আবদুল্লাহিল মারুফ: একজন সেলিব্রিটি মেরিনার

আবদুল্লাহিল মারুফ: একজন সেলিব্রিটি মেরিনার

মারুফের জন্ম রাজশাহীর মতিহার থানার মৌলভী বুধপাড়ায়। নাবিক হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার। ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল (আইসিই) বিভাগে। কিন্তু এক বছরের মাথায় সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। হয়ে উঠেন নাবিক। হংকংভিত্তিক একটি অয়েল ট্যাংকারে ‘সেকেন্ড অফিসার’ হিসেবে কর্মরত মারুফ। সমুদ্রের রোমাঞ্চকর গল্প বলেন মারুফ, শোনান গান। অসংখ্য মেরিনারদের কাছে সাধারণ মানুষের অগণিত জিজ্ঞাসার চমৎকার সব উত্তর দেয়া ভিডিওর জন্য অনেকেরই সাধুবাদ পেয়েছেন।

মারুফ পেশায় নাবিক। সমুদ্রগামী জাহাজে বসে অবসরে তিনি ভ্লগ করেন। ভ্লগিংয়ের মাধ্যমে এই তরুণ তুলে ধরেন সমুদ্র, সমুদ্রযাত্রা, সমুদ্রচারী জীবনের নানা দিক। দারুণ গানও করেন মারুফ। জাহাজে বসে তাঁর করা গানে মুগ্ধ হন নেটিজেনরা। তাঁর গান, ভ্লগ লাখো দর্শক দেখেন। তাঁরা তাঁকে প্রশংসায় ভাসান। গভীর সমুদ্রে ভাসে নাবিক মারুফের গান।

২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স করেন তিনি। এক বছরের কোর্স শেষে তৃতীয় অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন দ্বিতীয় অফিসার। এখন তাঁর মূল কাজ জাহাজের যাত্রাপথের পরিকল্পনা, যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ, নেভিগেশনাল ওয়াচ, কার্গো ওয়াচ।
তাঁরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকে সমুদ্রযাত্রার নানা গল্প জানার আগ্রহ দেখান। এই ঘটনার পরই সমুদ্রযাত্রা নিয়ে ভ্লগ করার ভাবনা মাথায় আসে মারুফের। তিনি বলেন, ‘আমার ভ্লগিংয়ের উদ্দেশ্য হলো, সমুদ্রযাত্রার অজানা দিকগুলো বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুব সাধারণভাবে তুলে ধরা।’

‘সেইল উইথ মারুফ’ নামের ফেসবুক পেজে এখন পর্যন্ত ৪০টির মতো ভিডিও আপলোড করেছেন এই নাবিক। এসব ভিডিওতে সমুদ্র, ঝড়ঝঞ্ঝা, ঢেউ, সমুদ্রযাত্রা, বন্দর, জাহাজের অভ্যন্তরীণ নানা কারিগরি বিষয়, জাহাজ পরিচালনা, নাবিকদের কাজ, খাওয়াদাওয়াসহ হরেক কৌতূহলোদ্দীপক বিবরণ রয়েছে। মারুফ বলেন, ‘প্রতিটি ভিডিওতেই আমি নতুন কিছু দেখানোর চেষ্টা করি।’

মারুফের প্রতিটি ভিডিওতে লাখো ভিউ হয়। এক ভিডিওতে সর্বোচ্চ ভিউ এসেছিল ৪৭ লাখ। মারুফ বলেন, ‘আমার ভিডিওর মাধ্যমে দেশে বসেই মানুষ সমুদ্রের জীবনযাত্রা দেখতে পান, তাঁর রোমাঞ্চিত হন, এই বিষয় আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। আর আমার অবসর সময়টাও এসব নিয়ে বেশ ভালোই কেটে যায়।’
অবসরে আরেকটা কাজ করেন মারুফ। তিনি জাহাজে বসে হাতে তুলে নেন ইউকেলেলে। দরদভরা কণ্ঠে তোলেন সুর। গেয়ে ওঠেন, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘আহারে জীবন’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব’, ‘দিন যায়, কথা থাকে’, ‘ওকি একবার আসিয়া সোনার চান্দ মোর যাও দেখিয়া রে’, ‘কি নামে ডেকে বলব তোমাকে’, ‘প্রেমে পড়া বারণ’, ‘যদি হিমালয় হয়ে’ এমন সব গান।

হিন্দি গানেও সমান পারদর্শী তিনি। মারুফ অধিকাংশ গান জাহাজের ব্রিজে বসে করেন। সেখান থেকে সহজেই সমুদ্র দেখা যায়। তাঁর গান সমুদ্রের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ‘মারুফ’ নামের ফেসবুক পেজে গানগুলো প্রকাশ করেন এই নাবিক। তাঁর গানের ভিডিওতে লাখ লাখ ভিউ হয়।

ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভীষণ ভালোবাসা মারুফের। তবে গানের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তাঁর নেই। শুনে শুনে গান রপ্ত করেছেন তিনি। মারুফ বলেন, পরিবার থেকে বহু দূরে, সমুদ্রচারী জীবনের নানা বাঁকে গানই আমাকে উজ্জীবিত রাখে।’

Facebook Page: Sail with MARUF
YouTube Chanel: MARUF

Share