অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশি নাবিকেরা
মাসুদ মিলাদ, চট্টগ্রাম | ০১ জুলাই, ২০১৪ | প্রথম আলো
অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশি নাবিকেরা
কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতার কারণে ব্রিটিশ আমলে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল এই অঞ্চলের নাবিকদের।ভারত ভাগের আগে এই অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার নাবিক এই বিদেশি জাহাজে নিয়োজিত ছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে কমেছে সংখ্যা। এখন প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি নাবিক আছেন। আর এই বাংলাদেশি নাবিকসহ সমুদ্রগামী জাহাজের কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ এখন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দুলছে।
আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী এ দেশের সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে না পারাই এ শঙ্কার কারণ। আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা (আইএমও) থেকে দুই দফা চিঠি দেওয়ার পরও বাংলাদেশ এটি নিশ্চিত করতে পারেনি।
নিয়মানুযায়ী, এ দেশের নাবিক প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নিশ্চিত করা না হলে নিরীক্ষা করবে আইএমও। নিরীক্ষায় বিচ্যুতি ধরা পড়লে সংস্থাটি এ দেশের প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা পদ্ধতিকে স্বীকৃতি না দেওয়াসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
সোসাইটি অব মাস্টার মেরিনার্সের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী মনে করেন, ‘আইএমও যদি বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ ও সনদের স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে সাদা তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এর অর্থ, বাংলাদেশি সনদের কোনো মূল্য থাকবে না। বাংলাদেশি নাবিককে কোনো জাহাজে নিয়োগ দিতে চাইবে না কোনো কোম্পানি।’
আন্তর্জাতিক নিয়ম: নাবিকদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ, সনদায়ন ও সতর্ক দৃষ্টি নিবন্ধকরণবিষয়ক আইএমওর আন্তর্জাতিক কনভেনশন (এসটিসিডব্লিউ) রয়েছে। বাংলাদেশ এই কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে। এই কনভেনশন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো নাবিক প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা পরিচালনা এবং সনদ প্রদান করে থাকে। তবে এসব কাজ কনভেনশন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর মূল্যায়ন করে নির্দিষ্ট সময় পর আইএমওর কাছে তা পাঠিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ কী করেছে: সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে এসব বিষয়ে অনেক দিন নজর দেওয়া হয়নি। বরং অধিদপ্তর থেকে জাহাজের নাবিক-কর্মকর্তাদের পরীক্ষা পরিচালনা ও সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। যেমন, আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সনদকে স্বীকৃতি দিতে পারে। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে বেলিজের ৩৫টি ভুয়া সনদের স্বীকৃতি প্রদান করেন একজন পরীক্ষক। ভুয়া সনদধারী এসব কর্মকর্তা জাহাজে নিয়োগ পাওয়ার পর বিষয়টি গত বছর ফাঁস হয়। অভিযোগও যায় আইএমওর কাছে।
এদিকে আইএমওর একটি প্যানেল বাংলাদেশ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে নানা ত্রুটি চিহ্নিত করে। যেমন, সমুদ্র পরিবহন অধিপ্তর থেকে নাবিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে কখন পরিদর্শন করা হয়েছে বা পরিদর্শনে পাওয়া ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে কি না বা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এসব কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আবার ২০০৯ সালের প্রতিবেদন দাখিল করা হয় চার বছর পরে, ২০১৩ সালে।
এরপর গত বছরের ২৮ জুন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায় আইএমও। ওই চিঠিতে নতুন করে একটি স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
আইএমওর চিঠির পর নতুন করে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায় সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। দ্বিতীয় দফায় পাঠানো এই প্রতিবেদনও আমলে নেয়নি আইএমও।বরং সংস্থাটি গত ১ এপ্রিল সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমানের কাছে নাবিক প্রশিক্ষণ ও সনদ-সংক্রান্ত অন্তত ৪৫টি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। আইএমওর নৌ নিরাপত্তা বিভাগের নৌ প্রশিক্ষণ এবং মানবসম্পদ শাখার প্রধান এম ফুয়াজউদ্দীনের (শ্রীলঙ্কার নাগরিক) সই করা চিঠিতে যত দ্রুত সম্ভব আবারও প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলা হয়।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গত সোমবার জাকিউর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমওর চাহিদা অনুযায়ী নৌ প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা পদ্ধতি ও সনদ প্রদানের বিষয়গুলো মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এটি পাঠানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, আইএমওর নিরীক্ষার মুখে পড়লেও সাদা তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা কম। কারণ, এখন আমরা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো নিয়মিত তদারক করতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আলাদা দুটি কমিটি গঠন করেছি। অন্যান্য বিষয়েও তদারকি জোরদার করা হয়েছে।
এখন কী হবে: তবে ফুয়াজউদ্দীনের চিঠিতে বাংলাদেশের নাবিক প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের বিষয়গুলোতে অসংগতি তুলে ধরে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। যেমন, কনভেনশন অনুযায়ী তৃতীয় প্রকৌশলীসহ বেশ কয়েকটি পদ বলে কিছু না থাকার পরও অনুরূপ পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কনভেনশন অনুসরণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। এসটিসিডব্লিউ কোডের ম্যানিলা সংশোধনী ২০১০ কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা-ও জানাতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, এসটিসিডব্লিউ কনভেনশনের ২০১০ সালের ম্যানিলা সংশোধনীতে নাবিক প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। এই সংশোধনী অনুযায়ী জাহাজের কর্মকর্তাদের যোগ্যতার সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতারণা রোধে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষকদের তদারকির কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রশিক্ষণে ইলেকট্রনিক চার্ট এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা (ইসিডিআইএস) জাতীয় প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ যুক্ত করা, নৌপরিবেশ সচতেনতা প্রশিক্ষণ, জলদস্যুরা আক্রমণ করলে তা মোকাবিলা করার মতো দক্ষ নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ইত্যাদি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি: বর্তমানে সরকারি মেরিন একাডেমি এবং অনুমোদিত বেসরকারি ১৮টি ইনস্টিটিউট থেকে ক্যাডেট কোর্স করানো হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজের কর্মকর্তাদের সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি বা যোগ্যতার সনদ প্রদানের জন্য পরীক্ষা পরিচালনা করছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।
জাহাজে চাকরি-সংক্রান্ত বিষয়ে তদারককারি সংস্থা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে তালিকাভুক্ত সাড়ে ১০ হাজার কর্মক্ষম সাধারণ নাবিক ও কর্মকর্তার মধ্যে নিয়মিত জাহাজে চাকরি করছেন পাঁচ থেকে ছয় হাজার জন। যেমন, গত বছর জাহাজে কর্মরত ছিলেন পাঁচ হাজার ২৫৭ জন সাধারণ নাবিক ও কর্মকর্তা। এই সংস্থার প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, নাবিকদের মাধ্যমে গত বছর প্রায় এক হাজার ২৫১ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে।
সাধারণত নয় মাস থেকে এক বছরের চুক্তিতে কোনো জাহাজে নাবিকদের নিয়োগ করা হয়। এরপর পরবর্তী জাহাজে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে হয় ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত। অনেক নিবন্ধিত নাবিক সনদ থাকার পরও জাহাজে চাকরি না করে ব্যবসা ও স্থলভাগে চাকরি করছেন। এ কারণে কর্মক্ষম সব কর্মকর্তা ও নাবিক সব সময় কর্মরত থাকেন না।
জাহাজের আকার ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে নাবিক প্রশিক্ষণের প্রসার বাড়েনি। এ কারণে নাবিকের সংখ্যা কমছে।
এক নজরে
ব্রিটিশ আমলে ৫০,০০০ নাবিক কর্মরত থাকলেও এই সংখ্যা পরবর্তী সময়ে কমেছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে নাবিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০,৩২৮ জনে। ২০০৯ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪০৪ জনে; যা ২০১৩ সালে খানিকটা বেড়ে ১১,১৬০ জন হয়। নিবন্ধিত নাবিকদের মধ্যে ২০০৯ সালে কর্মক্ষম ছিলেন ৮,৫৫৪ জন; যা ২০১৩ সালে হয় ১০,৬৪৭ জন
——————–
http://m.prothom-alo.com/economy/article/255739/
Few comments extracted from Mariner’s Forum “bdmariners@googlegroups.com”.
============================
The Department of Shipping must be allowed to work on its own without the interference of the ministry.
Fazlur R. Chowdhury (1st batch)
London
——————-
The problem remains within our professional people serving in the government sector. There should be a forum where we can raise the issues. Also new post to be created and as well as old vacant post should be filled with competent and honest person.
Regards
Capt Sabbir Mahmood(27th Batch)
Senior Nautical Instructor,Bangladesh Marine Academy
————————
What has been said is the correct reflection of current picture. I fully agree with the comments made by IMO’s Fuazuddin.It is indeed a sad state of affair. There were responsible officers at the helm when approvals were given to influential entities without having evaluating the implications. I voiced my deep concern during my talk & sessions in Marine Academy as well as at NI & one other forum; during my recent trip to Bangladesh. People responsible seem to shy away from such topic.
I firmly believe that more must be done to get to the bottom of this and address the issue at correct level.
Kind regards.
Forkanul Quader (6th Batch)
———————-
Sea farers in Bangladesh- an extract from “Prothom Alo” http://www.prothom-alo.com/economy/article/255739/
Dilwar Ali
6th batch Engr/ Melbourne
———————–