ফ্যামিলি আছে। আমি তোমার এ্যালবাম দেখেছি। ভেবনা, তোমাদের কিছু হবে না। আমি নিজেও একজন সীম্যান।
এর মধ্যে ছোট খাট জিনিসের প্রয়োজনে ওরা অল্প সময়ের জন্য এক এক করে সবাইকে রুমে যেতে দিয়েছিল। তখন দেখতে পেলাম, আমার রুম পুরো তছনছ করে ফেলেছে।

ফারুকঃ অফিসকে ধোকা দিতে ওরা প্রথমদিন জাহাজের নিয়মিত নুন রিপোর্ট পাঠায়।  মেসেজের শেষে, আমাদের রেডিও অফিসার চালাকি করে লিখেছিল থ্যাঙ্ক উ ভেরী মাচ / মাস্টার। সাধারনত লেখা হয়, রিগার্ডস / মাস্টার। কিন্তু, অফিস এই চালাকিটা ধরতে পারে নাই।

রাব্বীঃ এরি মাঝে একদিন আমজাদ ভাই রেডিও রুমে জাহাজের ডকুমেন্ট ব্যাগ চুরি করতে গিয়ে পাইরেটদের হাতে ধরা পড়ে যান। উনি পাইরেটদের অনেক অনুনয় করে বোঝাতে চেষ্টা করেন, এই ব্যাগে আমাদের সব সার্টিফিকেট আছে। এগুলো তোমাদের কোন কাজে লাগবে না। কিন্তু আমাদের জন্য ভীষন জরুরী (আসলে ঐ ব্যাগে জাহাজের সব গুরুত্ত্বপুর্ন সার্টিফিকেট ছিল)।

আশিকঃ মেস রুমে আমি আর রাব্বী ফ্লোরে ঘুমাতাম। ফারুক স্যার ঘুমাতো সোফায়। স্যারের ছয় মাস বয়সের একটা ছেলে ছিল। একদিন উনি বললেন, মনে হয় আর কোনদিন আমার ছেলেটাকে দেখব না। এটা শুনে আমরা খুব মুষড়ে পরি।

ফারুকঃ আমার এক বন্ধুর বোন দুর্ঘটনায় ছোট বাচ্চা রেখে মারা গিয়েছিল। বাচ্চাটা কল্পনার জগতে ওর বাবা-মা’কে দেখত। আমার মনে হত আমার বাচ্চাটাও হয়ত একদিন এভাবে বড় হবে। খুব ডিপ্রেসিং ছিল, ঐ সময়টা। সে সময় আমার বিশেষ কোন সঞ্চয় ছিল না। ইন্সুরেন্স ছিল না। কেবলই মনে হত, আমি না থাকলে ওদের কি হবে। ওরা অন্যের দয়ায় থাকবে। এসব ভেবে বুকটা ভেঙ্গে যেত।

আশিকঃ আমি অত ভয় পাইনি। আমার বয়স কম ছিল। অনেকটা এ্যডভেঞ্চারের মত মনে হয়েছিল। কারন ঐ ধরণের পিছুটান ছিল না। শুধু বাবা-মা ছিল। ওরা টিভি’তে বিশেষ কিছু ফিল্ম দেখাতো। আমি আর রাব্বী বাকীদের সাথে ঐ ফিল্ম দেখতাম।

ফারুকঃ এর মধ্যে ওরা আমাদের ইন্দোনেশিয়ান ক্রুদের বলেছে, জাহাজের কার্গো নিয়ে, আমাদের কোন এক আইল্যান্ডে নামিয়ে দিবে। ওদের কথা যে পুরোপুরি বিশ্বাস করেছি, তাও না। আবার বিশ্বাস না করে অন্য কোন উপায়ও ছিল না।

রাব্বীঃ মেসরুমের সব পোর্টহোল (জানালা) গুলো ওরা কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল। চারদিন পর একটু একটু শীত অনুভব করি। ওরা আমাদের জানায়, কার্গো ডিসচার্জ হবে।

ফারুকঃ তখন আমরা বিভিন্ন কিছু স্পেকুলেট করতাম। আশিকের ঘড়ির কম্পাস, চার দিন সেইলিং – এ দু’টোর সাথে চীনের অনেক বড় কালো বাজার এসব বিবেচনায় মনে হয়েছে, আমরা চীনের কাছাকাছি কোথাও আছি।

ফারুকঃ ওদের মাস্টার মাইন্ড বলেছিল রেডিও ইকুইপমেন্টের পাওয়ার কেবল কেটে দিতে। সেটা কাটার সময়, সর্ট সার্কিট হয়ে পুরো পাওয়ার বোর্ড জ্বলে যায়। ফলে ওদের কমিউনিকেশনও বন্ধ হয়ে যায়।

রাব্বীঃ ওরা তখন আমাদের রেডিও অফিসারকে থ্রেট করে বলেছিল, ‘এটা ঠিক কর,  না হলে তোমাকে মেরে ফেলব’। রেডিও অফিসার কোনমতে রেডিও কমিউনিকেশন ঠিক করে দেয়।

ফারুকঃ চীফ মেটকে নিয়ে গিয়েছিল কার্গো অপারেশনের জন্য। প্রথম দিন দু’ টো জাহাজ এসেছিল। প্রথম দিনেই ওরা প্রায় পাঁচ হাজার টন কার্গো  নিয়ে যায়। এরপর তিন চার দিন জাহাজ শুধু নর্থ আর সাউথে মুভমেন্ট করেছে। আমাদের খাবার দাবার শেষ হয়ে আসছিল। টিনের টুনা ফিস, ডাল আর ভাত এসব দিয়ে খাচ্ছিলাম।  তখন ওদের খুব টেন্সড মনে হচ্ছিল। ওরা জাহাজের রেডিও দিয়ে ওদের বসের সাথে কথা বলত।

আশিকঃ তিন চার দিন পর, ছোট একটা কোস্টাল ট্যাঙ্কার আমাদের জাহেজের সাথে ভিড়লো। ঐ ছোট জাহাজে করে পাইরেটদের জন্য টাকা এসেছিল, প্রথম কার্গো চুরির। আমাদের সবার জন্য খাবার পাঠিয়েছিল। পাইরেটরা খুব খুশি ছিল ঐদিন।

রাব্বীঃ সেদিনই, হংকং কোস্ট গার্ড আসে। আমি আর আশিক ভাবছিলাম, যাক, আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন। পাইরেটরা আমাদের হুমকি দিয়ে বলে, কেউ কোন উল্টা-পাল্টা করলে, সবাইকে মেরে ফেলবে। কিন্তু, কিছুক্ষন পর কোস্ট গার্ড চলে যায়। পাইরেটরা আমাদের বলেছিল, হংকং কোস্ট গার্ড কে  টাকা পয়সা দিয়ে বিদায় করে দিয়েছি। ওটা দেখে আমাদের সবার মন ভেঙ্গে যায়।

ফারুকঃ হংকং কোস্ট গার্ড চলে যাবার পর আমাদের জাহাজ থেকে ঐ কোস্টাল ট্যাংকারে কার্গো ট্রান্সফার করার সময় চায়না কোস্ট গার্ড এসে আমাদের জাহাজ এ্যারেস্ট করে।

রাব্বীঃ চায়নীজরা দূর থেকে আমাদের উপর নজর রেখেছিল। কার্গো ট্রান্সফার করার সময় হাতেনাতে ধরবে বলে। চাইনীজরা আমাদের দিকে যখন এ্যাপ্রোচ করছিল, তখন ছোট কোস্টাল জাহাজটা তাড়াহুড়া করে চলে যাবার চেস্টা করে। কিন্তু চায়নীজরা ওদের ধরে ফেলে। তারপর আমাদের, হাইনান এঙ্কোরেজে নিয়ে যায়।

ফারুকঃ চায়নিজ কোস্ট গার্ড ভেবেছে এটা চোরাচালানের জাহাজ। হাইজ্যাক হয়েছে, এটা ওরা বুঝতে পারে নি। চায়নীজরা ব্রীজের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। পাইরেটরা তখন বলছিল, এখন তো তোমরা সবাই ফ্রী হয়ে যাবা, আমাদের জেলে নিয়ে যাবে। তার কয়েক ঘন্টা পরে  পাইরেট ক্যাপ্টেন ওদের লিডারের সাথে যোগাযোগ করলে লিডার বলেছিল, চায়নীজ হাই অফিসিয়ালদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। ভয় পেও না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

আশিকঃ হাইনান যাবার পর আমাদের পোর্ট সাইডে ঐ বার্জটা তখনো ছিল। স্টারবোর্ড সাইডে বড় একটা গান বোট পাহারা দিচ্ছিল।  রাত বারটার দিকে জাহাজ এ্যাঙ্গর করে। রাতের বেলা, আমি, রাব্বী আর ফারুক স্যার প্ল্যান করছিলাম কি করা যায়।

রাব্বীঃ  ইপার্ব (EPIRB) এক্টীভেট করার প্ল্যান করলাম আমরা। প্ল্যান হল, আমি আর আশিক গার্ড দিব। ফারুক স্যার উপরে যেয়ে ইপার্ব এক্টিভেট করবে। যাতে অফিস জানে জাহাজ এখানে আছে।

আশিকঃ আমাদের সেলফ ডিফেন্সের কিছু ছিল না। রাব্বীর কাছে খাতা সেলাই করার বড় সূচ ছিল। আমরা ওটাকেই সাথে নিলাম। কেউ আসলে, সেই সূচ দিয়ে আক্রমন করবে, এটা ভেবে।

ফারুকঃ আমি উপরে যেয়ে দেখি ইপার্বের ব্যাটারী নেই। ওরা আগের থেকেই ওটাকে ইনেক্টিভেট করে রেখেছে।

রাব্বীঃ পরের দিন সকালে চাইনীজরা বিশাল এক জাহাজ নিয়ে আসে। এই সময় আমাদের শ্বেতাঙ্গ ক্যাপ্টেন (অস্ট্রেলিয়ান) আর কৃষ্ণাঙ্গ ডেক ক্যাডেটকে (ঘানিয়ান) বাদ দিয়ে বাকী সবাইকে নিয়ে একটা ভুয়া ক্রু লিস্ট বানিয়েছিল। যদিও আমাদের লাইফবোট ক্যাপাসিটি ছিল ২৫ জন, কিন্তু সেই ভুয়া ক্রু লিস্টে ৩২/৩৩ জন ক্রু ছিল।

ফারুকঃ নিচে নামার সময় দেখছিলাম, গান বোট থেকে সবাই জাহাজের দিকে রাইফেল উচিয়ে আছে। আমাদের জাহাজে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল কাধে অনেক স্টার লাগানো কোন এক সিনিয়ার অফিসার। তখন ভাবলাম, ঐ অফিসারকে যেয়ে বলব, দিস শীপ ইজ হাইজ্যাকড। আমি যখন হাটছি, তখন খেয়াল করলাম, ওদের একজনের রাইফেল আমার দিকে তাক করে মুভ করছে। ট্রিগারের উপর আঙ্গুল। জীবনে এই প্রথম গান পয়েন্টের সামনে।  তখন ভাবলাম, সামনে এগুলেই হয়ত গুলি করে দিবে। বরং, একটু পরে বলি। চায়নীজরা ডেকে যখন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছিল, তখন ভাবলাম, টিভিতে দেখালে হয়ত সবাই জানবে।

রাব্বীঃ আমাদের ইচ্ছা ছিল চায়নীজদের সব বলে দেয়া। যখন আবিষ্কার করলাম, ওরা এক বিন্দুও ইংরেজী বোঝে না, তখন খুব মুষড়ে পরি।  হয়ত এ্যাপ্রোচ করা যাবে, কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে না। শুধু শুধু সবার জীবনকে বিপদে ফেলব।

ফারুকঃ চায়নীজরা চারজন পাইরেট আর আমাদের চীফ অফিসারকে শোরে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য (ওদের দৃষ্টিতে সবাই স্মাগলার।) আমাদের চীফ মেটকে পাইরেটরা শাসিয়ে দিয়েছিল, তুমি কিছু বলবা না। হাইজ্যাকড জাহাজকে স্মাগলিং করা জাহাজ বলে চালিয়ে দিতে চাইছিল। জাহাজের পেছনে উইলবি লেখা, কম্পাস ডেকে পেট্রো রেঞ্জার লেখা। ওদের তো বোঝার কথা ছিল। কিন্তু অবাক ব্যাপার। ওরা কিছুই বোঝে নাই। পরদিন সকালে ঐ পাচজন ফিরে এসে জানালো, পাইরেটদের সাথে চায়নীজদের সমঝোতার চেষ্টা চলছে।

আশিকঃ তার তিন/চারদিন পর আমরা জানলাম চায়নীজদের সাথে পাইরেটদের সমঝোতা হয়ে গেছে। কিছু জরিমানা নিয়ে ওরা পোর্ট ক্লিয়ারেন্স দিয়ে জাহাজ ছেড়ে দেবে।  ওরা যদি একবার পোর্ট ক্লিয়ারেন্স নিতে পারে, তাহলে অন্য যেকোন দেশে জাহাজ নিয়ে চলে যেতে পারবে। ওদের প্রথম কাজ হবে, ক্রুদের মেরে গেলা। তারপর কোথাও চলে যাওয়া।

রাব্বীঃ সন্ধ্যা বেলায় আমাদের মিটিং হয়। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম, পরদিন জাহাজ ছেড়ে দেবে। ক্যাপ্টেন ব্লাইথ বলছিল, চায়নীজরা যদি জরিমানা হিসেবে কার্গো রেখে দেয়, তাহলে পাইরেটরা তেমন কিছু গেইন করতে পারবে না, সেক্ষেত্রে আমাদের মেরে ফেলে দিয়ে ওরা হয়ত জাহাজ বিক্রি করে দেবার চেষ্টা করবে। সো, যা করার আজ রাতেই করতে হবে।

ফারুকঃ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অনেকে বলছিল, চল সবাই মিলে ব্রীজে যেয়ে চায়নীজদের সব বলে দেই। আমি বললাম, দেখ আমরা সবাই যদি একসাথে মুভ করি, তাহলে হয়ত চায়নীজরা ভয় পেয়ে গুলি করে দিবে। এভাবে না করে, একজন বা দুই জন যেয়ে বললে ভাল হবে। এর মধ্যে দেখলাম, আমাদের এক বার্মীজ ক্রু (ওর নাম ছিল সাইনী) অল্প সল্প চায়নীজ বলতে পারে। বিভিন্ন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হল আমাদের শ্বেতাঙ্গ ক্যাপ্টেনের সাথে অল্প সল্প চায়নীজ বলতে পারা সাইনীকে পাঠানো হবে উপরে। একজন অপরিচিত সাদা চামড়ার লোক দেখলে, ওদের ভড়কে যাবার কথা। সেদিন রাতেই ক্যাপ্টেন আর সাইনী চায়নীজ পুলিশের মুখোমুখি হয় কম্পাস ডেকে। সাইনী, ভাঙ্গা ভাঙ্গা চায়নীজে ওদের বলেছিল, এই জাহাজ হাইজ্যাকড হয়েছে।

পরদিন সকালে কোস্টগার্ডের জাহাজ এসে আমাদের সবাইকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা এক রাত ছিলাম।

রাব্বীঃ পাইরেটদের ওরা এ্যরেস্ট করে রাখে। আমাদের মধ্যে শুধু চীফ মেট ছাড়া বাকী সবাইকে জাহাজে পাঠিয়ে দেয়। সেদিন মে ডে হলিডে ছিল। ওরা অফিসে ফোন করে জানায় তোমাদের জাহাজ বে-আইনি ভাবে চায়নীজ জলসীমায় কার্গো ডিসচার্জ করার দায়ে এরেস্ট করা হয়েছে। অফিস ওদের জানায় জাহাজ টা আসলে চুরি হয়েছে। সারা বিশ্ব এটা যানে। ক্রুদের নিরাপত্তার কথা, সবাই ভাল আছে কিনা, এসব খোজ অফিস ওদের কাছ থেকে নিয়েছিল। অফিস সাথে সাথে ফ্যাক্স করে ক্রু লিস্ট পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমাদের অফিসের লোকজন চায়না চলে আসে।

আশিকঃ এর মাঝে আমাদের চারজন বাংলাদেশির জন্য এক সপ্তাহের বেশি দেরী হয়। এটা প্রমান করা যাচ্ছিল না যে, আমাদের পাসপোর্ট অরিজিনাল কিনা।

ফারুকঃ আমার মনে আছে, ওখানে অস্ট্রেলিয়ান, মালয়শিয়ান, ঘানিয়ান কনসুলার এসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এম্বেসী থেকে কেউ আসে নাই। বাংলাদেশ এম্বেসী বেইজিং (চায়না) থেকে বলা হয়েছিল, হাইনান তো অনেক দূরে, তোমরা হংকং এ বাংলাদেশ এম্বেসীর সাথে যোগাযোগ কর। হংকং থেকে বলা হয়, হাইনান তো চায়নায়। আমরা কিছু করতে পারব না। বেইজিংয়ে যোগাযোগ কর। চায়নীজ পুলিশ এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ কে জানায়, এখানে তেল স্মাগ্লিং করার সময় চারজন বাংলাদেশি ধরা পরেছে।

আশিকঃ এ খবরটা আমাদের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। আমাদের নাম পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। আমাদের বাসায় পুলিশ এসে বেশ দুর্ব্যাবহার করেছিল।

ফারুকঃ আমাদের বাসায়ও পুলিশ গিয়েছিল। যদিও বাবা ১৯৯৫ সালে একাডেমী থেকে রিটায়ার করেছিলেন, কিন্তু আমার এড্রেস তখনো মেরীন একাডেমির ছিল। একাডেমীতে পুলিশ গিয়ে, বাবার, আমার পরিচয় পেয়ে আর বিশেষ কিছু বলে নি।

রাব্বীঃ ভিয়েতনাম এজেন্ট জাহাজ হারিয়ে যাবার কথা জানাবার পর, পেট্রোশিপস সব ক্রুদের বাসায় যোগাযোগ করে। মালয়শিয়ান এয়ারফোর্স, অস্ট্রেলিয়ান এয়ারফোর্স প্লেন দিয়ে সাউথ চায়না সী’তে আমাদের জাহাজ সার্চ করেছিল। কিন্তু জাহাজ খুঁজে পায়নি। জাহাজ খুঁজে পাবার পর আবার আমাদের পরিবারকে জানানো হয়।

ফারুকঃ অফিসের লোকজন, জাহাজে আসলে আমরা ওদের মোবাইল ফোন দিয়ে আমাদের বাসায় কথা বলেছিলাম। সাবাই কথা বলার সময় কাঁদছিল। এর মধ্যে চায়নীজ অথরিটি এখান থেকে কিছু সুবিধা পেতে চায়। আমাদের জাহাজ ছেড়ে দেবার বিনিময়ে চায়নীজরা বাকী কার্গো নিয়ে নেয়। এটা প্রসেস হতে প্রায় এক মাস লেগে যায়।

আশিকঃ এর মধ্যে একদিন, এক অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক ক্যাপ্টেন ব্লাইথের খোঁজ নেবার জন্য সিকিউরিটি প্রটোকল ভেঙ্গে জাহাজের দিকে আসছিল ছোট একটা বোট নিয়ে। তখন চায়নীজ কোস্ট গার্ড সতর্কতামূলক গুলি ছুঁড়লে সেই বোটটা চলে যায়। এ ঘটনাটা অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ায় বেশ বড় করে ছাপা হলে, অস্ট্রেলিয়ান সরকার চায়নীজ সরকারেকে বেশ চাপ দেয় ওদের ক্যাপ্টেনকে ছেড়ে দেবার জন্য। যদিও আমরা সবাই জাহাজে ছিলাম, অল্প ক’দিন পরই অস্ট্রেলিয়ান এম্বেসী ক্যাপ্টেন ব্লাইথকে জাহাজ থেকে হোটেলে নিয়ে যায়। বাকী সময়টা উনি হোটেলেই ছিলেন।

ফারুকঃ ক্যাপ্টেন ব্লাইথ জাহাজ নিয়ে সিঙ্গাপুর যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। তখন আমাদের ডিপিএ ক্যাপ্টেন জেমস জেরীস জাহাজের কমান্ড নেন। আমিও চায়না থেকে দেশে ফিরে যেতে চাইছিলাম। মন আর টিকছিল না। অফিস আমাকে অনেক অনুরোধ  করে জানায়, বাংলাদেশ এম্বেসী তেমন কোন সাহায্য করছে না। এ অবস্থায় আমাকে দেশে পাঠাতে গেলে, জাহাজ বের করতে অনেক বেশি সময় লেগে যাবে। বৃহত্তর স্বার্থে আমি এটা মেনে নেই। প্রায় চার সপ্তাহ পর জাহাজ ছেড়ে দেয়। সেটা খুব সম্ভবত ২৬/২৭ মে হবে।

রাব্বীঃ আমাদের অনেকের মধ্যে একটা মিশ্র অনুভুতি ছিল। মুক্তির আনন্দ, বিভিষীকাময় দিনগুলি অবশেষে শেষ হয়েছে। আবার শিড়দাড়া বেয়ে নেমে যাওয়া ভয়, আর এমন হবে না তো!

ফারুকঃ আমাদের এন্টি পাইরেসী লুক আউট জোরদার করা হয়। দিন রাত কোন কাজ নেই। শুধু লুক আউট। আমরা সিঙ্গাপুরে ফিরে আসি। সিঙ্গাপুরে অফিসের সব লোকজন, পিএন্ডআই ক্লাব, মালয়শিয়ান অথরিটির লোকজন সবাই আসে।  আরো তদন্তের জন্য আমাদের জাহাজ তিন/চার দিন পর পোর্ট ক্লাং নিয়ে যাওয়া হয়, যেহেতু জাহাজ মালয়শিয়ান রেজিস্টার্ড ছিল। আমি পোর্ট ক্লাং থেকে সাইন অফ করে দেশে চলে যাই।

আশিকঃ আমি আমজাদ ভাইকে দেখেছি রাতের বেলা, ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে হাটাহাটি করতে। এই মেন্টাল ট্রমার কারনে উনার একটা ফোবিয়ার মত হয়ে গিয়েছিল। রাতে ঘুম ভেঙ্গে যেত। মনে হত, এই বুঝি আবার পাইরেট আসল।

ফারুকঃ আসলে বিভিন্ন কারনে লাইফ হ্যাজ টু ক্যারী অন। আই ওয়াজ নেভার এ ভিক্টিম অব ক্রাইম ইন মাই ওন কান্ট্রি।  স্বাধীনতার মর্ম আমি কোনদিন অনুভব করি নাই। কিছুদিন পরাধীন থাকার পর আমি সেটা বুঝতে পারি। আগে বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে আমার একটা নেগেটিভ ধারনা ছিল। এ ঘটনার পর আমি বুঝতে পারি, আমাদের দেশেও নিশ্চয়ই খারাপ লোক আছে। কিন্তু আমার ভাগ্যে কখনো খারাপ কিছু ঘটেনি। নিশ্চয়ই আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী এমন কিছু করছে যার জন্য খারাপ এলিমেন্ট গুলো সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।  আমরা সবাই যেন স্বাধীনতার মর্ম বুঝি। আমরা সবাই যেন দেশকে ভালবাসি।

Save

Share