সমুদ্রযাত্রার গল্প শোনান তারা: মারুফ এবং হৃদয় 

সমুদ্রযাত্রার গল্প শোনান তারা: মারুফ এবং হৃদয় 

নীল সমুদ্রে ভেসে চলা নাবিকদের জীবন সমুদ্রের মতোই বৈচিত্র্যময়। সাগরের নৈসর্গিক মুগ্ধতা যেমন তাদের হূদয়ে প্রশান্তি জাগায় আবার দীর্ঘদিনের একাকিত্ব, স্বজন-পরিজন ছেড়ে শত শত মাইল দূরে থাকার বেদনা সেই প্রশান্তির সুরকে ম্লান করে তোলে। তাই কাজের ফাঁকে অনেকে গান করেন, কেউ খেলাধুলা বা শখের কাজে মেতে থাকতে পছন্দ করেন। অনেকে আবার জাহাজের নিত্যদিনের হালচাল, সমুদ্রের নৈসর্গিক গাম্ভীর্যকে ক্যামেরায় ধরে স্যোশাল মিডিয়ায় কনটেন্ট নির্মাণ করছেন। যা দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে। ভিন্নধর্মী এমন দুজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর নাবিককে নিয়ে লিখেছেন শাকিরুল আলম শাকিল

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সেইল উইথ মারুফ’ নামে পরিচিত আব্দুল্লাহিল মারুফ। মারুফের শৈশব-কৈশোর কেটেছে জন্মস্থান রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশলী বিভাগে। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে থেকে সেই যাত্রা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভর্তি হন দেশের একটি বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে সামুদ্রিক প্রকৌশলী বিদ্যার প্রাথমিক দীক্ষা নিয়ে যোগ দেন জাহাজের শিক্ষানবিশ হিসাবে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন উচ্চতর প্রফেশনাল ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি হংকংভিত্তিক একটি কোম্পানির তেলবাহী জাহাজের সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। তবে এসব কিছু ছাড়িয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় তিনি পরিচিতি পেয়েছেন নীল জলরাশিতে ভেসে ভেসে আনমনে গেয়ে ওঠা গান আর জাহাজের ক্রিয়া কৌশল, সামুদ্রিক পরিবেশ এবং নাবিক জীবনের নানা জানা-অজানা ঘটনা নিয়ে কনটেন্ট নির্মাণ করে। বর্তমানে তার ফেসবুকে ‘মারুফ’ এবং ‘সেইল উইথ মারুফ’ নামের দু’টি পেজ রয়েছে। অনুসারীর সংখ্যা প্রায় দেড় মিলিয়ন। রয়েছে দু’টি ইউটিউব প্ল্যাটফর্মও। মারুফ সেখানে আপলোড করেন জাহাজের নিত্যদিনকার ঘটনা, জাহাজ পরিচালনা, নোঙ্গর ফেলা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার, সমুদ্রের ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্দর নিয়ে নানা কৌতূহলোদ্দীপক ভিডিও। সম্প্রতি সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে আটক জাহাজের নাবিকদের নিয়ে তার তৈরি করা ভিডিওগুলো দেশব্যাপী খুব আলোচনায় এসেছে। মাঝ সমুদ্র থেকে ইত্তেফাক প্রজন্মের সঙ্গে আলাপচারিতায় মারুফ জানিয়েছেন শখের বসেই তার প্রফেশনাল জীবনকে নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা। সাধারণ মানুষের পক্ষে সামুদ্রিক জাহাজের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া কৌশল সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না। তাই এমন কনটেন্টে তাদের আগ্রহ বেশি। তাদের উত্সাহ, প্রতিক্রিয়া আমাকে দারুণ আন্দোলিত করে।

Links:
Webpage: Sail With Maruf – Digital creator
Facebook: Sail with MARUF
YouTube Chanel: MARUF

জাহাজে কাজের ফাঁকে নাবিক জীবনের নানা ঘটনা বলে স্যোশাল মিডিয়ায় পরিচিতি পেয়েছেন মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকার। ডাক নাম হূদয় থেকে তার সামাজিক পরিচিতি ‘হৃদয় দ্য সেইলর’ নামে। হৃদয় কাজ করছেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। জাহাজে আসার আগে স্যোশাল মিডিয়ায় টেক ভিডিও কনটেন্ট বানানোর নেশা ছিল হৃদয়ের। নীল সমুদ্রের স্নিগ্ধ জলে এসেও সে নেশা আর কাটেনি। এখন ভিডিও বানান জাহাজের নাবিক জীবন নিয়ে। নাবিকরা কীভাবে ঘুমান, ইঞ্জিন রুম-ব্রিজে কী কাজ চলে, জাহাজে কেউ মারা গেলে কী করা হয়, জলদস্যু এলে কী করা হয়—এমন সব চমকপ্রদ ঘটনা তার কনটেন্টের বিষয়বস্তু। যা সাধারণ মানুষের কাছে খুবই আগ্রহের। ফেসবুক আর টিকটকে হূদয়ের অনুসারীর সংখ্যা সাত লাখের অধিক। ইউটিউবে অনুসরণ করেন দেড় লাখের অধিক দর্শক। দর্শকরা কমেন্ট বক্সে জানতে চান জাহাজের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে। হৃদয় চেষ্টা করেন সেগুলোকে পরিবর্তী ভিডিওতে যুক্ত করার।

মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকারের জন্ম, বেড়ে ওঠা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন হূদয়। এরপর উচ্চশিক্ষার ভর্তিযুদ্ধে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও আগ্রহের জায়গা থেকে ভর্তি হন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে। এরপর একাডেমিক এবং শিক্ষানবিশ পর্ব শেষ করে ২০২২ সালে জাহাজের প্রোফেশনাল জগতে অংশ নেন। হৃদয় বলেন, ‘জাহাজে কাজের অবসরে কেউ গান শুনেন, কেউ গেমস খেলেন কিন্তু এই সময়গুলোতে আমি কনটেন্ট তৈরি, ভিডিও এডিটিং-এর কাজ করতেই বেশি উপভোগ করি’।

Links:
Facebook: Ridoy The Sailor
YouTube: Ridoy The Sailor (youtube.com)

Share