SEA-BLOG ল্যান্ড হোঃ ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ – মাহমুদ- ২১ ন

SEA-BLOG ল্যান্ড হোঃ ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ – মাহমুদ- ২১ ন


গুগল ম্যাপের সৌজন্যে আমরা গাড়ি চালাবার সময়েও জানি, আর মাইল বিশেক পর শ্রীপুর আসবে, অতঃপর ভালুকা। কিন্তু এক সময় মানুষ নির্জন মাঠ দিয়ে হেটে যাবার সময় দিগন্তে নজর রাখত একটি তালগাছ কিংবা মসজিদের মিনার দেখার জন্য। সেটা চোখে পরলেই বুঝত শিকারপুর এসে গেছে। জাহাজের চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আমরা কোথায় আছি সেটা নাবিকদের পক্ষে বুঝা সম্ভব ছিল না। তখন জাহাজের অবস্থান জানারও কোন উপায় ছিলনা, পরিষ্কার আকাশ থাকলে হয়তবা সূর্যের অবস্থান দেখে বুঝতে পারত তারা কতটা উত্তরে বা দক্ষিণে রয়েছে। কিন্তু কতটা পূর্বে বা পশ্চিমে এগিয়েছে তাদের পক্ষে জানার উপায় ছিল না। এক সময় বর্ষায়, ঢাকার পশ্চিমে ছিল বিল আর বিল। সবাই জানত রায়ের বাজার ঘাট থেকে সোজা পশ্চিমে গেলে বিল পারি দিয়ে গোয়ালন্দ বরাবর পৌঁছবে। কিন্তু কেউ হয়ত যাবে ফরিদপুর। সে জানে ফরিদপুর হল কেরানীগঞ্জ রুহিতপুরের একদম সোজা পশ্চিমে। নৌকার মাঝিদের জন্য সহজ উপায় হল রায়েরবাজার থেকে সরাসরি পশ্চিমে না গিয়ে আরেকটু দক্ষিণে রুহিতপুর গিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে গেলে ফরিদপুর বরাবর পদ্মায় উঠে যাবে। সে ঢাকা এলাকার মাঝি, তাই গোয়ালন্দ গিয়ে ফরিদপুর খুঁজার চেয়ে চেনা রুহিতপুর গিয়ে সোজা ফরিদপুর যাওয়া ভালো। তাই ইউরোপের নাবিকরা প্রথম আবিষ্কৃত ক্যারিবিয় দীপপুঞ্জে যাবার জন্য ইউরোপ থেকে উপকুল ধরে সোজা দক্ষিণে মরক্কো যেতো, সেখান থেকে সোজা পশ্চিমে জাহাজ চালিয়ে দিত সূর্যের দিকে নজর রেখে। পশ্চিমে কতটা গেল তাদের বুঝার উপায় ছিল না, পালের টানে পশ্চিমে যেতেই থাকত। জাহাজের ক্যাপ্টেন আনুমানিক হিসেব করে বুঝে নিত তারা হয়ত কাছাকাছি এসে গেছে, সে কাছাকাছিটা ১০০০ কিমি ও হতে পারে আবার ১০০ কিমি ও হতে পারে, কারণ গতি মাপারও ভাল কোন যন্ত্র ছিল না। ক্যাপ্টেন আন্দাজের উপর ভিত্তি করে স্থলভাগ আসার আগে আগে নজর রাখার জন্য কাউকে নিয়োগ করত। যাতে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়, এজন্য নিয়োজিত ব্যক্তি মাস্তুলের উপরে উঠে বসে থাকত। ঠাণ্ডা বাতাস কিংবা পানির ঝাপটা থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্তুলের উপরে একটি খাঁচা বা অনেক সময় ব্যারেলের মত কিছু বানিয়ে দেয়া হত। সেই নাবিক, সে মাস্তুলের উপরের খাঁচায় বসে তীর্থের কাকের মত দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকত। দায়িত্ব প্রাপ্ত নাবিক কে বলা হত লুক-আউট, আর বসে থাকার খাঁচাকে বলা হতো ক্রো’স নেস্ট, মানে কাকের বাসা। খৃষ্ট পূর্ব হাজার বছর আগের ফোনেশিয়ান জাহাজেও কাকের বাসা ছিল, এখনও আছে, তবে এখন মাস্ট হেড লাইটের বাল্ব পরিবর্তন করা ছাড়া কেউ আর তাতে চড়েনা।

সেই লুক-আউট এর চোখে দিগন্ত রেখায় যদি স্থলভাগ চোখে পড়ত, তখন সে চিৎকার করে উঠত ‘ল্যান্ড হো’ ‘ল্যান্ড হো’। আর সব নাবিকরা উল্লাসিত হয়ে ঈদের চাঁদ দেখার মত দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কিনারা খোজার চেষ্টা করত, ক্যাপ্টেন তার দুরবিন নিয়ে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করত তারা কোথায় এসেছে। এর সাথে আরেকটা মজার ইতিহাস রয়েছে। মুভি দেখে দেখে মানুষের মনে একটি ধারনা সৃষ্টি হয়েছে, পাইরেটরা মনে হয় কোন সম্মুখ যুদ্ধে এক চোখ হারিয়েছে, তাই তাদের এক চোখ ঢাকা ‘আই-প্যাচ’ পরে। আসলে আই প্যাচও সেই লুক আউট থেকেই এসেছে, যারা মাস্তুলের কাকের বাসায় বসে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকত। একটি চোখ অনেক্ষন বন্ধ করে রাখলে অন্ধকারে ভালো দেখা যায়। তাই তারা রাতের বেলায় এক চোখ ঢাকা আই-প্যাচ পরে বসে থাকত। অনেক ক্ষণ পরে যে চোখ খোলা থাকত, সেটা ঢেকে বন্ধ চোখ খুলত, ফলে অন্ধকারে ভালো দেখতে পারত। এভাবে তারা কিছুক্ষণ পর পর চোখ পরিবর্তন করত। জলদস্যুরা রাতের বেলায় আক্রমণ করার জন্যও এ কাজটা করত। এমনকি প্লেনের পাইলটরাও আই-প্যাচ ব্যাবহার করত ব্যাপক ভাবে।

এখন সেই ক্রো’স নেস্ট নেই, সেখানে কেউ বসেও না। কারণ আমরা প্রতি মুহূর্তে জানি আমরা কোথায় আছি, তাই ল্যান্ড দেখে কেউ আর ল্যান্ড-হো বলে চিৎকার করেনা। আজকে ২১ দিন পর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে স্থলভাগের কাছাকাছি ফিরছি। রাত ১২ টায় ব্রিজে গিয়ে লিউ’র সাথে আলাপ করে নিলাম, কোথায় কতটুকু গতি রাখলে ঠিক সময় মত পৌঁছতে পারব। বলে দিলাম কোথায় ইঞ্জিন রুমে লোক পাঠাতে হবে, আমাকে ডাকতে হব। সে অনুযায়ী লিউ চার্টে মার্ক করে দিল-‘ওয়ান আওয়ার নোটিশ টু ইঞ্জিনরুম’, কল-মাস্টার। একটার দিকে ঘুমাতে আসলাম, আর ঘুম থেকে উঠানো হল সোয়া চারটায়। দশ মিনিট পরে ব্রিজে গিয়েই কফির ঘ্রাণ পেলাম। ৪-৮ টা ওয়াচের সুকানি মানজিত, সে আমার কফির ব্যাপারে খুব সচেতন থাকে। এই কফি আমি ছাড়া আর কেউ খায় না। অন্যান্য দিন মানজিত শুধু সব পরিস্কার করে রেডি রাখে, আমি গিয়ে বানিয়ে নেই। আজকে হয়ত জানে সকাল সকাল উঠেই আমার প্রয়োজন পরবে, তাই আসার আগেই ড্রিপ চালু করে দিয়েছে। খুবই অমায়িক হাসি খুশী ছেলে, আজকেই সে চলে যাবে। কফি খেতে খতে চারিদিকের পরিস্থিতি বুঝে নিলাম, হিসেব করে দেখলাম দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাব, স্রোতের কারণে গতি অনেক বেড়ে গেছে। কোস্টাল রেডিও স্টেশনকে ডেকে আমাদের আগমন বার্তা জানাতেই সে একটি পজিশন দিয়ে দিল, ফ্ল্যামিংগো লাইট হাউস থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে তিন মাইল দূরে তোমরা নোঙর কর, নোঙর করে আমাদের রিপোর্ট করবে। সেকেন্ড অফিসার চ্যাং পজিশন চার্টে বসিয়ে দিল, সে অনুযায়ী দেখালাম আমার চার দিকে আরও চারটি জাহাজ আছে। নোঙর আরও ১৬ কিমি দূরে, র‍্যাডারে তাদের অবস্থান দেখে দূরত্ব হিসেব করে নিচ্ছি। এসব ব্যস্ত বন্দরে সবচেয়ে বড় সমস্যা ভিড়, বড় জাহাজের পক্ষে সুবিধা মত জায়গা পাওয়া কঠিন, যে ভাবে মোটা লোকদের সুবিধা জনক সিট পেতে অসুবিধা হয়। যে পজিশন দিয়েছে, তার চেয়ে একটু সরিয়ে নিজেদের নোঙরের জায়গা সিলেক্ট করলাম, যাতে সব জাহাজ থেকে সমান দূরত্ব থাকা যায়। দশ কিলো মিটার যখন বাকি, তখন মানজিত কে বললাম স্টিয়ারিং হাতে নেবার জন্য। হনলুলু থেকে রওনা হবার পর ২১ দিন পর এই প্রথম অটো পাইলট থেকে ম্যানুয়াল স্টিয়ারিং শুরু হল। এর মাঝে শুধু রুটিন মাফিক চেক করা হয় ম্যানুয়াল স্টিয়ারিং ঠিক আছে কিনা, বাস্তবিকে চালানো হয় না। এতদিন পর্যন্ত মানজিতের ভূমিকা ছিল শুধু লুক-আউট, এখন সে হেলমসম্যান বা স্টিয়ারিং ম্যান। মাইল দুয়েক আগে সারেং সামনে চলে গেল নোঙর প্রস্তুত করার জন্য, চীফ অফিসার আসল আমার সাথে দেখা করার জন্য। ও আসলে এডিশনাল মাস্টার, চীফ অফিসারের কাজ করছে, পদোন্নতির অপেক্ষায় আছে। এরা সাধারণত জানতে চায়, বুঝতে চায়, কিভাবে ক্যাপ্টেন নোঙরের জন্য যাচ্ছে। কং খুবই বিনয়ী, সে দূরে দাড়িয়ে শুধু আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। আমি কাছে ডেকে নিজেই বুঝানো শুরু করলাম, আমার পরিকল্পনা কি, কিভাবে গাড়ি পার্কিং করব, কোন দিক দিয়ে গেলে স্রোত একদম সামনের দিকে থাকবে, কখন ইঞ্জিন বন্ধ করব, কখন জাহাজ ঘুরানো শুরু করব, সব কিছু বুঝাতে লাগলাম, এবং সে মনযোগের সাথে সব গিলতে লাগল। এর মধ্যে একবার বলল, স্যার আমি সামনে যাই তাহলে। বললাম আমি সময়মত পাঠাব তোমাকে, আর এটা ব্যস্ত নোঙর, তাই তোমাকে পাঠাচ্ছি, খোলা সাগর হলে সেকেন্ড অফিসারকে পাঠিয়ে নোঙর করা পর্যন্ত তোমাকেই সাথে রাখতাম। সে কথা কম বলে, কিন্তু চোখের দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কার্পণ্য করল না। জাহাজ ঘুরিয়ে স্রোত বরাবর করার পর কং কে পাঠিয়ে দিলাম, বাকি পথটা আমি আগাবো একদম শম্বুক গতিতে, জায়গা মত গিয়ে প্রায় স্থির করে নোঙর ফেলে দেব।

এতক্ষনে সুর্য উঠি উঠি করছে, চোখে পরছে বালবোয়া, শহর, কিন্তু ল্যন্ড হো বলে কেউ চিৎকার করছে না। ৬:৪০ এর মধ্যেই আমাদের নোঙর করা হয়ে গেল, ফ্ল্যামিঙ্গো সিগনাল স্টেশন কে জানিয়ে দিলাম, কোম্পানি এবং এজেন্ট কে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিলাম। সকাল ন’টায় ক্রুরা আসবে, একই বোটে অন্যরা চলে যাবে। এর পর ১১টা বাজে আসবে লয়েডস সার্ভেয়র। সুতরাং অপেক্ষার পালা, এবং এমন একটা গ্যাপ, যেখানে ঘুমানোও যাবে না, আবার জেগে থাকতেও বিরক্তি লাগছে। কিন্তু আসি আসি বলেও দুপুর পর্যন্ত তারা এলোনা, সুতরাং লাঞ্চ করে নিলাম। এদিকে বাড়ি যাবার অপেক্ষারত সবাই সকাল সাড়ে আটটা থেকেই বরযাত্রীর পোশাক পরে বসে আছে, ফলে জাহাজে কাজের লোক হয়ে গেছে অর্ধেক। ক্রুরা আসার আগেই চলে এলো পানামা ক্যানেল ইন্সপেক্টর, সে জাহাজের সব কিছু পরীক্ষা করে দেখবে। সে আসার সাথে সাথেই চলে এলো লয়েডস সার্ভেয়ার এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান। বিদায়ী ক্রুদের পিসিআর টেস্ট করবে, কিন্তু জয়েনিং ক্রুদের খবর নেই। ক্যানেল ইন্সপেক্টরের কাজ জরুরী, কারণ তারা পোর্ট অথরিটি, তাই লয়েডস সাররেভেয়র কে বসিয়ে রেখে আগে অথরিটির কাজ শেষ করলাম, এক ঘণ্টা পর লিখিত রিপোর্ট দিল যে জাহাজ কে সে যোগ্য ঘোষণা করছে। এর পর লয়েডস সার্ভেয়র, যার সাথে থাকা উচিৎ চীফ ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এবং চীফ অফিসারের। কিন্তু চীফ ইঞ্জিনরুমের খুবই জরুরী কাজে ব্যস্ত, আর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি যাবার পোষাকে। সুতরাং আমি আর চীফ অফিসার মিলে লয়েডস সার্ভেয়রের সাথে যোগ দিলাম। লয়েডস সার্ভেয়র এসেছে আমাদের জাহাজে সম্প্রতি স্থাপিত ট্র্যাকিং সিস্টেম পরীক্ষা করার জন্য, সাথে আমাদের ক্রেনের বাৎসরিক পরীক্ষাও করে ফেলবে। আমরা বাসা বাড়িতে একটি এসি লাগানর জন্য একটি মিস্ত্রি নিয়ে আসলাম, সে দেয়ালে ফুটা করে বাইরে পাইপ নিয়ে কাজ শেষ করল, জাহাজের ব্যাপারে তা সম্ভব না। আগে অনুমতি নিতে হবে ক্লাস মানে লয়েডস এর মত সংস্থার কাছ থেকে, যাদের কাছে আমাদের জাহাজ নিবন্ধিত। তারা আগে ইন্সটলেশন প্ল্যান দেখে অনুমতি দেবে, ইন্সটলেশনের পরে তাদের একজন সারভেয়র এসে পরীক্ষা করবে, যেখানে ফুটা করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে গ্যাস-টাইট করা হয়েছে কিনা, যেসব জিনিষপত্র লাগানো হয়েছে তা অন্য ইকুইপমেন্ট এর সাথে ঝামেলা করছে কিনা, যেরকম তার ব্যাবহার করা হয়েছে তা অনুমোদিত কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব দেখতে দেখতে সে কয়েকটি ত্রুটি বের করল, যেসব ক্যাবল টাই ব্যাবহার করা হয়েছে, তা অনুমোদিত না, প্লাস্টিকের বদলে ষ্টীলের লাগাতে হবে, এক জায়গায় আর্থিং করা হয় নি, সেটা করতে হবে, তবে সেগুলো করে ছবি পাঠালেই চলবে। এর মাঝে আরেক ঘটনা ঘটে গেছে, অফিস থেকে জরুরী মেসেজ এসেছে, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কে যাতে ছাড়া না হয়, তার রিলিভার হিসেবে যে এসেছে, তাকে হয়ত অন্য কোথাও পাঠানো হতে পারে, সুতরাং সে আপাতত জাহাজেই থাকবে। বেচারা কিছুক্ষণ আগে একদম নূতন জিনস আর চকচকে টি-শার্ট পরে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেছে, তাকেই আবার ডাকলাম বয়লার স্যুট পরে আমাদের সাথে যোগ দেবার জন্য, কারণ পুরো ইন্সটলেশনে সে ই ছিল।

সব ইন্সপেকশন শেষে সার্ভেয়র বেশ চিন্তিত হয়ে জানতে চাইল, জিনিশটা আসলে কি? এসব কি কাজে ব্যবহৃত হয়? পরীক্ষক যখন জিগ্যেস করে এসব প্রশ্ন কীজন্য এসেছে তখন পরীক্ষার্থীর যা অবস্থা হয়, আমারও সে অবস্থা। সাথে সাথে বলল, দেখো আমি সার্ভেয়র মাত্র, আমি শুধু দেখব এসব ইকুইপমেন্ট আমাদের ষ্ট্যাণ্ডার্ড অনুযায়ী লাগানো হয়েছে কিনা, কি কাজ করে আসলে আমার ধারনা নেই, আগে কখনও দেখিনি। আসলে আমাদের জাহাজে লাগানো ট্র্যাকিং সিস্টেমটি ইন্ডাস্ট্রিতেই সম্পূর্ণ নূতন একটি প্রযুক্তি, এপর্যন্ত কয়টি জাহাজে লাগানো হয়েছে তাও জানিনা। এ জাহাজে যোগ দেবারে আগে কোনদিন নামও শুনিনি। পুরো জাহজ ব্যাপি প্রায় ছয় ডজন সেন্সর রয়েছে, জাহাজের সব নাবিক একটি স্মার্ট ওয়াচ পরে হাঁটবে, জাহাজের তিন জায়গায় অবস্থিত মনিটরে দেখা যাবে কে কোথায় আছে, শুধু তাই নয়, কোম্পানির অফিসে বসেও জানবে কে কখন হাঁটছে, কে ইঞ্জিনরুমে গেছে বা কে সামনে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, আমরা ঘুমাচ্ছি না জেগে আছি, আমাদের হার্ট বিট কত, বডি টেম্পারেচার কত, ২০,০০০ কিলোমিটার দুরের অফিসে বসেও দেখতে পারবে। তাই সারভেয়রও চোখে দেখেনি, আমিও দেখিনি।

সার্ভেয়রের সাথে ইন্সপেকশনে থাকার সময়েই নূতন ক্রুরা চলে এসেছে, পুরনোরা চলে গেছে, আর ঘড়িতে বাজে চারটা। এর পর সার্ভেয়র কে বিদায় দিয়ে কিছুটা ভারমুক্ত, কিন্তু কমার্শিয়াল বিভাগ থেকে নাকি আমাকে খোজা হচ্ছে, জরুরী ফোন করতে হবে। সুতরাং রাতে মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমানো আমি আর বিশ্রাম নিতে পারলাম না, সোজা ব্রিজে গিয়ে ফোন করলাম হিউস্টন। জাহাজের একটি কার্গো পাওয়া গেছে, সে জন্য জরুরী ভাবে কিছু ইনফরমেশন দরকার, আর সেজন্য অলরেডি দুটা মেইল আর দুবার ফোন এসে গেছে। সমস্যাটি তেমন জটিল না, তবে অনেক কিছুর মাপজোক করে উত্তর দিতে হবে। এসব কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা সাতটা। ডিনার করার পর নূতন অফিসারদের সাথে মীটিং। তাদের ব্রিজ ওয়াচ সম্বন্ধে আমার নিজস্ব নিয়মাবলী এবং চাহিদা বুঝিয়ে দিলাম, বাকিটা লিউ বুঝিয়ে দিয়েছে। কভিডের কারণে বিদায়ী আর নূতন আসা ক্রুদের মধ্যে ইন্টারেকশন যতটা পারা যায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সারাদিনের মেইল সব বাকি রয়েছে, সেখান থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তার উত্তর অধিকাংশই এডমিন এসিস্ট্যান্ট প্রস্তুত করে রেখেছে, সেগুলু একেক করে দেখে সেন্ড করে দিনের সমাপ্তি হল রাত এগারোটায়, যেটা শুরু হয়েছিল ভোর চারটায়। সুতরাং সোজা বিছানায় এবং শুভরাত্রি।


Abdullah Al Mahmud (21N), planetbd@gmail.com

Share